মোহন ভাগবত
লোকসভার নির্বাচনের পরে প্রথম বার কলকাতায় এলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। আর সে সফর ঘিরে স্বাভাবিক ভাবেই তৈরি হল নানা রাজনৈতিক জল্পনা। সঙ্ঘের দক্ষিণবঙ্গ সদর দফতরে বৈঠক সেরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই পশ্চিমবঙ্গ ছাড়লেন ভাগবত। কিন্তু সরসঙ্ঘচালকের এই সংক্ষিপ্ত সফরকে ঘিরে বৃহস্পতিবার দিনভর তৎপর রইলেন বাংলা তথা পূর্ব ভারতের শীর্ষ স্তরের সঙ্ঘ নেতারা।
এ দিন সকাল ৯টায় কলকাতা বিমানবন্দরে নামেন মোহন ভাগবত। সেখান থেকে সরাসরি পৌঁছন সঙ্ঘের দক্ষিণবঙ্গ সদর দফতর কেশব ভবনে। সেখানেই ভাগবত মধ্যাহ্নভোজ সারেন এবং বিশ্রাম নেন। সে সবের ফাঁকে তিনি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকও করেন।
মোহন ভাগবতের এই সংক্ষিপ্ত কলকাতা সফর এবং কেশব ভবনে তাঁর কর্মসূচি সম্পর্কে বিশদ তথ্য সঙ্ঘ জানায়নি। সঙ্ঘের তরফে শুধু বলা হয়েছে— ঝাড়খন্ড থেকে অসম যাওয়ার পথে সরসঙ্ঘচালক কিছু ক্ষণের জন্য কলকাতায় থেমেছেন, কোনও নির্দিষ্ট কর্মসূচি নিয়ে কলকাতায় আসেননি। যে হেতু কেশব ভবনে তিনি বেশ কিছুটা সময় কাটিয়েছেন, তাই সংগঠনের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গেও তাঁর কিছু কথাবার্তা হয়েছে।
আরও পড়ুন: জমির লোভে খুন রুখতে কড়া হোক পুলিশ: মুখ্যমন্ত্রী
সঙ্ঘ সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গে সঙ্ঘের যাঁরা শীর্ষ নেতা, তাঁরা সকলে এই মুহূর্তে রাজ্যে বা কলকাতায় নেই। কেউ কেউ ‘প্রবাসে’ (সাংগঠনিক কাজে বাইরে) রয়েছেন। তাই দক্ষিণবঙ্গ বা উত্তরবঙ্গ প্রান্তের সব শীর্ষ নেতার সঙ্গে ভাগবতের দেখা বা বৈঠক হয়নি। তবে যে হেতু সরসঙ্ঘচালক নিজে কলকাতায় এসেছেন, সে হেতু দক্ষিণবঙ্গের প্রান্ত কার্যবাহের সঙ্গে তাঁর একটি বৈঠক হয়েছে এবং অবশ্যই সাংগঠনিক বিষয়েই আলোচনা হয়েছে। তবে এই বৈঠককে কোনও বিশেষ বৈঠক বলতে সঙ্ঘ রাজি নয়। ‘ট্রানজিট’ সফরের ফাঁকে ‘রুটিন বৈঠক’ করেছেন ভাগবত, জানিয়েছে আরএসএস।
বিজেপি সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, শুধু প্রান্ত কার্যবাহ জিষ্ণু বসুর সঙ্গে নয়, ক্ষেত্র প্রচারক প্রদীপ জোশীর সঙ্গেও এ দিন মোহন ভাগবতের বৈঠক হয়েছে। কথাবার্তা হয়েছে আরও কয়েক জনের সঙ্গে।
‘ট্রানজিট’ সফরই হোক বা তার ফাঁকে ‘রুটিন বৈঠক’, মোহন ভাগবতের এই কলকাতা সফরকে কিন্তু রাজ্যের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। ভাগবত এই প্রথম কলকাতায় বা পশ্চিমবঙ্গে এলেন, এমন নয়। কলকাতা-সহ দেশের নানা প্রান্তে তাঁর যাতায়াত নিয়মিত চলতে থাকে ঠিকই। কিন্তু এ বারের সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির অভূতপূর্ব উত্থানের পরে এটাই সরসঙ্ঘচালকের প্রথম বাংলা সফর।
আরও পড়ুন: ভাঙনের জেরে গঙ্গার গ্রাসে জাতীয় সড়ক, কলকাতা থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অংশ
রাজ্যে গেরুয়া শিবিরের পালে এত হাওয়া আগে কখনও বাধেনি। এই নির্বাচনী সাফল্যের জেরে বিভিন্ন দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানের প্রবণতা বেড়েছে পশ্চিমবঙ্গে। তা নিয়ে বিজেপিতে অভ্যন্তরীণ টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। সে টানাপড়েনে জড়িয়ে গিয়েছে সঙ্ঘের নামও। অবাধে সকলকে বিজেপিতে স্বাগত জানানো হবে, নাকি কঠোর হাতে ‘বেনোজল’ আটকানো হবে, সে বিষয়ে নিজেদের কট্টরবাদী অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন সঙ্ঘের এ রাজ্যের নেতারা। বিজেপির একটি অংশ সঙ্ঘের এই অবস্থানকে স্বাগত জানাচ্ছে, আবার অন্য একটি অংশ এই কাঠিন্যের বিরোধিতা করছে।
এই টানাপড়েনের বিষয়ে সঙ্ঘ সদর দফতর সবই জানে। বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সঙ্ঘের নীতি এখন এখানে কী রকম হওয়া উচিত, সে বিষয়ে এ দিন সরসঙ্ঘচালকের তরফ থেকে স্পষ্ট বার্তা স্থানীয় আরএসএস নেতৃত্বকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে রাজনৈতিক শিবির মনে করছে।
আরও পড়ুন: সারদা মামলায় রাজীব কুমারের নামে চার্জশিট তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে সিবিআই