এখান থেকে পশ্চিম ইউক্রেনের সীমান্তে পৌঁছতে ৬ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগবে। ফলে সেটা আমাদের পক্ষে ব্যক্তিগত ভাবে যাওয়াটা সহজ নয়। এ দেশে যে স্টুডেন্ট এজেন্সিগুলো রয়েছে, আমাদের ফেরানোর বিষয়ে তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে দূতাবাস। যথেষ্ট পরিমাণ, খাবার, জল এবং নগদ টাকা হাতে রাখতে বলা হয়েছে। সে ভাবে রেখেওছি।
কিভের মেডিক্যাল কলেজে হস্টেলের বেসমেন্টে আটকে ভারত ও অন্যান্য দেশের পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র
কয়েক দিনের মধ্যেই দ্রুত বদলে গেল কিভ। আপাতত স্বাভাবিক উপায়ে দেশে ফেরার উপায় নেই। গোটা ইউক্রেনে কার্যত বন্দি পড়ুয়া, ব্যবসায়ী বা চাকরি সূত্রে আসা সকলেই ভারত সরকারের অপেক্ষায় আছি। আমার দেশে ফেরার উড়ানের টিকিট যেই মুহূর্তে কেটে ছিলাম, তার পরেই যুদ্ধের ঘোষণা হল। সমস্ত বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে গেল। ফলে বাতিল হয়ে যায় উড়ান।
হস্টেল থেকে দূরে নিপ্রো নদীর পূর্ব দিকে বোরিসপিলস্কা স্ট্রিটের একটা অ্যাপার্টমেন্টে এক কামরার ঘরে একা থাকি। যুদ্ধ ঘোষণার পর থেকে ঘরেই আছি। এই অ্যাপার্টমেন্টে আমি একাই ভারতীয়। তবে বন্ধুদের সঙ্গে ফোনে বা চ্যাটে সমানে যোগাযোগ আছে। ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে অনবরত যোগাযোগ রাখছি। জরুরি
জিনিসপত্র গুছিয়ে রেখেছি, যাতে যে কোনও মুহূর্তে বেরিয়ে পড়তে পারি। তবে একা যাব না। বন্ধুরা দল বেঁধেই যাব। রানাঘাটের বাড়িতে রয়েছেন মা-বাবা। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।
হস্টেলে কিংবা আমাদের অ্যাপার্টমেন্টে সর্বত্রই ‘বম্ব শেল্টার’ রয়েছে। সাইরেন বাজলেই বুঝতে হবে বিপদ। তখনই দ্রুত বেসমেন্টের সেই শেল্টারে চলে যেতে বলা হয়েছে। এ দেশে এমন শেল্টার শয়ে শয়ে আছে। শোনা যায়, সোভিয়েত ইউনিয়ন থাকাকালীন এ দেশে যখন ঠান্ডা লড়াই চলত, তখনই এ সব তৈরি হয়েছিল। এ সে সবের ব্যবহার হচ্ছে।
আমার বাড়ি থেকে বোরিসপিল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ২৪-২৫ কিলোমিটার। কিন্তু এই মুহূর্তে সেখানে কী পরিস্থিতি জানি না। আমাদের এখন দেশে ফেরার একটাই উপায়, সড়ক পথে পশ্চিম ইউক্রেনে পৌঁছে সীমানা পেরিয়ে প্রতিবেশী চারটি দেশে যাওয়া। এর পরে পোল্যান্ড, রোমানিয়া, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া থেকে উড়ান ধরে দেশে ফেরা। তবে সেখান থেকে উড়ানে ফেরানোর কাজটা করাতে পারবে একমাত্র দূতাবাস। ইতিমধ্যেই দূতাবাসের তরফ থেকে বলা হয়েছে, পশ্চিম ইউক্রেনে যাঁরা আছেন, তাঁদের সীমান্তের কাছে পৌঁছে যেতে। যাঁরা একটু দূরে আছেন, তাঁরা নিজেরা দিনের বেলায় যাত্রা করে পৌঁছতে পারেন। যেহেতু মার্শাল ল’ চলছে তাই রাতে না-বেরোনোর কথাই বলা হয়েছে।
কিভ হল উত্তর-মধ্য ইউক্রেন। এখান থেকে পশ্চিম ইউক্রেনের সীমান্তে পৌঁছতে ৬ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগবে। ফলে সেটা আমাদের পক্ষে ব্যক্তিগত ভাবে যাওয়াটা সহজ নয়। এ দেশে যে স্টুডেন্ট এজেন্সিগুলো রয়েছে, আমাদের ফেরানোর বিষয়ে তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে দূতাবাস। যথেষ্ট পরিমাণ, খাবার, জল এবং নগদ টাকা হাতে রাখতে বলা হয়েছে। সে ভাবে রেখেওছি। কারণ, এটিএমে বার বার গিয়ে টাকা তোলা আর নিরাপদ নয়।
লেখক কিভের ডাক্তারি পড়ুয়া