সন্দেশখালির স্থানীয় বিজেপি নেতা গঙ্গাধর কয়াল। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ ।
সন্দেশখালির পুরো ঘটনায় শীর্ষ আদালতের নজরদারিতে তদন্ত চেয়ে আবেদন করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। আবেদন করেছেন সন্দেশখালির এক মহিলা। বিজেপি নেতা গঙ্গাধর কয়ালের ভিডিয়ো সংক্রান্ত বিষয়টিও সন্দেশখালি মামলায় যুক্ত হতে পারে। গঙ্গাধরের মামলার শুনানি চলাকালীন কলকাতা হাই কোর্টে তেমনটাই জানাল রাজ্য। তবে গঙ্গাধরের আইনজীবীর দাবি, কলকাতা হাই কোর্টে তাঁর মক্কেলের আবেদনের ভিত্তিতে করা মামলার শুনানিতে কোনও আইনি বাধা নেই। মঙ্গলবার এই মামলার শুনানি হবে বলে জানিয়েছে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের বেঞ্চ। পাশাপাশি, এখনই গঙ্গাধরের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করা যাবে না বলেও মৌখিক রক্ষাকবচ দিল আদালত।
সন্দেশখালির ভিডিয়ো নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন সন্দেশখালির স্থানীয় বিজেপি নেতা গঙ্গাধর। অভিযোগ, তাঁর ছবি ব্যবহার করে ‘ভুয়ো’ ভিডিয়ো তৈরি করা হয়েছে। তার পর তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সমাজমাধ্যমে। এর বিরুদ্ধে হাই কোর্টে মামলার অনুমতি চেয়েছিলেন গঙ্গাধর। অনুমতি দেয় বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের বেঞ্চ। সোমবার সেই মামলার শুনানির চলাকালীন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তের সওয়াল, পুরো ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্ত চেয়ে আবেদন করেছেন সন্দেশখালির এক মহিলা। গঙ্গাধরের বিষয়টিও সেখানেই তোলা হবে। তবে সোমবার সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ ব্যস্ত থাকায় বিষয়টি তোলা হয়নি। মঙ্গলবার আবার সুপ্রিম কোর্টের ওই বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে বলেও তিনি জানান। তবে গঙ্গাধরের আইনজীবীর দাবি, এখনও বিজেপি নেতার ভিডিয়ো সংক্রান্ত বিষয়টি সন্দেশখালির মূল মামলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়নি। তাই হাই কোর্টে এই মামলার শুনানি চলার ক্ষেত্রে কোনও আইনি বাধা নেই। এর পরেই বিচারপতি সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, হাই কোর্টে আপাতত গঙ্গাধরের আবেদনের ভিত্তিতে করা মামলার শুনানি হবে। মঙ্গলবার এই মামলার শুনানি। গঙ্গাধরের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করা যাবে না বলেও রাজ্যের এজির আশ্বাসের প্রেক্ষিতে গঙ্গাধরকে মৌখিক রক্ষাকবচ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট।
সন্দেশখালির ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে রাজ্য। রাজ্যের পাশাপাশি কলকাতা হাই কোর্টের ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেছেন রাজ্য পুলিশের আইজি, জেলা পুলিশ সুপার। তবে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ জানিয়েছে, এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ রয়েছে। মহিলাদের উপর নির্যাতন, জমি কেড়ে নেওয়ার মতো অভিযোগও রয়েছে। জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত এই মামলার শুনানি মুলতুবি রাখার কথা জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। তবে শীর্ষ আদালত এ-ও জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলে তদন্তপ্রক্রিয়া ব্যাহত করা যাবে না। তা যেমন চলছিল, চলবে। সুপ্রিম কোর্টে মামলা বিচারাধীন দেখিয়ে হাই কোর্টে চলা মামলায় কোনও বাধা দেওয়া যাবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়েছে শীর্ষ আদালত।
এর মধ্যেই সন্দেশখালির একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে ৪ মে। যা রাজ্য রাজনীতিতে কার্যত তোলপাড় ফেলে দিয়েছে। সন্দেশখালিতে ‘স্টিং অপারেশন’ বা গোপন ক্যামেরা অভিযান করে ওই ভিডিয়ো তৈরি করা হয়েছে। সেখানেই দেখা গিয়েছিল গঙ্গাধরকে। যদিও এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। ভিডিয়োতে দেখা যায়, অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের কাছে তিনি নিজে স্বীকার করছেন, সন্দেশখালির আন্দোলন সাজানো। টাকার বিনিময়ে সেখানকার মহিলারা তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং অত্যাচারের ভুয়ো অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেই ভিডিয়োয় সন্দেশখালির মহিলাদের দিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করার অভিযোগও উঠেছে। এর পরেই ওই ভিডিয়োটির বিরোধিতা করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন গঙ্গাধর। আদালতে নিরাপত্তার আবেদনও জানান গঙ্গাধর। আবেদনপত্রে তিনি জানান, তিনি নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। গঙ্গাধরের আবেদনের ভিত্তিতে করা সেই মামলরই শুনানি ছিল সোমবার। সেখানেই সন্দেশখালির পুরো ঘটনায় শীর্ষ আদালতের নজরদারিতে তদন্ত চেয়ে আবেদন করা হয়েছে বলে হাই কোর্টে জানাল রাজ্য। তবে বিচারপতি সেনগুপ্তের বেঞ্চ জানিয়েছে, আপাতত গঙ্গাধরের মামলা শুনবে হাই কোর্ট।