নারদ স্টিং অপারেশনের ভিডিও ফুটেজ খাঁটি কি না, কলকাতা হাইকোর্টকে তা জানিয়ে দিল চণ্ডীগড়ের কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি। কিন্তু হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ শুক্রবার সেই রিপোর্ট প্রকাশ করেনি। প্রধান বিচারপতি শুধু জানিয়েছেন, ওই রিপোর্টের কিছু ইতিবাচক ও কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, ওই মামলার সঙ্গে যুক্তদের আইনজীবীরাই কেবল মাত্র আবেদন করে রিপোর্টের প্রতিলিপি পেতে পারেন। একই সঙ্গে আদালত জানিয়েছে, নারদ মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ১৯ অগস্ট। সেই সময় পর্যন্ত নারদ-কর্তা ম্যাথু স্যামুয়েলের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাতে পারবে না কলকাতা পুলিশ।
নারদ স্টিং অপারেশন নিয়ে মার্চ মাসে তিনটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হওয়ার পরে প্রধান বিচারপতি বিভিন্ন শুনানিতে একাধিক বার বলেছেন, ফুটেজ খাঁটি কি না, সেটা জানা জরুরি। ফুটেজ খাঁটি হলে সমাজের পক্ষে বিপজ্জনক। খাঁটি না হলেও বিপজ্জনক। প্রথম দফায় হাইকোর্টের এক রেজিস্ট্রার মারফত হায়দরাবাদের কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে ফুটেজ পাঠানো হয়। কিন্তু তারা জানিয়ে দেয়, ওই ফুটেজ যাচাইয়ের পারদর্শিতা তাদের নেই। তারাই সুপারিশ করে, চণ্ডীগড়ের কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির ওই দক্ষতা রয়েছে। কলকাতা হাইকোর্ট চাইলে সেখানে ফুটেজ পাঠাতে পারে। গত ২৪ জুন ডিভিশন বেঞ্চ চণ্ডীগড়ের ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির ডিরেক্টরকে নির্দেশ দেয়, ফুটেজ খাঁটি কি না যাচাই করে এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট পাঠাতে হবে।
এ দিন নারদ মামলার শুনানি ছিল। শুরুতেই হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জয়ন্ত কোলে চণ্ডীগড় থেকে পাঠানো রিপোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে পেশ করেন। রিপোর্টটি পড়েন প্রধান বিচারপতি। তার পরে বলেন, রিপোর্টে কী রয়েছে, ডিভিশন বেঞ্চ তা জানাচ্ছে না। বিষয়টি স্পর্শকাতর। আদালত এ নিয়ে জনতার দ্বারা প্রভাবিত (পাবলিক ট্রায়াল) হতে চায় না। রিপোর্ট মুখবন্ধ খামে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে থাকছে। মামলার সঙ্গে যুক্তদের আইনজীবীরা রেজিস্ট্রারের কাছে রিপোর্টের প্রতিলিপি পেতে আবেদন করবেন। রিপোর্ট পড়ে হলফনামা দাখিল করবে সব পক্ষ।
মামলার আবেদনকারীদের অন্যতম আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, রিপোর্টে কী রয়েছে, তা তিনি জানতে চান না। তিনি চান, নিরপেক্ষ কোনও সংস্থাকে দিয়ে ঘুষ-কাণ্ডের সঠিক তদন্ত করাক আদালত। ম্যাথুর আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ বলেন, ‘‘কলকাতা পুলিশ কিন্তু আমার মক্কেলকে বার বার নোটিস পাঠিয়ে তলব করছে। তার কী হবে? আদালতের নির্দেশ মতো আমার মক্কেল তাঁর বক্তব্য হলফনামার আকারে আদালতে জমাও দিয়েছেন।’’ এর পরে প্রধান বিচারপতি আদালতে হাজির রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) জয়ন্ত মিত্রের উদ্দেশে বলেন, ‘‘এই অবস্থায় তদন্ত করা যাবে না।’’ এজি বলেন, ‘‘সমান্তরাল তদন্ত যে হচ্ছে না, হলফনামায় আমি তা ব্যাখ্যা করব।’’ ডিভিশন বেঞ্চ এজি ও মামলার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবীদের জানিয়ে দেয়, মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ১৯ অগস্ট। তত দিন ম্যাথুর বিরুদ্ধে তদন্ত করা যাবে না। ১৯ অগস্ট পর্যন্ত নারদ-তদন্তের জন্য ম্যাথুকে ডাকা যাবে না বলে হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে, তাকে স্বাগত জানিয়েছে বিরোধীরা। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘সরকার নির্লজ্জ! হাইকোর্টের এই রায়ে সরকার আবার ধাক্কা খেল।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘আমরা আগেই বলেছিলাম, নারদ-কাণ্ডের পুলিশি তদন্তের পিছনে অভিসন্ধি আছে।… সেই জন্যই এমন এক জন অফিসারকে দিয়ে এই তদন্ত করানো হচ্ছিল, যিনি সারদা কেলেঙ্কারির নথি লোপাট করে তদন্তকে কঠিন করে দিয়েছিলেন।’’