সন্দীপ ঘোষ। —ফাইল চিত্র
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ অস্টিয়োআর্থ্রাইটিস রোগে আক্রান্ত বলে আদালতে জানিয়ে তাঁর সুচিকিৎসার বন্দোবস্তের আর্জি জানানো হয়েছে। সোমবার সন্দীপের আইনজীবী বিচারকের কাছে এই আবেদন জানান। সন্দীপ এখন প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে রয়েছেন। তিনি নিজেও এক জন অর্থোপেডিক সার্জন ছিলেন।
আদালতে উপস্থিত আইনজীবীদের একাংশের কথায়, তিনি তো নিজেই ওই রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছিলেন। নিজেই নিজের রোগের চিকিৎসা করতে পারেন। জেল হাসপাতালে চিকিৎসকদের পরামর্শ দিয়ে তাঁর নিজের চিকিৎসা ব্যবস্থা করা উচিত। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারক বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে বলে আমি শুনেছি।’’ সোমবার আলিপুর সিবিআই বিশেষ আদালতে আর জি করের আর্থিক দুর্নীতির মামলায় অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ, তার ঘনিষ্ঠ দুই ব্যবসায়ী বিপ্লব সিংহ ও সুমন হাজরা, দেহরক্ষী আশরফ আলি খান এবং জুনিয়র চিকিৎসক আশিস পাণ্ডেকে আদালতে পেশ করা হয়। তবে আশিস ছাড়া বাকি চারজন ভার্চুয়াল মাধ্যমে শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন।
বিপ্লব সিংহের জামিনের আবেদন করে তাঁর আইনজীবী বলেন, ‘‘বিপ্লব সাধারণ ব্যবসায়ী। তিনি কোনও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন। সন্দীপ এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক ছিল না। এখনও বিভিন্ন কাজের বরাত অনুযায়ী আর জি করের কাছ থেকে তাঁর সাত লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে। সন্দীপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকলে ওই টাকা বকেয়া থাকত না। ব্যবসার সব বৈধ নথিপত্র রয়েছে। দুর্নীতির সঙ্গে তিনি কোনও ভাবে জড়িত নয়।’’
সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, ‘‘বিপ্লব সিংহের সংস্থা কোনও অনলাইন টেন্ডারে যোগ দিত না। বিনা টেন্ডারে সব কাজ করত। বিপুল পরিমাণে আর্থিক দুর্নীতির হদিস পাওয়া গিয়েছে। শুধু মাত্র আর জি কর নয়। আরও কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে বেআইনি ভাবে নানা কাজের বরাত নিয়েছেন। অত্যন্ত ধূর্ত প্রকৃতির মানুষ। জামিন হলে তাঁর পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’’ বিচারক বিপ্লব সিংহের জামিনের আবেদন খারিজ করেন। ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত তাঁর জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
আশিস পাণ্ডের আইনজীবী আনন্দ গঙ্গোপাধ্যায় এবং সুমন হাজরার আইনজীবীদের তরফে এ দিন জামিনের আবেদন করা হয়। বিচারক ১২ নভেম্বর ওই আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেছেন। আশরফ আলির আইনজীবী এ দিন বলেন, ‘‘আশরফের পারিবারিক সদস্যদের একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ওই ব্যাঙ্কে কয়েকটি সংস্থার ভাড়া জমা হয়। ওই আমানত থেকে তাঁদের সাংসারিক খরচ চালানো হয়। এর জন্য চেকে আশরফের সইয়ের প্রয়োজন রয়েছে।’’ এ দিন বিচারকের কাছে একটি ‘ব্ল্যাঙ্ক চেকে’ আশরফের স্বাক্ষরের জন্য অনুমতির আবেদন করা হয়। বিচারক বলেন, ‘‘কোনও ‘ব্ল্যাঙ্ক চেকে’ স্বাক্ষরের অনুমতি দেওয়া যায় না। পরবর্তী শুনানির দিন আমানতের কত টাকা রয়েছে এবং কত টাকার প্রয়োজন, সমস্ত বিশদে জানাতে হবে।’’ এর পরে সিবিআইয়ের বক্তব্য শোনার পর নির্দেশ দেওয়া হবে। এ দিন বিচারক অভিযুক্তদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বলে আদালত সূত্রে খবর।