মঞ্চে সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া, সিদ্ধার্থনাথ সিংহ, অমিত শাহ, রাহুল সিংহ এবং শমীক ভট্টাচার্য। ছবি: দেবাশিস রায়
সারদা কেলেঙ্কারির সঙ্গে খাগড়াগড় বিস্ফোরণকে জুড়ে দিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। তাঁর বক্তব্য, সারদা এবং খাগড়াগড় আগামী দিনে এই দুই কাণ্ডের তদন্ত এক জায়গায় মিলবে। রবিবার ধর্মতলায় বিজেপির ‘উত্থান দিবসে’র সভায় অমিত শাহ অভিযোগ করেন, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের নেপথ্যে ছিলেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-নেত্রীদের একাংশ এবং ওই ঘটনায় সারদার টাকা কাজে লাগানো হয়েছিল। অমিতের কথায়, “সারদার টাকা বর্ধমান বিস্ফোরণে গিয়েছে। এনআইএ এবং সিবিআই তদন্তে সমস্ত তথ্য আসতে শুরু করেছে। দ্রুত দুই সংস্থার তদন্ত এক জায়গায় গিয়ে পৌঁছবে।” এই প্রসঙ্গেই তাঁর কটাক্ষ, এ সব নিয়ে যাবতীয় তথ্য প্রকাশিত হলে ‘দিদি’ (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) মুখ লুকোনোর জায়গা পাবেন না!
খাগড়াগড়-কাণ্ডের পর থেকেই তৃণমূলের জামাত যোগ নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি। বিশেষ করে বাংলাদেশ সরকার এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি তুলে দেওয়ার পরে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাও খাগড়াগড়ের পিছনে রাজনৈতিক যোগাযোগ এবং অর্থের জোগান পেতে তৎপর হয়ে উঠেছে। খাগড়াগড়-কাণ্ডের তদন্তে নেমে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা বেশ কয়েক জন সন্দেহভাজন তৃণমূল নেতার নামের তালিকা তৈরি করেছেন। তার মধ্যে এক জন ওই বাড়িতেই নিয়মিত অফিস খুলে বসেছিল। তার সূত্র ধরেই এ দিন বিজেপি সভাপতি নানা ইঙ্গিত দেন। তাঁর প্রশ্ন, বর্ধমান বোমা বিস্ফোরণে যে শাকিল আহমেদ মারা গিয়েছে, সে মেটিয়াব্রুজ বিস্ফোরণ কাণ্ডেও জড়িত ছিল। কেন তাকে ধরা হয়নি? হাসান চৌধুরী নামে যে ব্যক্তির বাড়িতে বোমার কারখানা খোলা হয়েছিল, তার রাজনৈতিক পরিচয়ও জানতে চান তিনি। তার পরেই অমিত জানান, বর্ধমান বিস্ফোরণের সঙ্গে তৃণমূলের যোগসূত্র মিলেছে। এনআইএ এখন এ সব নিয়েই তদন্ত করছে।
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির মুখে এমন গুরুতর অভিযোগ শুনে প্রত্যাশা মতোই ময়দানে নেমেছে শাসক তৃণমূল। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “এনআইএ-সিবিআই যে বিজেপির শাখা সংগঠনে পরিণত হয়েছে, তা এই বক্তব্য থেকেই প্রমাণিত! অমিত শাহ ভারত সরকারের কেউ নন, তা হলে কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত কোন পথে যাচ্ছে খবর পান কী ভাবে?” বিজেপি সভাপতিকে রীতিমতো কটাক্ষ করে পার্থবাবু বলেন, “এ সব কথা মাঠে-ঘাটে বলে বাজার গরম করা যায়। কিন্তু বাস্তবে প্রমাণ করা কঠিন। বিজেপি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নিয়ে এই সমস্ত কাজ করছে।”
পার্থবাবুর পাশে বসে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের মুখপাত্র সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “সিবিআই এবং এনআইএ এখন বিজেপির রাজনৈতিক সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে।” অমিত শাহকে ‘গুণ্ডার সর্দার’ বলে অভিহিত করে সুব্রতবাবু বলেন, “গুণ্ডামির জন্য অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদীকে ধরেছিল সিবিআই! গুন্ডার সর্দাররা যদি সিবিআই দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করে, তা হলে আমরাও প্রতিবাদ করব।”
সারদা মালিক সুদীপ্ত সেনকে গ্রেফতার করা থেকে শুরু করে ৫ লক্ষ প্রতারিতদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা মমতা-সরকার করেছে বলে উল্লেখ করে সুব্রতবাবু এ দিন পাল্টা অভিযোগ করেন, “সহারা কর্ণধার সুব্রত রায়ের বাড়ি তল্লাশি করে সিবিআই একটি লাল ডায়েরি উদ্ধার করেছে। সেই ডায়েরিতে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহর নাম আছে বলে শোনা যাচ্ছে। ওই দু’জনের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না?”
সুব্রতবাবুর অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ যদিও বলেছেন, “একেবারে আষাঢ়ে গল্প ফাঁদছেন ওঁরা!”
সারদা থেকে শুরু করে খাগড়াগড় কাণ্ডের সঙ্গে শাসক দলের নাম জড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী দিনে বিজেপির রণকৌশল কী হবে, তা-ও রবিবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন সিদ্ধার্থনাথ সিংহ।
এ দিনের সভায় তিনি বলেন, “তৃণমূল মানে আগে ছিল মা-মাটি-মানুষ। সারদা তদন্ত যে পথে এগোচ্ছে, তাতে এখন তৃণমূলের তিন এম হয়েছে মদন-মুকুল-মমতা! আর ২০১৪ সালে বিএমবি, মানে ভাগ মদন ভাগ! ২০১৫ সালে হবে ভাগ মুকুল ভাগ! আর ২০১৬ সালে শেষ হবে ভাগ মমতা ভাগ!”
এ দিন ধর্মতলায় অমিত শাহের সভার শেষে আচমকাই বিজেপি-র এক দল সমর্থক উত্তেজিত ভাবে সাংবাদিকদের ঘিরে ধরেন। হলুদ রংয়ের একটা বই দেখিয়ে তাঁরা অভিযোগ করতে থাকেন, সমাবেশস্থলে দু’জন ওই বই বিক্রি করছিলেন। বইটির প্রচ্ছদে লেখা রয়েছে ‘ভারতকে করব ইসলামিক রাষ্ট্র, আল কায়দা’। বিজেপি সমর্থকদের দাবি, তাঁদের তাড়া খেয়ে ওই বই বিক্রেতাদের মধ্যে এক জন পালিয়ে গিয়েছেন। অন্য জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।