ফাইল চিত্র
ক্যানসার হলে রোগীর কাছে সেই খবর লুকিয়ে রাখার প্রবণতা রয়েছে বহু পরিবারে। যাতে রোগী মানসিক ভাবে ভেঙে না-পড়েন। কিন্তু, কোভিড ১৯-এ সে উপায় নেই। পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসা মাত্রই তা ‘ব্রেকিং নিউজ’। এত দিন আশপাশে সংক্রমণের খবর শুনতে থাকা কোনও মানুষ যখন জানতে পারেন তিনিও একই রোগে আক্রান্ত, তখন তাঁর মানসিক গঠনই সাময়িক ভাবে বদলে যায় বলে জানাচ্ছেন মনোবিদদের একটা বড় অংশ। কারণ তার পর থেকে যে ঘটনাগুলি ঘটে, কোনওটির উপরেই রোগীর কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
এই পরিস্থিতিতেই কলকাতা-সহ এ রাজ্যের নাগরিকদের মানসিক ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ সংক্রমণের প্রভাব নিয়ে গবেষণা শুরু করতে চলেছে মানসিক চিকিৎসার উৎকর্ষকেন্দ্র ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি (আইওপি)’। সোমবার বিষয়টি নিয়ে আইওপি-তে একটি অভ্যন্তরীণ বৈঠক হয়। সেখানে প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, সব কিছু ঠিক থাকলে দিন কয়েকের মধ্যেই এই গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। আইওপি-র অধিকর্তা প্রদীপ সাহা বলেন, ‘‘কোয়রান্টিন কেন্দ্র বা কোভিড হাসপাতালে ভর্তি রোগী অথবা যাঁরা ইতিমধ্যেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, তাঁদের কাছ থেকে কী ভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হবে, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে স্বাস্থ্যকর্মীদের। সব মিলিয়ে মানসিক স্বাস্থ্যের উপরে কোভিড ১৯-এর প্রভাব সংক্রান্ত একটা প্রামাণ্য নথি তৈরি করতে চাইছি আমরা।’’
আইওপি-র গবেষকদের বক্তব্য, ১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লুয়ের পরে সার্স-কোভ ২-এর সংক্রমণ। মাঝখানের ১০২ বছরে একাধিক সংক্রামক রোগ হলেও সার্স-কোভ ২-এর মতো বিশ্বব্যাপী বিস্তার কোনও ক্ষেত্রে হয়নি। যাতে সোমবার রাত পর্যন্ত সারা বিশ্বের ২১২টি দেশ-অঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৪৮ লক্ষ মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা তিন লক্ষেরও বেশি। ভারতে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ৯৬,১৬৯। মৃতের সংখ্যা ৩০২৯। ফলে এই বিপর্যয় নিয়ে আইওপি সমসাময়িক মানসিক স্বাস্থ্যের একটি এনসাইক্লোপিডিয়া তৈরি করতে চাইছে।
এ দিনের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, মূলত তিন ভাগে এই গবেষণা করা হবে। প্রথমত ‘সাইকোলজিক্যাল মর্বিডিটি’, অর্থাৎ মানসিক অবসাদ, উদ্বেগ, অসহায়তা-সহ একাধিক মানসিক বিপন্নতায় কারা আক্রান্ত, সেই সংক্রান্ত নমুনা-সমীক্ষা করা হবে। দ্বিতীয়ত, কোভিড ১৯-এর আগে ‘স্ক্রিন টাইম’, অর্থাৎ মোবাইল, টিভি, ইন্টারনেটে আসক্ত ছিলেন মূলত ১৪-২১ বছর বয়সিরা। কিন্তু লকডাউনের কারণে ‘স্ক্রিন টাইম’-এর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছেন সব বয়সের মানুষ। তার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব কী হতে পারে, সে নিয়েও তথ্য সংগ্রহ করা হবে। আর তৃতীয় ভাগ, যাকে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন আইওপি কর্তৃপক্ষ, তা হল ইতিমধ্যেই যাঁরা সার্স-কোভ ২-এ আক্রান্ত হয়েছেন, যাঁরা এখনও কোয়রান্টিন কেন্দ্র বা কোভিড-১৯ চিকিৎসাকেন্দ্রগুলিতে রয়েছেন এবং যাঁরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন অথচ এই ঘটনার রেশ এখনও তাঁদের মনে রয়ে গিয়েছে, তাঁদের মানসিক অবস্থা নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা। প্রতিষ্ঠানের এক গবেষকের কথায়, ‘‘এই সমীক্ষা মানসিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন দিশা দেখাবে বলেই আমাদের আশা।’’
আরও পড়ুন: কেন্দ্রের আর্থিক ঘোষণা ‘অশ্বডিম্ব’: মমতা