(বাঁ দিকে) শোভন চট্টোপাধ্যায়। (মাঝখানে) সেই হোয়াট্সঅ্যাপ স্টেটাস। শোভন-পুত্র ঋষি চট্টোপাধ্যায় (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
প্রকাশ্য হোয়াট্সঅ্যাপ স্টেটাস লিখে পিতা শোভন চট্টোপাধ্যায়কে আক্রমণ করলেন পুত্র ঋষি চট্টোপাধ্যায়। বুধবার নিজের হোয়াট্সঅ্যাপ স্টেটাসে বাবাকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন তিনি। শোভন-পুত্র লিখেছেন, ‘‘এক জন মহিলা তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় ভুল অভিযোগ খণ্ডনের জন্য লড়াই করছেন, নিজের পরিবারকে রক্ষা করতে আইনি লড়াই করছেন এমন এক জনের বিরুদ্ধে, যাঁকে তিনি ২২ বছর ধরে অন্ধ ভাবে নিজের স্বামী বলে জেনেছেন।’’ এ ক্ষেত্রে শোভনের নাম উল্লেখ না করে ঋষি লিখেছেন, ‘‘জনসমক্ষে এক জন মহিলার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হয়, তা-ও জানেন না!’’ বস্তুত, তার ঠিক আগের বাক্যে শোভনকে খানিক ছাপার অযোগ্য ভাষাতেই আক্রমণ করেছেন ঋষি।
এর পর অবশ্য নাম করেই পিতাকে কটাক্ষ করেছেন পুত্র ঋষি। তিনি লিখেছেন, ‘‘কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে কুর্নিশ, যিনি এখনও নিজের পড়ন্ত যৌবনে বান্ধবী খুঁজে বেড়াচ্ছেন। যাঁরা তাঁর অশালীনতাকে রক্ষা করতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করছেন।’’
তাঁর হোয়াট্সঅ্যাপ স্টেটাসের ওই বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে ঋষির মোবাইলে একাধিক বার ফোন করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত, যাঁরা ঋষির যোগাযোগ তালিকায় রয়েছেন, তাঁরাই ওই স্টেটাস দেখতে পাবেন। ফলে বার্তাটিকে এক প্রকার ‘প্রকাশ্য’ই বলা চলে। তবে তাঁর বক্তব্য সম্পর্কে তাঁর হোয়াট্সঅ্যাপ নম্বরে বার্তা পাঠানো হলেও জবাব দেননি ঋষি। ফোনের জবাব দেননি শোভনও।
শোভন-পুত্র ঋষি চট্টোপাধ্যায়ের হোয়াট্সঅ্যাপ স্টেটাস। ছবি: সংগৃহীত।
২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে বেহালা পর্ণশ্রীর বাসভবন ছেড়ে শোভন চলে যান গোলপার্কের একটি আবাসনে। সেই থেকেই আর পরিবারের সঙ্গে থাকেন না কলকাতার প্রাক্তন মেয়র। কিন্তু শোভনের স্ত্রী (এখনও বিবাহবিচ্ছেদ হয়নি) রত্না চট্টোপাধ্যায় তাঁর ছেলে এবং মেয়েকে নিয়ে পর্ণশ্রীর বাড়িতেই থাকেন। বাবা-মায়ের দ্বন্দ্বে বরাবর মায়ের পাশেই থেকেছেন ঋষি। ২০২১ সালের মে মাসে যখন নারদ মামলায় শোভনকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই, তখনও মায়ের কথামতো বেশ কয়েক বার বাবার পাশে দেখা গিয়েছিল ঋষিকে। কিন্তু সেই ঋষিই এ বার সরাসরি পিতাকে আক্রমণ করেছেন।
উল্লেখ্য, গত শনিবার তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ মামলা ঘিরে আলিপুর আদালত চত্বরে প্রবল বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েছিলেন শোভন-স্ত্রী রত্না। সেখানে ছিলেন শোভনের বর্তমান বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। শোভন-রত্নার বচসা থামাতে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল আদালত চত্বরে উপস্থিত পুলিশকর্মী এবং আইনজীবীদের। শোভন-রত্নার বচসার ভিডিয়োটিও ‘ভাইরাল’ হয়েছিল সমাজমাধ্যমে। যদিও সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। অনেকেই মনে করছেন, শনিবারের ঘটনার প্রেক্ষিতেই ঋষি ওই স্টেটাস দিয়েছেন। তাঁর এক হিতৈষীর দাবি, মায়ের প্রতি বাবার ব্যবহার দেখেই ঋষি বাবার উদ্দেশে ওই সব কথা লিখেছেন।
প্রসঙ্গত, শোভনের অনুপস্থিতিতে পরিবারের যাবতীয় দায়িত্ব এখন রত্নার কাঁধেই। এমনকি, শোভনের যাবতীয় জনপ্রতিনিধিত্বের দায়িত্বও রত্নাকে অর্পণ করেছেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা পুরসভার ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর হওয়ার পাশাপাশি রত্না এখন শোভনের ছেড়ে-যাওয়া বেহালা পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়কও। ওই ওয়ার্ডটি থেকে জিতেই কলকাতার মেয়র হয়েছিলেন শোভন। আর বেহালা পূর্ব থেকে জিতে হয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী।