রিষড়ায় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশ টহল দিচ্ছে। নিজস্ব চিত্র।
রাতভর অশান্তির পর মঙ্গলবার সকালেও থমথমে পরিস্থিতি রিষড়ায়। সকাল থেকে এলাকায় টহল দিচ্ছে পুলিশ। সাধারণ মানুষের উদ্বেগ এখনও কাটেনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে প্রশাসনের তরফে।
হুগলির রিষড়া স্টেশনের কাছে সোমবার রাতে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়। হাওড়া-বর্ধমান শাখায় প্রায় তিন ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল রাতে। যে কারণে সমস্যায় পড়েন হাজার হাজার নিত্যযাত্রী। রাত ১টার পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই রিষড়া এলাকায় নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বাড়তি পুলিশবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। এলাকায় ঘন ঘন টহল দিচ্ছে তারা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চন্দননগর পুলিশ, হুগলি গ্রামীণ পুলিশের পাশাপাশি হাওড়া সিটি পুলিশকেও ডাকা হয়েছে। ছোটখাটো দোকানপাট সকালের দিকে খুলতে দেখা যায়নি। এলাকায় জারি ১৪৪ ধারা।
তবে নিত্যযাত্রীরা রাস্তায় বেরিয়েছেন। ট্রেন চলাচল এখনও পর্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে। রিষড়ায় গত দু’দিন ধরে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ফলে রিষড়ায় বসে অনলাইনের কোনও কাজ করতে পারছেন না সেখানকার মানুষ।
সোমবার রাতের পরিস্থিতি যাঁরা চাক্ষুষ করেছেন, তাঁরা সকালেও আতঙ্কিত। এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, রাতে ঘন ঘন বোমার আওয়াজ শুনতে পেয়েছেন তাঁরা। আগুনও জ্বলতে দেখেছেন। ভয়ে রাস্তায় বেরোতে সাহস করেননি কেউ। দোকানপাট রাতেও বন্ধ ছিল। সামগ্রিক এই অশান্ত পরিবেশে পুলিশকেই আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আবেদন জানাচ্ছেন রিষড়াবাসী। প্রশাসনের প্রতি তাঁদের অনুরোধ, কড়া হাতে দুষ্কৃতীদের দমন করা হোক। সোমবার রাতের মতো পরিস্থিতি যেন আগামী দিনে আর কখনও না তৈরি হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে পুলিশকেই।
রিষড়ার জনৈক বাসিন্দার কথায়, ‘‘রাতে ভয়ে আমরা কেউ ঘুমোতে পারিনি। পরিস্থিতি খুবই খারাপ। কোথাও থেকে প্রচুর লোক এসেছিল। পাথর, শিশি, বোতল নিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। ঘরের ভিতর থেকে বোমের শব্দ পেয়েছি। রাত ৯টা থেকে শুরু করে প্রায় ৩টে পর্যন্ত অশান্তি চলেছে।’’
স্থানীয় এক দোকানদারের কথায়, ‘‘পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল শুনলাম। রিষড়ায় এই অশান্তি আগে কখনও দেখিনি। এখানে সকলে মিলেমিশে থাকে। এই অযাচিত অশান্তি কখনওই কাম্য নয়। আমরা সকলে শান্তি চাই। পুলিশ দোকান খুলতে আপাতত বারণ করেছে। আমাদের এক দিনের বাজার নষ্ট হল। ভয়ে আছি।’’
সোমবার রাতে রিষড়া স্টেশনের কাছে চার নম্বর রেল গেট এলাকায় ব্যাপক বোমাবাজি হয় বলে অভিযোগ। দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবে বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচল। অশান্তির কারণে যাত্রী নিরাপত্তার স্বার্থে রিষড়া স্টেশনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় একটি আপ ব্যান্ডেল লোকালকে। ফলে বহু যাত্রী দুর্ভোগের মুখে পড়েন। রিষড়ায় ট্রেন আটকে যাওয়ায় হাওড়া-বর্ধমান শাখায় প্রতিটি স্টেশনে যাত্রীরা সমস্যায় পড়েন। রাত ১০টা নাগাদ হাওড়ায় ঘোষণা করা হয় বর্ধমান শাখায় আপাতত ট্রেন চলবে না। বেশ কয়েকটি ট্রেন বাতিলও করে দেওয়া হয়। ট্রেন পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় এবং রেলের তরফ থেকেও কোনও স্পষ্ট উত্তর না পেয়ে হাওড়া স্টেশনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন যাত্রীদের একাংশ। প্রায় তিন ঘণ্টা পর রাত ১টার পর থেকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয় পরিষেবা।