সাইনুলের সাফল্যে মিষ্টিমুখ। ছবি: সঞ্জীব প্রামাণিক
খবরটা পেয়েই পড়শিরা ভিড় করেছিলেন বাড়িতে।
—হ্যাঁ গো, আমাদের সাইনুল নাকি ফার্স্ট হয়েছে!
—তা হলে আর বলছি কী, জেলায়-টেলায় নয়, এক্কেবারে রাজ্যে!
—জানতাম, ও ছেলে কিছু একটা করবেই! কই গো, সাইনুলের মা, আমাদের মিষ্টিমুখ করাতে হবে কিন্তু।
সাইনুলের বাড়ির ফালি উঠোনে যেন মেলা বসেছে। গোটা গ্রামের গর্বের শেষ নেই। আর হবে না-ই বা কেন! এ গ্রামের ছেলের দৌলতেই যে মাদ্রাসায় রাজ্যের শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে মুর্শিদাবাদ।
নওদার থানার এই গ্রামের নাম ত্রিমোহিনী। সাইনুলের বাবা মুনতাজ শেখ কোনও দিন স্কুলে যাননি। দিনমজুরি করেন। মা মুনিয়ারা বিবি মাধ্যমিক দিয়েছিলেন। কিন্তু পাশ করতে পারেনি। ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। সেই তাঁদের ছেলে সাইনুল হক মাদ্রাসার পরীক্ষায় ৯৬ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। ভৌতবিজ্ঞানে ১০০, বাংলায় ৯০, ইংরেজিতে ৯০, অঙ্কে ৯৯, জীববিদ্যায় ৯৯, ইতিহাসে ৯৯, ভূগোলে ৯৮, ইসলামিক পরিচয়ে ৯৬। সাইনুলের মা মুনিয়ারা বিবি বলছেন, ‘‘ছেলে কখনও সময় নষ্ট করত না। লেখাপড়া নিয়েই থাকত।’’
দিনে সর্বোচ্চ ১৮ ঘণ্টাও পড়াশোনা করেছে সাইনুল। প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসে সে প্রথম হয়েছে। বিজ্ঞান নিয়ে লেখাপড়া করার ইচ্ছে সাইনুলের। বৃহস্পতিবার সে নওদার বাড়িতে ছিল না। টেলিফোনে বলেছে, ‘‘পড়াশোনা করতে ভাল লাগে। যা পাই, তাই পড়ি। চেষ্টা করেছি। কিন্তু রাজ্যে যে প্রথম হয়ে যাব তা ভাবিনি!’’
সাইনুলের বাবা মুনতাজ জানিয়েছেন, সাইনুল অঙ্ক ও ইংরেজিতে টিউশন নিত। স্কুলের এক শিক্ষক আর্থিক ভাবে সাহায্য করতেন। ত্রিমোহিনী হাই মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাজিউদ্দিন বলেন, ‘‘সাইনুল খুবই ভাল ছাত্র। ওর দাদাও এই স্কুলের ছাত্র ছিল। সে-ও ভাল রেজাল্ট করেছিল। তবে সাইনুল যে রাজ্যে প্রথম হবে তা ভাবিনি। ও আমাদের গর্ব।’’