Sandeshkhali Violence

‘এখানে কেন এসেছিস’, উড়ে এল হুমকি

এই চত্বরে রাস্তার দু’দিকে চাষের জমি। এগিয়ে গিয়ে হালদারপাড়া গ্রাম। সেখান থেকেই লোকজন এসেছিল ৬ নম্বর পাড়ায়। ওখানেই পথ আটকে দেয় পুলিশ।

Advertisement

ঋষি চক্রবর্তী, নবেন্দু ঘোষ 

সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৫:৪৬
Share:

জেলিয়াখালিতে শিবপ্রসাদের পোলট্রি খামারে ভাঙচুর, আগুনও ধরালেন গ্রামবাসীরা। ছবি: নবেন্দু ঘোষ।

এ কী কোনও সাধারণ জনপদ, যেখান দিয়ে একটু আগেই গিয়েছেন অফিসযাত্রীরা বা তারও আগে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা? নাকি কোনও উপদ্রুত এলাকা, যেখানে পদে পদে বাধা দিতে হাজির নানা ধরনের লোক?

Advertisement

সকালে ধামাখালি ঘাট পেরিয়ে ইঞ্জিনভ্যানে ঢোকার চেষ্টা করতে গিয়ে সেই অভিজ্ঞতাই হল। একটু আগেই চাপা গলায় আশপাশের লোকজন বলছিলেন, হুমকি দিয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে কয়েক পা এগোতেই যেন মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে এল জনা চারেক বলবান যুবক। এক জনের হাতে দেশি ওয়ানশটার। বাকিদের হাতে লাঠি, রড। বন্ধ হয়ে গেল পাড়ার জানলা-দরজা। এক যুবক বলল, ‘‘কী করতে এসেছিস এখানে? চলে যা।’’ আর এক জন বলল, ‘‘যাদের সঙ্গে কথা বলছিলি, তারা তো দরজা-জানলা বন্ধ করে দিয়েছে। তোদের এত
কিসের আগ্রহ!’’

একটু আগে যে ইঞ্জিনভ্যান চালক বছর পনেরোর অষ্টম শ্রেণিতে পড়া ছেলেটি নিয়ে যাচ্ছিল ঘটনাস্থলের দিকে, দু’পাশের মেছোভেড়ি দেখিয়ে সে বলছিল, “এ সবের মালিক শিবু হাজরা। সন্দেশখালি ১ ব্লকে শাহজাহান ভাইয়ের মতোই এখানে দাদার নিজের জমিদারি।” ভ্যান থেকে নামতেই এগিয়ে এলেন মাঝবয়সি এক মহিলা। বললেন, “বাবা, চলে যাও। এরা ভয়ঙ্কর। আমাদের উপরে কী অত্যাচার করে, ধারণা নেই!” আর এক মহিলা শোনালেন যৌন নিগ্রহের অভিযোগও। ভ্যানচালক ছেলেটি বলে উঠল, “কাকিমার দম আছে, অনেক কিছুই বলে দিল।”

Advertisement

শিবপ্রসাদের বাড়ির পাশের পাড়ায় ঢুকতেই কয়েক জন এগিয়ে এসে বললেন, “হাতে-পায়ে ধরছি, আমাদের বিপদে ফেলবেন না। পুলিশ ঢুকে তল্লাশির নামে হুমকি দিয়েছে। শিবুর লোকেরা হুমকি দিয়েছে, রাতে দেখে নেবে। আপনারা চলে যান।”

এর পরে দুপুরের দিকে দ্বিতীয় প্রচেষ্টা। এ বারে আজিজের খেয়াঘাট দিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে মিশে ডাঙায় উঠেই দেখা গেল, হুশ হুশ করে চলে যাচ্ছে পরপর মোটরবাইক। একটিকে হাত দেখিয়ে আটকানোর চেষ্টা করতেই পাশের এক মহিলা বলে উঠলেন, ‘‘করছো কী বাছা! ওর পিছনেই তো শিবু বসে!’’

তা হলে কি জেলিয়াখালি বাজার যাওয়া হবে না? ওই মহিলাকে বলা গেল, ‘‘আপনি তো ও-দিকেই যাচ্ছেন, সঙ্গী হব। কেউ জানতে চাইলে বলব, আপনি আমার পিসি।’’

এই ভাবে প্রথমে জেলিয়াখালি বাজার, তার পরে হাঁটতে হাঁটতেই স্লুইস গেট। ধীরে ধীরে চোখের সামনে মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশটা স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। সে রাস্তায় প্রথমেই শিবুপ্রসাদের খামারবাড়ি। সেখানে ভাঙচুরের চিহ্ন চারদিকে। জানলার কাচ ভেঙে ছড়িয়ে আছে আছে রাস্তাতেও। তখন অবশ্য গ্রামবাসীরা চলে গিয়েছে। জমা হচ্ছিল তৃণমূলের লোক। ওই রাস্তা দিয়ে সোজা ৬ নম্বর পাড়া। সেখানে বিক্ষুব্ধ জনতা শিবুর দোকান পুড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ। গিয়ে দেখা গেল, তখনও দোকান ঘরে আগুন জ্বলছে। গুদামের আগুন জল দিয়ে নিভিয়েছে পুলিশ।

এই চত্বরে রাস্তার দু’দিকে চাষের জমি। এগিয়ে গিয়ে হালদারপাড়া গ্রাম। সেখান থেকেই লোকজন এসেছিল ৬ নম্বর পাড়ায়। ওখানেই পথ আটকে দেয় পুলিশ। তার পরে সন্ধ্যা নামার আগে পর্যন্ত অপেক্ষা আর অপেক্ষা। পুলিশ এলাকায় গিয়ে তল্লাশি চালিয়ে ধরপাকড় করেছে এর মধ্যে। এক সময়ে বাহিনী বেরিয়েও আসে।

কিন্তু রাতটা? ফেরার সময়ে বার বার মনে হচ্ছিল হুমকির কথা: শিবুর লোকজন বলে গিয়েছে, রাতে দেখে নেবে। বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল না, কী প্রবল উৎকণ্ঠায় রাত কাটছে গ্রামের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement