ছাত্র পড়িয়ে ফেরার পথে প্রহৃত তরুণী

ব্যারাকপুরে গুজবের শিকার ৪

গ্রামে গ্রামে ঘুরে মাইকে প্রচার চলছে পুলিশের, রাজ্য পুলিশের ডিজি কড়া বার্তা দিয়েছেন, জায়গায় জায়গায় ধরপাকড় করছে পুলিশ। কিন্তু এত কিছুর পরেও ‘ছেলেধরা’ গুজবে ইতি টানা যাচ্ছে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৮
Share:

গ্রামে গ্রামে ঘুরে মাইকে প্রচার চলছে পুলিশের, রাজ্য পুলিশের ডিজি কড়া বার্তা দিয়েছেন, জায়গায় জায়গায় ধরপাকড় করছে পুলিশ। কিন্তু এত কিছুর পরেও ‘ছেলেধরা’ গুজবে ইতি টানা যাচ্ছে না। শুধুমাত্র সন্দেহের বশে নিরীহ লোকজনকে ধরে গণপিটুনি, নিগ্রহের ঘটনা ঘটেই চলেছে।

Advertisement

মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার পর্যন্ত উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে তিনটি ঘটনায় মার খান দুই মহিলা-সহ ৪ জন। প্রহৃতদের মধ্যে এক তরুণী গৃহশিক্ষকতা করেন। অন্য জন মদ্যপ। আর এক দম্পতি পারিবারিক প্রয়োজনে গিয়েছিলেন এক আত্মীয়ের বাড়িতে। বুধবার রাতে বনগাঁর পাইকপাড়া এলাকাতেও চোর সন্দেহে মারধর করা হয় এক যুবককে। এর আগে বর্ধমানের কালনায় গুজবের জেরে গণপিটুনিতে মৃত্যুও হয়েছে। বলাগড়ে গাড়ি আটকে মারধর করা হয় এক শিক্ষিকাকেও।

ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সুব্রত মিত্র বলেন, ‘‘লাগাতার প্রচার চলছে। পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। মানুষকে বোঝানো হচ্ছে, গুজবে কান দিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। সন্দেহজনক কিছু মনে হলে পুলিশ-প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’’ কিন্তু এত সবের পরেও যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না, সে কথা মানছেন তিনি।

Advertisement

গুজব রুখতে দলের কর্মীদের প্রচারে নামানোর কথা আগেই জানান তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এ দিন বলেন, ‘‘পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে কমিটি তৈরি করছি। বৈঠকও ডাকা হয়েছে।’’ তবে তাঁর অভিযোগ, বিরোধী দলের প্ররোচনাতেই গুজব মাত্রা ছাড়াচ্ছে। যা শুনে বিজেপির জেলা সম্পাদক ফাল্গুণী পাত্র বলেন, ‘‘তৃণমূল মিথ্যা বলছে। মানুষের সচেতনতার অভাবেই এই পরিস্থিতি। এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। আমরাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন।’’

এ দিকে, ছেলেধরা সন্দেহে মঙ্গলবার রাতে টিটাগড়ের এপি দেবী রোডে গণপিটুনির শিকার তরুণীর বিএন বসু মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। খড়দহের বাসিন্দা ওই তরুণী জানান, মুখ-ঢাকা পোশাক পরেছিলেন তিনি। কিছু লোক ‘ছেলেধরা ঢুকেছে’ বলে চিৎকার করতে করতে তাঁকে ধাওয়া করে। তরুণী কিছু না ভেবেই আতঙ্কে দৌড়তে শুরু করেন। ধরে ফেলে শুরু হয় মার। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে। কয়েক জনকে আটক করা হয়েছে।

অন্য ঘটনাটি জগদ্দলের পঞ্চাননতলার। পুলিশ জানায়, বুধবার রাতে স্থানীয় ধর্মেশ ঠাকুর মদ্যপ অবস্থায় ঘুরছিলেন প্রমোদনগর রোডে। মদের ঘোরে তিনি দু’তিনটি বাড়ির দরজায় তিনি কড়া নাড়েন বলে অভিযোগ। ঘটনাচক্রে দু’টি বাড়িতেই ছোট বাচ্চারা আছে। নিমেষে রটে যায়, ছেলেধরা। ধর্মেশকে ধরে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে শুরু হয় মারধর। পুলিশ এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় ধর্মেশকে।

আর একটি ঘটনাও জগদ্দলের। পুলিশ জানায়, শ্যামনগর চণ্ডীতলার বাসিন্দা শিবপ্রসাদ গোলদারের বাড়িতে ভাড়া থাকেন লালাপ্রসাদ মাথুরি। মাস তিনেক আগে তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। মা-হারা পাঁচটি কন্যাসন্তান নিয়ে আতান্তরে পড়েন লালাপ্রসাদ। শিবপ্রসাদবাবু নিজের নিঃসন্তান শ্যালিকা ও তাঁর স্বামীকে ডেকেছিলেন, যদি কোনও বাচ্চাকে দেখভালের দায়িত্ব নিতে চান ওই দম্পতি। বুধবার বিকেলে শিবপ্রসাদবাবুর শ্যালিকা নন্দিতা বিশ্বাস ও তাঁর স্বামী জয়ন্ত দাস ওই বাড়িতে যান। প্রতিবেশীদের মধ্যে কেউ রটিয়ে দেয়, মেয়েদের ধরে নিয়ে যেতে এসেছে। এলাকার লোকজন বাড়ি ঘিরে ফেলে। ওই দম্পতিকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করা হয়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানোর অভিযোগে এর আগেই কালনায় দুই সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। বুধবার আরও এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে ধরা হয়। গাইঘাটার শশাডাঙায় এক প্রৌঢ়াকে ছেলেধরা সন্দেহে মারধরের ঘটনা আটকাতে গিয়ে এর আগে আক্রান্ত হয় পুলিশ।
ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মঙ্গলবার এক মহিলা-সহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement