দায়িত্ব পেয়েই কাজে নামতে তৈরি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
বয়েস সবে ৪২। কিন্তু এর মধ্যেই একের পর এক উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক উত্থানের ধারা বজায় রেখে চলেছেন ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার থেকে তাঁর পরিচয়, তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি। এতদিন এই দায়িত্ব সামলানো দোলা সেন একই সংগঠনের সর্বভারতীয় সভাপতি হয়েছেন। দায়িত্ব পাওয়ার ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই ঋতব্রত জানালেন, তিনি কাজ শুরু করে দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই দোলা-সহ তৃণমূলের যে নেতারা বিভিন্ন সময়ে শ্রমিক সংগঠন সামলেছেন তাঁদের পরামর্শ নেওয়ার পালা চলছে। কথা বলেছেন প্রাক্তন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের সঙ্গেও। ঋতব্রত বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভরসা আমার উপরে রেখেছেন তাতে আমি কৃতজ্ঞ। এখন আমার দায়িত্ব তাঁদের ভরসার মর্যাদা দেওয়া। আমি ঠিক করেছি, আগামী দিনে দলের এই শাখাকে ৩৬৫ দিনের সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলব। এর জন্য মলয় ঘটক, সুব্রত মুখোপাধ্যায় থেকে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের মতো অভিজ্ঞদের পরামর্শ নেব।’’ ডানপন্থী সুব্রত, শোভনদেবদের দেখানো পথে চলতে চাওয়া ঋতব্রত অবশ্য ‘বাম’ শ্রমিক নেতাদের থেকে কোনও শিক্ষা নিতে চান না।
শ্রমিক সংগঠনে কাজ করার পুরনো অভিজ্ঞতা অবশ্য রয়েছে ঋতব্রতর। সিপিএম-এর প্রাক্তন রাজ্যসভা সাংসদ একটা সময়কোনও পদে না থাকলেও সিটু-র জন্য বছর খানেক কাজও করেছেন। সেটা এসএফআই-এর রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব শেষ করার পরে পরেই। তবে সেই সময়ের অভিজ্ঞতা নয়, সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণকেই কাজে লাগাতে চাইছেন বামপন্থী ঋতব্রত। তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি মমতাদি নিজেও একজন বামপন্থী। আসলে বামপন্থা সিপিএম-এর একক সম্পত্তি ভাবাটাই ভুল। তৃণমূলের হয়ে বড় সময় আমি উত্তরবঙ্গে কাজ করেছি। কাছ থেকে দেখেছি চা বাগান শ্রমিকদের সমস্যা। একই সঙ্গে দেখেছি পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে বিকল্পের পথ দেখিয়েছে তা নিয়ে শ্রমিকদের আগ্রহ। আমি চাইব, সংগঠিত ক্ষেত্রের পাশাপাশি অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা হোক। ডেলিভারি বয় থেকে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের কর্মীদের স্বার্থ রক্ষা। সকলের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির প্রতিবাদ এবং দাবি আদায় হবে আইএনটিটিইউসি-র লক্ষ্য।’’
উত্তরবঙ্গে দলের হয়ে কাজ করার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আইএনটিটিইউসি-র নতুন রাজ্য সভাপতির বক্তব্য, ‘‘২০১১ সালে চা শ্রমিকদের মজুরি ছিল ৬৭ টাকা। সেটা বাড়তে বাড়তে এখন ২০২ টাকা। এ ছাড়াও বিনামূল্যে রেশন, বিনামূল্যে ওষুধ চালুর থেকেও বড় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চা সুন্দরী’ প্রকল্প।’’ এটিকে মমতার ‘বিপ্লবী প্রকল্প’ বলে উল্লেখ করে ঋতব্রত বলেন, ‘‘বিকল্প সমাধান মানে শুধু মুখে বলা নয়। হাতে কলমে করে দেখানো। সেটাই করেছে রাজ্য সরকার। সবার জন্য ৩৯৩ বর্গ ফুটের বাড়ি। তাতে দু’টো করে ঘর, বারান্দা, রান্নাঘর, শৌচাগার। কিছুটা করে ফাঁকা জমি, বিনামূল্যে বিদ্যুৎ ও পানীয় জল। রাজ্যে ৩ লক্ষ চা বাগানের কাজ করা শ্রমিক পরিবার এই সুবিধা পাবে।’’
উত্তরবঙ্গের একটি চা বাগানে ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
ঋতব্রত সব সময়েই ধোপদুরস্ত থাকতে পছন্দ করেন। সিপিএম-এ থাকার সময় ‘ব্র্যান্ডেড’ পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগও উঠেছিল। এখনও পোশাক নিয়ে সচেতন ঋতব্রত কেমন করে শ্রমিকদের মধ্যে গিয়ে কাজ করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে পুরনো অভিযোগ আসলে বৃহত্তর চক্রান্তের অঙ্গ ছিল। আমি বরাবরই যেখানে যেমন, সেখান তেমন থাকতে ভালবাসি। বরাবর খাদির পাজামা, পাঞ্জাবি পরি। তখন এবং এখন একই দোকান থেকে খাদির কাপড় কিনি। আমাকে যাঁরা চা বাগানে শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ করতে দেখেছেন তাঁরা বলতে পারবেন আসল আমিটা কেমন।’’