রোদ্দূর রায়। ফাইল চিত্র ।
গোয়া থেকে গ্রেফতার করা হল ইউটিউবার রোদ্দূর রায়কে। গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে রোদ্দূরকে গোয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, এর পর ট্রানজিট রিমান্ডে গোয়ায় তোলা হবে। তার পর তাঁকে নিয়ে আসা হবে কলকাতায়।
প্রসঙ্গত, গায়ক রূপঙ্কর এবং অকালপ্রয়াত কেকে-কে নিয়ে রোদ্দূর (তিনি নিজের নামের এই বানানই লেখেন। ‘রোদ্দূর’। ‘রোদ্দুর’ নয়) সম্প্রতি একটি ফেসবুক লাইভ করেন। সেখানে তিনি রূপঙ্করের পাশাপাশিই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য করেন। কটূক্তি করেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম-সহ কলকাতার পুলিশ কমিশনার এবং রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন সম্পর্কেও। ওই ফেসবুক লাইভের বক্তব্য নিয়েই তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয় গত শনিবার।
শনিবার রোদ্দূরের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর আনন্দবাজারক অনলাইন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তিনি বিষয়টি শুনেওছিলেন। কিন্তু কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি। মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর ফোন ‘সুইচ্ড অফ’ পাওয়া গিয়েছে। তাঁর এক বন্ধুর নম্বরে ফোন করা হলেও সেটি কিছুক্ষণ বাজার পর ফোনটি কেটে দেওয়া হয়।
পরিচালক কৌশিক মুখোপাধ্যায় ওরফে ‘কিউ’ ফেসবুকে রোদ্দূরের গ্রেফতার হওয়ার খবরটি প্রথম জানান। তার পর কলকাতা পুলিশের পদস্থ অফিসারেরাও খবরের সত্যতা স্বীকার করে নেন।
প্রসঙ্গত, শনিবারের আগেও ইউটিউবার রোদ্দূরের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। শনিবারের অভিযোগে বলা হয়েছিল, তিনি নেটমাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেকের বিরুদ্ধে ‘কুরুচিকর মন্তব্য’ করেছেন। নিজেকে তৃণমূলের মুখপাত্র হিসেবে পরিচয় দিয়ে চিৎপুর থানায় রোদ্দূরের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ দায়ের করেন ঋজু দত্ত। তিনি রোদ্দূরের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে শনিবার বিকেলেই রোদ্দূরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তিনি বলেন, ‘‘এফআইআর দায়ের হয়েছে সেটা শুনেছি। এখনই কোনও প্রতিক্রিয়া দেব না।’’ তখন থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত নেটমাধ্যমে নীরবই ছিলেন রোদ্দূর। তবে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ তিনি তাঁর ফেসবুকে একটি লাইভ করেন। ৩৭ মিনিটের সেই লাইভে তিনি বলেছেন, দু’বছর আগে তিনি একটি ‘কেস’ খেয়েছিলেন। সেই লাইভে তিনি মমতার লেখা কবিতা নিয়েও বক্রোক্তি করেছেন।
তারও আগে রোদ্দূর একের পর এক ফেসবুক স্টেটাস দিয়েছেন। যেখানে লেখা, ‘কেস দাও মোরে কেস দজাও আরও, বন্ধ রাখিও কারাগারে’, ‘পুলিশও হাসিছে মোক্সা ক্যাওড়া দেখিছে থানায় বসি, গাঁজার গোলাপ বানায়েছে তারা ফেলিয়া কড়া ও রশি’। অর্থাৎ, তিনি জানতেন, ‘কেস’ আসছে।
পুলিশের কাছে তৃণমূলের মুখপাত্র ঋজুর দায়ের-করা অভিযোগে বলা হয়েছে, রোদ্দূর সাম্প্রতিককালে নেটমাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ও অভিষেক সম্পর্কে কুরুচিকর ভাষা ব্যবহার করেছেন। পাশাপাশি, আপত্তিকর ভাষায় আক্রমণ করেছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ, কলকাতার পুলিশ কমিশনার-সহ কলকাতা ও রাজ্যের পুলিশ এবং প্রশাসনকেও।
যে বিষয়টি নিয়ে রোদ্দূরের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিকতম অভিযোগ, সেটি তিনি করেছিলেন একটি ফেসবুক লাইভে। গায়ক রূপঙ্কর বাগচি এবং অকালপ্রয়াত গায়ক কেকে সংক্রান্ত বিতর্ক এবং বিতন্ডার প্রেক্ষিতে। কয়েক মিনিটের ওই ফেসবুক লাইভে রোদ্দূর মুখ্যমন্ত্রী মমতা সম্পর্কে বাজারচলতি কিছু অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করেছিলেন বলে অভিযোগ।
ছবি—টুইটার
তৃণমূল মুখপাত্র ঋজুর অভিযোগে দাবি করা হয়েছে, রোদ্দূর নিয়মিত ভাবে এই কাজ করে থাকেন। আপত্তিকর ভাষা ব্যবহার করে তিনি রাজ্যকেও অপমান করেন। নেটমাধ্যমে ঘৃণা ছড়ানোর দায়ে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপ চেয়ে পুলিশের কাছে আর্জি জানিয়েছেন অভিযোগকারী।
এর আগেও রোদ্দূরের বিরুদ্ধে লালবাজার-সহ বিভিন্ন থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। সে বারও তাঁর বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে কুরুচিকর ভাষা প্রয়োগের অভিযোগ ছিল। শনিবার আবার একই অভিযোগে নতুন করে পুলিশের কাছে এফআইআর হল রোদ্দূরের বিরুদ্ধে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।