গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার আগাম খবর কি সন্দীপ ঘোষদের কাছে ছিল? শুক্রবার আদালতে এমন প্রশ্নের মুখে পড়ল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। বিচারকের প্রশ্নের জবাবে সিবিআই জানায়, সেই আশঙ্কা এখনই উড়িয়ে দিতে চাইছে না তারা। তবে এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনও তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি বলেও আদালতে জানিয়েছে সিবিআই।
তিন দিনের সিবিআই হেফাজত শেষে শুক্রবার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ এবং টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎকে শিয়ালদহ আদালতে হাজির করানো হয়। শুনানিতে আরজি করের ঘটনা এবং তাতে অভিযুক্তদের যোগ নিয়ে একাধিক প্রশ্ন ওঠে। বিচারক সিবিআইয়ের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, ‘‘এই মামলায় দু’টি দিক আছে। ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় সহ-যড়যন্ত্রকারী? না কি সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাটের সহ-ষড়যন্ত্রকারী? এমন কোনও প্রমাণ পেয়েছেন?’’ অভিযুক্তেরা কোনও ‘অ্যালিবাই’ দিচ্ছেন কি না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়। জবাবে সিবিআইয়ের আইনজীবী জানিয়েছেন, ‘‘হ্যাঁ, দিচ্ছেন।’’
আরজি কর মামলায় অভিজিতের পলিগ্রাফ পরীক্ষা করতে চেয়ে শুক্রবার আদালতে আবেদন করে সিবিআই। তাদের আইনজীবীর কথায়, ‘‘টালা থানার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়েছে। সেখানে দেখা গিয়েছে, উনি (অভিজিৎ মণ্ডল) ঘটনার দিন, অর্থাৎ ৯ অগস্ট সকাল ১০টার সময় থানায় ছিলেন না। কোথায় ছিলেন, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’ অভিজিতের পলিগ্রাফ পরীক্ষা করানো প্রসঙ্গে বিচারক বলেন, ‘‘পলিগ্রাফে কেউ রাজি হবেন কি না সেটা তাঁর নিজের ব্যাপার।’’
আরজি করের ধর্ষণ-খুনের মামলায় এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে তিন জনকে। ঘটনার পর পরই কলকাতা পুলিশের এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করে। অভিযোগ, ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় তাঁর সরাসরি যোগ রয়েছে। পরে সিবিআই এই মামলার তদন্তভার হাতে নেওয়ার পর সন্দীপ এবং অভিজিৎকে গ্রেফতার করে। ধর্ষণ-খুনের ঘটনার তথ্যপ্রমাণ লোপাট, দেরিতে এফআইআর দায়েরের অভিযোগে টালা থানার প্রাক্তন ওসিকে গ্রেফতার করে সিবিআই। শুক্রবার বিচারক সিবিআইয়ের কাছে জানতে চান, অভিজিতের বিরুদ্ধে প্রমাণ লোপাটের কোনও ভরসাদায়ক তথ্য আছে কি না? শুক্রবারের শুনানিতে বিচারক সিবিআইয়ের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, ‘‘এই ঘটনা ঘটতে চলেছে, অভিযুক্তদের কাছে আগাম খবর ছিল, এমন কোনও তথ্য আছে?’’ সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, ‘‘এ রকম কিছু এখনও পাওয়া যায়নি। তদন্ত চলছে। তবে কোনও আশঙ্কাই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ওঁরা সহযোগিতা করছেন না। তাই আমরা বিভিন্ন পরীক্ষার আবেদন করছি।’’
তদন্তের স্বার্থে সিবিআই সন্দীপদের আরও পাঁচ দিন নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন করে। বিচারক সেই আবেদন মঞ্জুর করেন। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সন্দীপদের সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে শিয়ালদহ আদালত।