মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চার দিনের পূর্ব মেদিনীপুর সফর শুরু হওয়ার আগের দিনই তাঁকে রাস্তার পরিস্থিতি নিয়ে কটাক্ষ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তার পরে অতীতে ফিরে গিয়ে সে কটাক্ষ তাঁর দিকেই ফিরিয়ে দিল তৃণমূল কংগ্রেস!
ভোটের আগে রাজ্য জুড়ে জনসংযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘দিদির দূত’ কর্মসূচি শুরু করেছে রাজ্যের শাসক দল। সেখানে বিভিন্ন জেলায় গিয়ে রাস্তা নিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন ‘দিদির দূতে’রা। পূর্ব মেদিনীপুরে এসেও রাস্তা নিয়ে সমস্যার কথা শুনেছিলেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। ঘটনাচক্রে, রাজ্য সরকারের তরফে পরবর্তী-কালে ‘পথশ্রী’ এবং ‘রাস্তাশ্রী’ প্রকল্প চালু হয়েছে। মূলত গ্রামীণ রাস্তা সংস্কারের উপরেই জোর দেওয়া হয়েছে এই প্রকল্পে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আজ, সোমবার চার দিনের জেলা সফরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে রবিবার সেই রাস্তা নিয়েই মুখ্যমন্ত্রীকে খোঁচা দিলেন শুভেন্দু। এগরা-২ ব্লকের শ্যামহরিবাড় গ্রামে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এ দিন গিয়েছিলেন শুভেন্দু। বৃষ্টির পরে দীর্ঘ দেড় কিলোমিটার মোরাম রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে গিয়েছিল। অনুষ্ঠানের শেষে গাড়িতে ওঠার সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফর নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘এলে আসবেন। ওঁকে (মুখ্যমন্ত্রী) রাস্তাটা দেখাতে নিয়ে যান!’’
ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ দিন শুভেন্দু যেখানে গিয়েছিলেন, সেই বাসুদেবপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তাঁর পৈতৃক ভিটে। বাম জমানায় শুভেন্দুর বাবা শিশির অধিকারী এগরার বিধায়ক হয়েছিলেন। তার পরে ২০১১ সাল থেকে একটানা এগরা বিধানসভা তৃণমূলের দখলে। সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতও তৃণমূলের দখলে রয়েছে। তাই রাস্তার অনুন্নয়নকে শুভেন্দু সামনে আনতে চেয়েছিলেন বলে মত রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের। বিরোধী দলনেতা এ দিন মন্তব্য করেছেন, ‘‘জেলায় আসছেন (মুখ্যমন্ত্রী। এক বার গ্রামে গিয়ে রাস্তাগুলো দেখে আসুন।’’ যদিও শুভেন্দুর এই কটাক্ষ তাঁকে ফিরিয়ে দিতে দেরি করেনি তৃণমূল। কুণাল বলেন, ‘‘শুভেন্দুই তো দীর্ঘ দিন পূর্ব মেদিনীপুর চালাতেন। তিনি যদি চাইতেন, সমস্ত রাস্তাঘাট সোনা দিয়ে বাঁধিয়ে রাখতে পারতেন! এখন সাধারণ মানুষের কাছে আর কৈফিয়ত দিতে হত না।’’
রাজনৈতিক চাপানউতোরের মাঝে শুরু হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফর। জেলা প্রশাসন সূত্র অনুযায়ী, আজ, সোমবার দুপুরে হেলিকপ্টারে এসে খেজুরির ঠাকুরনগরের প্রশাসনিক জনসভায় যোগ দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পরে আকাশ-পথেই দিঘার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা তাঁর। সেখানে রাত্রিবাস করার কথা রয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের দু’টি সাংগঠনিক জেলা নিয়ে একটি সম্মেলন হবে কাল, মঙ্গলবার। পরের দিন দিঘায় নির্মীয়মাণ জগন্নাথ মন্দিরের কাজ পরিদর্শন করার কথা তাঁর। এর পরে ৬ এপ্রিল তাঁর কলকাতা ফিরে যাওয়ার কথা।
উপকূলবর্তী পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন জায়গায় এ দিন বিকালে ঝিরঝির বৃষ্টি হয়েছে। আকাশ কালো মেঘে ঢাকা ছিল দীর্ঘ সময় জুড়ে। তবে ঠাকুরনগরে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক জনসভার মঞ্চ এবং দিঘাতে দলীয় কর্মী সম্মেলনের জন্য মঞ্চ বাঁধার কাজ চলে জোর কদমে। ঠাকুরনগরে প্রশাসনিক জনসভায় সাধারণ মানুষের বসার জন্য তিনটি শেড বানানো হয়েছে। সেখানে অস্থায়ী হেলিপ্যাড বানানোর কাজও সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে।