—ফাইল চিত্র।
বিজেপিকে রুখতে বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বাম ও কংগ্রেসকে পাশে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমাদের একসঙ্গে আসা দরকার।’’ তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বিধানসভায় শাসক দল অভিযোগ আনল, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের ‘অপব্যাখ্যা’ করা হয়েছে। শাসক ও বিরোধীদের তুমুল বিতণ্ডায় তপ্ত হল বিধানসভার অধিবেশন।
বাম বিধায়কদের সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষীদের কার্যত ধস্তাধস্তি বাধে। ‘মেজ’ ধরে টানতে যান সুজনবাবু। যার জন্য স্বাধিকার ভঙ্গের দায়ে পড়তে হতে পারে কয়েক জন বাম বিধায়ককে।
বিধানসভায় বৃহস্পতিবার প্রশ্নোত্তর-পর্ব শেষ হতেই ‘পয়েন্ট অব ইনফর্মেশন’ এনে পরিষদীয় প্রতিমন্ত্রী তাপস রায় দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রী বুধবার বক্তৃতায় যা বলেছিলেন, তার ‘বিকৃতি’ ঘটানো হয়েছে। তাঁর ব্যাখ্যা, মুখ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্য রাজনৈতিক দিক থেকে ছিল না, ছিল সামাজিক অস্থিরতার কারণে। প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের উদ্দেশে বলেছিলেন, কার সঙ্গে তারা জোট করবে, তা তাদের ব্যাপার। বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস তো জোট করেছিল সিপিএমের সঙ্গে। তাপসবাবুর পরে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও প্রায় একই কথা বলেন। নিজেদের বক্তব্য জানানোর জন্য সুজনবাবু আবেদন করলেও স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তা গ্রহণ করেননি। শাসক দলের সঙ্গে বচসা শুরু হয় সুজনবাবু এবং বাম বিধায়কদের। স্পিকার বার বার আবেদন জানালেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বরং, স্পিকারকে ঘিরেই বাম বিধায়কেরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।
স্পিকারকে ঘিরে বিক্ষোভের মধ্যে ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে উঠে যান মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। তাঁর সঙ্গেও বাম বিধায়কদের বচসা চলে। কংগ্রেস বিধায়কেরা নিজেদের আসনেই বসে ছিলেন। তবে কিছু ক্ষণ পরে বাম এবং কংগ্রেস বিধায়করা একসঙ্গে বিধানসভা কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যান।
বাইরেও বিক্ষোভ দেখান বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, মন্ত্রীদের কার্যত হুমকির কারণেই নিরপেক্ষ ভাবে বিধানসভা পরিচালিত হচ্ছে না। এই পরিস্থিতি স্পিকারের পদের পক্ষে অবমাননাকর। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান সভার বাইরে বলেন, ‘‘যে ভাবে পরিষদীয় প্রতিমন্ত্রী স্পিকারকে ধমকে নিজের বক্তব্য বলার চেষ্টা করলেন, তা অভূতপূর্ব, দুর্ভাগ্যজনক এবং লজ্জার। স্পিকারের বিরুদ্ধে আমাদের নানা বক্তব্য থাকে। তাঁর বিরুদ্ধে আমরা অনাস্থা আনারও চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাঁর প্রাপ্য সম্মান দিয়েই আমরা বিধানসভায় অংশগ্রহণ করি।’’ সুজনবাবুর মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এমন কথা বলছেন যে, তাঁর মন্ত্রীদের সে কথা খণ্ডন করতে হচ্ছে!’’ তাপসবাবুর ‘পয়েন্ট অব ইনফর্মেশন’ তোলা নিয়েও বিধিভঙ্গের অভিযোগ আনেন সুজনবাবু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পয়েন্ট অব ইনফর্মেশনে নতুন খবর দিতে হয়। খবরের কাগজের বস্তাপচা তথ্য দিচ্ছেন!’’ তাপসবাবু অবশ্য পরে বলেন, ‘‘আমি স্পিকারের কাছে পয়েন্ট অব ইনফর্মেশন তোলার অনুমতি চেয়েছিলাম। উনি দিয়েছেন। তার পরে আমাকে বিরোধীরা বাধা দিতে পারেন না।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।