ছবি: সংগৃহীত।
করোনা-কালে টানা ছ’মাস বন্ধ খড়্গপুর আইআইটি। ক্যাম্পাসে সংক্রমণ ছড়ানোয় সপ্তাহ খানেক ধরে প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ বন্ধের নির্দেশিকার মেয়াদ বেড়েছে। বন্ধ রয়েছে প্রতিষ্ঠানের সব গবেষণাগার। থমকে হাজার-হাজার পড়ুয়ার গবেষণা। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ থেকে পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গবেষণার কাজে ব্যবহৃত কোটি-কোটি টাকার যন্ত্রপাতিও ক্ষতির মুখে বলে অভিযোগ একাংশ পড়ুয়া ও অধ্যাপকের।
অনলাইনে ক্লাস নিয়ে বি-টেক পড়ুয়াদের সঙ্কট সামাল দেওয়া গিয়েছে। তবে বিপাকে পড়েছেন গবেষক পড়ুয়ারা। গবেষণা তো আর অনলাইনে হবে না! তাই বারবার গবেষণাগার খুলে গবেষণার কাজ চালুর দাবি তুলেছেন তাঁরা। দিন সাতেক আগেই ১৬০ জন গবেষক পড়ুয়া প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তার কাছে এই মর্মে চিঠিও দিয়েছেন। যদিও কর্তৃপক্ষ নিজেদের অবস্থানে অনড়। ৬ সেপ্টেম্বর থেকে আইআইটি পুরোপুরি বন্ধের যে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল তার মেয়াদ বাড়িয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। গবেষক পড়ুয়া ও অধ্যাপকদের মতে, এ ভাবে দীর্ঘদিন গবেষণাগার বন্ধ থাকায় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, ধুলো নিয়ন্ত্রণ ও যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। কোটি-কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে নমুনা থেকে পর্যবেক্ষণে থাকা উদ্ভাবন। যদিও খড়্গপুর আইআইটির রেজিস্ট্রার ভৃগুনাথ সিংহ বলছেন, “গবেষণাগারে রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হলে অধ্যাপকদের আমরা অনুমতি দিচ্ছি। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের কাজও হচ্ছে। কিন্তু যত ক্ষণ না পরিস্থিতি ঠিক হচ্ছে তত ক্ষণ তো আমরা গবেষক পড়ুয়াদের ডাকতে পারব না।”
অধ্যাপক থেকে গবেষক পড়ুয়াদের অবশ্য দাবি, দেশে লকডাউন শুরুর আগেই ক্লাস বন্ধের পাশাপাশি গবেষণাও বন্ধ করার নির্দেশ জারি করেন আইআইটি কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৬ মাস গবেষণার কাজ বন্ধই রয়েছে। ক্ষতির মুখে পড়ছে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োটেকনোলজি, মেডিক্যাল সায়েন্স টেকনোলজি, বায়োসায়েন্সের মতো বিভাগের গবেষণা। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক অধ্যাপকের কথায়, “সারা দেশে বিভিন্ন আইআইটি, বেঙ্গালুরু আইআইএসসি, কলকাতার আইএসিএসের মতো প্রতিষ্ঠানে গবেষণা বন্ধ হয়নি। শুধু আমাদের খড়্গপুর আইআইটিতে অপরিকল্পিত ভাবে সবকিছু বন্ধ করে রাখা হয়েছে।” ওই বিভাগের আরও এক অধ্যাপক বলেন, “আমরা গবেষণাগারে যাচ্ছিলাম। যতটুকু সম্ভব রক্ষণাবেক্ষণ করছিলাম। কিন্তু ৬ সেপ্টেম্বর থেকে গবেষণাগার একেবারে বন্ধ। যন্ত্রও বন্ধ হয়ে রয়েছে।”
বায়োসায়েন্সের এক গবেষক ছাত্রীর মতে, অনলাইনে তো গবেষণা সম্ভব নয়। আর এ সব নমুনা নষ্ট হয়ে গেলে আবার সংগ্রহ খুব কঠিন। ক্ষতি স্বীকার করে নিয়েই রেজিস্ট্রার ভৃগুনাথ সিংহ বলেন, “গবেষণা যখন হচ্ছে না তখন প্রতিষ্ঠানেরও ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু আগে জীবন, তার পরে গবেষণা।”