অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
মহত্মা গান্ধীর প্রয়াণদিবস এবং তাঁর নামাঙ্কিত ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পকে জুড়ে বাংলার প্রতি কেন্দ্রের ‘বঞ্চনা’র বার্তা দিলেন তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার এক্স হ্যান্ডলে দু’টি পোস্ট করেছেন অভিষেক। ‘নিজেকে খুঁজে পাওয়ার সর্বোৎকৃষ্ট উপায় হল অন্যের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা’—শুরুতেই গান্ধীজির এই বাণী উদ্ধৃত করেছেন অভিষেক। তার পরে লিখেছেন, ‘গান্ধীজির প্রভাব আমার এবং ভারতের যে কোনও বিবেকবান নাগরিকের উপর রয়েছে। তাঁর শিক্ষা আমায় যে কোনও বাঁকে অনুপ্রাণিত করে।’
দ্বিতীয় পোস্টে অভিষেক ১০০ দিনের কাজের প্রসঙ্গ টেনেছেন। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের পোশাকি নাম ‘মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি স্কিম’ (এমজিএনআরজিএস)। ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ লেখেন, ‘‘দুঃখজনক হল, তাঁর (গান্ধীজির) নামাঙ্কিত প্রকল্পেই আজ আমাদের শ্রমিকেরা শোষিত হচ্ছেন, বঞ্চিত হচ্ছেন!’ পাশাপাশিই অভিষেক লিখেছেন, ‘গান্ধীজির মৃত্যুবার্ষিকীতে আমি সেই বঞ্চিতদের লড়াইয়ে অবিচল থাকার অঙ্গীকার করছি।’
গত দু’বছর ধরেই তৃণমূল তথা রাজ্য সরকার বলে আসছে, ১০০ দিনের কাজের টাকা কেন্দ্র আটকে রেখেছে। বাংলার শাসকদলের আরও অভিযোগ, কাজ করানোর পরেও মজুরি আটকে রেখেছে দিল্লি। পাল্টা বিজেপির বক্তব্য, বাংলায় রেগার টাকায় বিপুল কারচুপি হয়েছে। নবান্ন হিসাব না দিলে কেন্দ্র নতুন করে টাকা দেবে কেন? সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীদের বক্তব্য, হিসাব দাও! টাকা পাও! তবে এখন আর বঞ্চনার অভিযোগ শুধু ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে আটকে নেই। আবাস যোজনা, গ্রাম সড়ক যোজনা নিয়েও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে তৃণমূল। সোমবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গ থেকে বলেছেন, ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কেন্দ্র টাকা না দিলে ২ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি ধর্নায় বসবেন।
এর আগে গত বছর মার্চ মাসে ওই বকেয়ার দাবিতেই রেড রোডে দু’দিন ধর্নায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তার পর গত অক্টোবরে অভিষেকের নেতৃত্বে দিল্লিতে গিয়ে ধুন্ধুমার বাধিয়েছিল তৃণমূল। কলকাতায় ফিরে এসে রাজভবনের সামনে টানা ধর্নাতেও বসেছিলেন তৃণমূলের সেনাপতি। তার পর সেই কর্মসূচি থেকেই অভিষেকের ঘোষণা ছিল, নভেম্বর থেকে ফের আন্দোলন শুরু হবে। কিন্তু নভেম্বরে সেই আন্দোলন হয়নি। দলশ্রুতি: তা নিয়ে অভিষেক খানিকটা ‘ক্ষুণ্ণ’ ছিলেন। সম্প্রতি তাঁর ‘গুটিয়ে থাকা’ নিয়ে যখন রাজ্য রাজনীতিতে বিস্তর আলোচনা হয়েছে, তখনও শোনা গিয়েছিল, অভিষেকের অনেকগুলি ক্ষোভের মধ্যে একটি হল, কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে তাঁর ‘আগ্রাসী আন্দোলন’ থামিয়ে দেওয়া। গত ২০ ডিসেম্বর সাংসদের নিয়ে মমতা গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করতে। সেখানে ঠিক হয়েছিল, কেন্দ্র ও রাজ্যের অফিসারেরা বসে হিসেব ও বকেয়া নিয়ে আলোচনা করবেন। কিন্তু সেই বৈঠক হলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত জট কাটেনি। সোমবার মমতার ধর্না হুঁশিয়ারির দিন অভিষেক ওই বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অভিষেক বলেছেন, ‘‘আমি তো ধর্না (রাজভবনের সামনে) চালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। তৃণমূল নেত্রীর নির্দেশে ধর্না তুলে নিই।’’ তার পরদিনই তিনি বঞ্চিতদের আন্দোলনে অবিচল থাকার কথা জানালেন। যাকে অনেকেই শাসকদলের অতি সাম্প্রতিক টানাপড়েনের আধারে ফেলে দেখতে চাইছেন। এই অংশের বক্তব্য, সমীকরণ কী হচ্ছে, তা ২ ফেব্রুয়ারি স্পষ্ট হলেও হয়ে যেতে পারে।