Deoghar

Deoghar rope way accident: ‘খাদের উপরে ঝুলেই কেটে গেল ৪২ ঘণ্টা’

পাহাড়ের সঙ্গে কেব্‌ল কারের ধাক্কায় দু’জন পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছেন। কাটোয়ার অভিষেকও তখন আটকে ছিলেন দেওঘরের একটি কেব্‌ল কারে।

Advertisement

অভিষেক নন্দন (কেব্‌ল কারে আটকে থাকা পর্যটক)

কাটোয়া শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২২ ০৮:৫০
Share:

বাবা-মায়ের সঙ্গে অভিষেক। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

তরতর করে কেব্‌ল কারটা এগোচ্ছিল। হঠাৎ ঝাঁকুনি। তার পরেই সেটা ১৫ ফুট নীচে ঝুলে পড়ে দুলতে শুরু করল। তাকিয়ে দেখি, নীচে গভীর খাদ। ভয়ে বুকটা শুকিয়ে গিয়েছিল। ভেবেছিলাম, যান্ত্রিক সমস্যা, কিছু ক্ষণের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু দেওঘরের ত্রিকূট পাহাড়ের চূড়ায় রোপওয়েতে যেখানে আট মিনিটে পৌঁছনোর কথা, সেখানে যে এ ভাবে ৪২ ঘণ্টা ঝুলে থাকতে হবে, ভাবিনি। ভাবতে পারিনি, সাক্ষাৎ মৃত্যুকে সামনে থেকে দেখতে হবে!

Advertisement

পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া শহরের কাছারিপাড়ায় আমার বাড়ি। ওষুধের ব্যবসা করি। দেওঘরের বন্ধু নমন নীরজের ডাকে সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলাম। ত্রিকূট পাহাড়ে ওঠার জন্য রবিবার বিকেলে আমরা দু’জন একটা কেব্‌ল কারে উঠি। সঙ্গে ছিলেন দু’জন মধ্যবয়সি পর্যটক। কিছুটা এগোনোর পরেই হঠাৎ বিপর্যয়। চার পাশে ঝুলতে থাকা কেব্‌ল কারগুলো থেকে চিৎকার ভেসে আসছিল।

তখনও জানতে পারিনি, পাহাড়ের সঙ্গে কেব্‌ল কারের ধাক্কায় দু’জন পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছেন। কেব্‌ল কারে লেখা হেল্পলাইনের নম্বরে ফোন করলে জানানো হয়, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ভয়ের কারণ নেই। কিন্তু অন্ধকার নামায় মনে ভয় জাঁকিয়ে বসে। চিন্তায় থাকবে মনে করে বাড়ির লোকজনকেও ফোন করতে পারছিলাম না। সঙ্গে থাকা বিস্কুটের প্যাকেট ও জল অল্প করে খাচ্ছিলাম। ক্লান্তিতে চোখ বুজে এলে, কেব্‌ল কার দুলে উঠলেই ভয়ে জেগে উঠছিলাম।

Advertisement

সোমবার সকালে দেখি, চার পাশে পুলিশ, দমকল, অ্যাম্বুল্যান্স। কয়েক দফায় ড্রোনে আমাদের বিস্কুট, চিঁড়েভাজা ও জল পাঠানো হয়। পরে বায়ুসেনার দু’টি বিমানে উদ্ধারকাজ শুরু হয়। বিকেলের দিকে আমাদের কেব্‌ল কার থেকে এক মধ্যবয়সি ব্যক্তিকে হেলিকপ্টারে তোলার তোড়জোড় শুরু হয়। হেলিকপ্টার থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া তারের সঙ্গে থাকা জ্যাকেট পরিয়ে বেল্ট দিয়ে বেঁধে তাঁকে তোলা হচ্ছিল। হঠাৎ যে কী হল, তার ছিঁড়ে তিনি নীচে পড়ে গেলেন। চোখের সামনে ওই দৃশ্য থেকে বুকটা হিম হয়ে গিয়েছিল। মনে হয়েছিল, বেঁচে ফেরা আর হল না।

সে দিন আর উদ্ধারকাজ হয়নি। রাতে ঘুমোতে পারিনি। মঙ্গলবার বেলার দিকে হেলিকপ্টারে ওঠার সময়ে আতঙ্কে ছিলাম। উদ্ধারের পরে, স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়েও বেঁচে আছি বলে বিশ্বাস হচ্ছিল না। নববর্ষের আগের রাতে, বৃহস্পতিবার কাটোয়ায় বাড়ি ফিরে বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরার পরে বুঝতে পারি, বেঁচে থাকার আনন্দ আসলে কী।

লেখক: কেব্‌ল কারে আটকে থাকা পর্যটক, অনুলিখন: প্রণব দেবনাথ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement