RG Kar Medical College and Hospital Incident

নথি বদলে ফেলা হয়েছিল টালা থানায়! আরজি কর মামলার শুনানিতে সিবিআই দাবি করল আদালতে

আদালতে সিবিআই দাবি করেছে, টালা থানায় এই মামলা সংক্রান্ত কিছু ভুয়ো নথি বানিয়ে সেগুলি অদল-বদল করা হয়েছিল। সন্দীপ ও অভিজিৎকে জেরার সময় এই তথ্য তাঁদের হাতে উঠে এসেছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:১১
Share:

আরজি কর মামলায় ধৃত অভিজিৎ মণ্ডল ও সন্দীপ ঘোষ। —ফাইল চিত্র।

আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে বুধবার হাজির করানো হয় শিয়ালদহ আদালতে। আরজি করের ধর্ষণ ও খুনের মামলায় তাঁদের হাজির করানো হয় আদালতে। তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা ও এফআইআর দেরিতে রুজু করার অভিযোগ রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। বুধবার আদালতে সিবিআই দাবি করেছে, টালা থানায় এই মামলা সংক্রান্ত কিছু ভুয়ো নথি বানিয়ে সেগুলি অদল-বদল করা হয়েছিল। দুই অভিযুক্তকে (সন্দীপ ও অভিজিৎ) হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় এই তথ্য তাঁদের হাতে উঠে এসেছে বলে আদালতে দাবি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। টালা থানার সিসি ফুটেজ-সহ ডিভিআর ও হার্ড ডিস্কও ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সেই তথ্যও দিন দুয়েকের মধ্যে চলে আসবে বলে জানিয়েছে সিবিআই।

Advertisement

দু’জনের নারকো ও পলিগ্রাফ পরীক্ষা করানো হবে কি না, তা নিয়ে শুনানি হওয়ার কথা ছিল বুধবার। কিন্তু সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির কলকাতা অফিসের বিশেষজ্ঞ ভিন্‌রাজ্যে একটি মামলা সংক্রান্ত কাজে গিয়েছেন। তাই বুধবার তিনি আসতে পারেননি আদালতে।

আদালতে সন্দীপের আইনজীবীর দাবি, দেরিতে এফআইআরের অভিযোগ তাঁর মক্কেলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তাঁর যুক্তি, ৯ অগস্ট ঘটনার কথা জানতে পেরে সকাল ৯টা ৫৮মিনিট নাগাদ টালা থানার তৎকালীন ওসিকে ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছিলেন সন্দীপ। এর পর দুপুর আড়াইটে নাগাদ হাসপাতালের সুপারের মাধ্যমে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়। সে ক্ষেত্রে দেরিতে এফআইআর করার অভিযোগ কী ভাবে সন্দীপের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আইনজীবী। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে দায়িত্বপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে কোন বিষয়টি কার এক্তিয়ারভুক্ত— সে বিষয়টি নিয়েও মন্তব্য করেন সন্দীপের আইনজীবী। আদালতে তিনি জানান, মেডিক্যাল কলেজে কিছু হলে তার দায়িত্ব সরাসরি অধ্যক্ষের উপর বর্তায়। কিন্তু হাসপাতালের ক্ষেত্রে প্রথম দায়িত্ব হাসপাতালের সুপারের।

Advertisement

অভিজিতের আইনজীবী আদালতে বলেন, “টালা থানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ফরেন্সিক থেকে দিন কয়েকের মধ্যে আসবে বলা হচ্ছে। সেটি এলে ওই ফুটেজের ভিত্তিতে জেরা করা হবে।” কিন্তু সে ক্ষেত্রে টালা থানার প্রাক্তন ওসিকে কেন জেলে থাকতে হবে? তা নিয়ে প্রশ্ন অভিজিতের আইনজীবীর। তাঁর বক্তব্য, “টালা থানা তো ঘটনাস্থলও না।” পাশাপাশি পুলিশকর্মীকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে যে বিধি রয়েছে, তা সিবিআই মানছে না বলেও আদালতে অভিযোগ জানান অভিজিতের আইনজীবী। তিনি বলেন, “পুলিশের ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে গ্রেফতারের আগে অনুমতি চাওয়া হয়নি। সাত বার নোটিশে হাজিরা দিয়েছেন অভিজিৎ। দু’বার মৌখিক ডাকা হয়েছিল, তখনও গিয়েছিলেন। কিন্তু কোন কারণে গ্রেফতার, তা এখনও জানানো হয়নি।”

টালা থানার প্রাক্তন ওসির আইনজীবী এ দিন তাঁর জামিনের জন্য আবেদন জানান। দেরিতে এফআইআর করার যে অভিযোগ উঠেছে প্রাক্তন ওসির বিরুদ্ধে, সে বিষয়েও আপত্তি জানান তিনি। আইনজীবীর বক্তব্য, সাড়ে ৯টায় অভিযোগ পেয়েছিলেন অভিজিৎ এবং সাড়ে ১০টায় ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেই ধারা যোগ করা হয়নি। যে অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে করা হয়েছে সেটি জামিনযোগ্য বলেও দাবি আইনজীবীর। পাশাপাশি আইনজীবীর আরও যুক্তি, অভিজিতকে মূল অভিযোগের সঙ্গে যুক্ত করা যায়নি।

আরজি কর-কাণ্ডের পর থেকে যে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছে সেটিকে ‘বিরল থেকে বিরলতম জনরোষ’ বলে ব্যাখ্যা করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী বলেন, “যে সিসি ফুটেজ ও মোবাইল উদ্ধার হয়েছে, সেগুলির ফরেন্সিক তথ্যের জন্য অপেক্ষা করছি। আমাদের হাতে আরও তিন দিনের সময় থাকছে। তখন আবার হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানানো হতে পারে।”

সিবিআইয়ের তরফে দু’জনকেই ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে পাঠানোর জন্য আবেদন জানানো হয়। দুই অভিযুক্তের জামিনের আর্জি খারিজ করে, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্তই জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

পাশাপাশি যে হেতু মূল অভিযোগ যৌন নিগ্রহের, সে ক্ষেত্রে রুদ্ধদ্বার শুনানির দাবি আবারও তুলে ধরেন সিবিআই আইনজীবী। তিনি বলেন, “রুদ্ধদ্বার শুনানির আবেদন জানানো হয়েছিল। এখনও মঞ্জুর হয়নি।” যদিও তাতে আপত্তি জানান টালা থানার প্রাক্তন ওসির আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্টে শুনানির সরাসরি সম্প্রচারের প্রসঙ্গে টেনে নিজের বক্তব্যের সপক্ষে যুক্তি দেখান তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement