ফাইল চিত্র।
আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে যেমন দুর্গাপুজো হয়, ঠিক সেই সময় মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জের ধুসরিপাড়ায় দেবী পদ্মার ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত পুজো হয়ে আসছে দীর্ঘ কাল ধরে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রায় তিনশো বছরেও আগে এই পুজো শুরু হয়। কিন্তু পদ্মার ভাঙন অব্যাহত ছিল। সরতে সরতে সেই এলাকার মানুষ এখন গঙ্গার ধারে এসেছেন। এখানেও গঙ্গা গ্রাস করছে বসতবাটি, চাষের জমি। তবু পদ্মার নামেই গঙ্গার ধারে বিশাল এক মন্দির গড়া হয়েছিল। প্রতি বছর সেই মন্দিরেই পুজো হত। সামনে বসত মেলা। যেখানে থাকত না জাতি বা ধর্মের কোনও ভেদ। তার পরে গঙ্গার ভাঙন গ্রাস করে গ্রামের শতাধিক বাড়ি। সেই সঙ্গে পদ্মার মন্দিরটিও গত বছর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। গ্রামের মানুষের বাড়ির সঙ্গে আসবাবপত্রও গঙ্গায় চলে যায়। অনেকে এখন থাকেন খোলা আকাশের নীচে একটি ত্রিপল খাটিয়ে। তবুও অবশিষ্ট গ্রামের এক জায়গায় নতুন করে থান নির্মাণ করে পুজো হচ্ছে এ বারও।
স্থানীয় বাসিন্দা তরুণ সরকার বলেন, ‘‘পদ্মা নদীর ধারে মা পদ্মা দেবীর সুচনা হয়েছিল পদ্মা নদীর ভাঙনের হাত থেকে বাঁচার জন্য। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি। তবে এ পুজো কে বা কারা শুরু করেছিলেন, তা জানা যায়নি। কিন্তু সারা বাংলায় যখন দেবী দুর্গার আরাধনা হয়, তখন একই সময়ে একই দিনে পঞ্চমী থেকে দশমী মা পদ্মার পুজো হয়।’’ এই পুজোয় অন্য জেলার মানুষও আসেন। যদিও করোনা আবহে গত বছর থেকে অনেক নিয়মের পরিবর্তন করতে হয়েছে। মেলা বন্ধ। পুজোয় অঞ্জলি দেওয়া হবে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে।
এই গ্রামের বাসিন্দা প্রবীণ সামিম আখতার বললেন, ‘‘মা পদ্মার পুজোয় শুধু যে হিন্দুরাই থাকতেন, তা নয়। এ পুজোয় শামিল হন সব ধর্মের মানুষ। মেলার ক’টা দিন আমরা থাকতাম স্বেচ্ছাসেবক। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে, তার জন্য আমরা থাকতাম সজাগ।’’ ইব্রাহিম শেখ বলছেন, ‘‘প্রশান্ত যখন জিলিপি নিয়ে মেলার এক কোণে গিয়ে বসত, আমরা দৌড়ে গিয়ে কেড়ে নিয়ে সবাই মিলে খেতাম। সে দিন ছিল মিলনের দিন। আমরা আজও এক সঙ্গে যেমন ছিলাম, তাই থাকতে চাই।’’ কিন্তু ভাঙন বহু মানুষের সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে। সামিম বলেন, ‘‘পুজোর ক’টা দিন যে সব ভুলে আনন্দে মেতে থাকব, তারও উপায় নেই। নদী কখন কী করবে, কেউ জানে না।’’