বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
দলের এক মহিলা কর্মীকে পরোক্ষে ‘ধর্ষিতা’ বলে বিতর্কে জড়ালেন বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার বীরভূমের লাভপুরে, পঞ্চায়েত সমিতি সংলগ্ন মাঠে ‘পরিবর্তন যাত্রা’ উপলক্ষে সভা ছিল বিজেপির। সেই সভায় রূপা বলেন, ‘‘সাত্তোরের মহিলা পুলিশের দ্বারা, তৃণমূলের লোকেদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন। যে মহিলা ধর্ষিতা হয়েছেন, তাঁকে জিজ্ঞেস করে দেখুন, খেলা কাকে বলে?’’
বীরভূম পুলিশের অবশ্য দাবি, ওই মহিলা আদৌ ধর্ষণের অভিযোগ করেননি। কিন্তু, ধর্ষণের মতো একটি গুরুতর অভিযোগকে সম্প্রতি তৃণমূলের তোলা জনপ্রিয় ‘খেলা হবে’ স্লোগানের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। বীরভূম জেলা বিজেপি-র একাধিক নেতাও একান্তে বলছেন, ‘‘রূপা ধর্ষণ ও খেলার কথা না-বললেই পারতেন।’’
কিন্তু, কে ওই সাত্তোরের মহিলা?
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে বোমাবাজিতে অভিযুক্ত পাড়ুই থানার সাত্তোরের এক বিজেপি সমর্থককে খুঁজতে অধুনা পশ্চিম বর্ধমানের বুদবুদ থানার এক গ্রামে, তাঁর কাকিমার (রূপা যাঁর কথা বলছেন) বাপের বাড়িতে গিয়েছিল বীরভূম জেলা পুলিশের এক বিশেষ দল। ওই কর্মীকে না-পেয়ে কাকিমাকে পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে পুলিশ অত্যাচার চালায় বলে সেই সময় অভিযোগ উঠেছিল। ওই অভিযোগ ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে বিরাট আলোড়ন পড়ে যায়। পরে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ওই মহিলাকে মুরারই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছিল বিজেপি।
এ বারের ভোটের প্রচারে তাঁর নাম এ ভাবে জুড়ে যাওয়ায় বিষয়টি সংবাদমাধ্যমের কাছেই শুনেছেন বলে দাবি করলেন বর্তমানে বিজেপি নেত্রী, ওই নির্যাতিতা। এ দিন বাপের বাড়ি থেকেই ফোনে বললেন, ‘‘উনি (রূপা) কী বলেছেন শুনিনি। তবে, ভোটে পুলিশ তৃণমূলের হয়ে কাজ করবে, এ নিয়ে সন্দেহ নেই। আমাদের দলের কর্মীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসাবে। এটাই আসলে খেলা হওয়া!’’ তাঁর অভিযোগ, তাঁর উপরেও তৃণমূল-পুলিশ মিলে অত্যাচার চালিয়েছিল। এ দিনের পরিবর্তন যাত্রায় তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বলেও জানান। যদিও শারীরিক অসুস্থতার জন্য যেতে পারেননি। আগে রাজ্য মহিলা মোর্চার পদে চার বছর ছিলেন। এখন দলের জেলা কমিটির সদস্য।
ওই মহিলা জানাচ্ছেন, তাঁরা মোট তিনটি মামলা করেছিলেন। প্রতিটি বিচারাধীন কলকাতা হাইকোর্টে। এ দিন রূপার মন্তব্য প্রসঙ্গে বীরভূম জেলা সহ সভাপতি অভিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে আইনের শাসন আছে। বিজেপি নেত্রী প্রকৃত তথ্য জানেন না বলেই সাত্তোরের মহিলার সম্পর্কে উল্টোপাল্টা বলেছেন।’’
এ দিন বিকেল ৩টে নাগাদ প্রাক্তন জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলকে নিয়ে রূপা সভায় পৌঁছন। পরিবর্তন যাত্রার রথের সঙ্গে আসার পথে লাভপুরের চৌহাট্টায় নেমে রূপাকে কর্মীদের মাঝে ‘খেলা হবে’ স্লোগানের সঙ্গে নাচতেও দেখা যায়।