Suvendu Adhikari & Rahul Gandhi

কয়লা দিয়ে ‘স্টোভ’ জ্বলে? রাহুল না শুভেন্দু, কে ঠিক কে ভুল? খোঁজখবর করল আনন্দবাজার অনলাইন

কয়লা দিয়ে স্টোভ জ্বালানো হয়, রাহুলের এই মন্তব্য ‘ভুল’। কয়লা দিয়ে আর যাই হোক, স্টোভ জ্বলে না, এমনটাই মত শুভেন্দুর। কিন্তু ‘স্টোভ’ যে আসলে উনুন। বা উনুনের ইংরেজি যে ‘স্টোভ’, তা কেউ ভেবে দেখছেন না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:৪৬
Share:

(বাঁ দিকে) রাহুল গান্ধী। শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

স্টোভ কিসে জ্বলে? কেরোসিন তেলে না কয়লায়? এই মুহূর্তে এটাই সবচেয়ে জ্বলন্ত প্রশ্ন!

Advertisement

কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী সম্পর্কে বেনজির কটু শব্দ ব্যবহার করে আপাতত চাপে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কারণ, যে শব্দটি শুভেন্দু ব্যবহার করেছেন, সেটিকে ‘অশ্লীল’ বলেই ধরা হয় বাংলা ভাষায়। যদিও শুভেন্দুর দাবি, তিনি কোনও ‘অসংসদীয়’ ব্যবহার করেননি। ‘বোকা’ শব্দের চলতি রূপ ব্যবহার করেছেন। তবে শুভেন্দুর মন্তব্যের পরেই সরগরম রাজ্য-রাজনীতি। কংগ্রেস তো বটেই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলও বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। কংগ্রেস রাজ্য জুড়ে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে এফআইআর করছে। মঙ্গলবার আলিপুর থানায় শুভেন্দুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে কংগ্রেস।

এখন প্রশ্ন হল— ‘স্টোভ’ কয়লায় জ্বলে রাহুল কি ভুল বলেছেন? উত্তর হল, না। রাহুল ভুল বলেননি। তার দু’টি কারণ আছে। প্রথমত, কয়লা দিয়ে স্টোভ সত্যিই জ্বালানো যায়। কয়লা দিয়ে স্টোভ জ্বালিয়ে চা তৈরি করতে কোনও বাধা নেই। অনলাইনের বিভিন্ন সাইটে ঢুঁ মারলেই চোখে পড়বে ‘চারকোল স্টোভ’-এর হরেক ধরন। অনলাইনে ৮৫০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যেই এই ধরনের স্টোভ পাওয়া যায়। স্টেনলেস স্টিল দিয়ে তৈরি হয় এই ধরনের ‘স্টোভ অভেন’। যা বাড়ির বাইরেও নিয়ে যাওয়া যায়। মূলত বাড়ির বাইরে গিয়ে রান্না করার জন্যই এই ধরনের স্টোভ ব্যবহার করা হয়। বাড়ির বাইরে ‘বারবিকিউ পার্টি’ হোক বা কোনও পিকনিক— এই ধরনের স্টোভ ব্যবহারের সুবিধা অনেক। এই স্টোভ দু’ধরনের। কয়লা দিয়ে রান্না করলে ধোঁয়া হয়। তবে ধোঁয়া একেবারেই হবে না, এমন কায়দারও ‘চারকোল স্টোভ’ বাজারে পাওয়া যায়। তবে সেই ধরনের স্টোভের দাম একটু বেশি।

Advertisement

দ্বিতীয় বিষয়টি একেবারেই ভাষাসংক্রান্ত। বাংলায় ‘উনুন’ বা হিন্দিতে ‘চুল্‌হা’ শব্দের ইংরেজি হল ‘স্টোভ’। অর্থাৎ, উনুনে বা ‘চুল্‌হা’য় কাঠকয়লা দিয়ে রান্না হয়। রান্না করাই যায়। রাহুল ইংরেজিতে ‘স্টোভ’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ, তিনি উনুনের কথাই বলতে চেয়েছেন। সাধারণ ভাবে ‘স্টোভ’ বলতেই কেরোসিন এবং পলতে ব্যবহার করে খাবার বা চা তৈরির করার যন্ত্রের কথা মনে পড়ে। শুভেন্দুরও তা-ই মনে পড়েছে। সে কারণেই তিনি রাহুলকে ওই শব্দটি ব্যবহার করে আক্রমণ করেছেন। তলিয়ে দেখতে গেলে, ভুল করেছেন শুভেন্দুই। তবে সে ভুলও সকলেই আকছার করেন। যেমন ‘চকোলেট’কে ‘ক্যাডবেরি’ বলা হয়, ‘ফোটোকপি’ করার যন্ত্রকে ‘জ়েরক্স’ বলা হয়। আবার মাটি খোঁড়ার ‘আর্থমুভার’কে ‘জেসিবি’ বলা হয়। শেষে উল্লিখিত তিনটি ‘ক্যাডবেরি’, ‘জ়েরক্স’ এবং ‘জেসিবি’ হল বিশেষ ব্র্যান্ডের নাম। কিন্তু ওই নামেই সেগুলি সমধিক কথিত। ভুল হলেও।

বিতর্ক অবশ্য এ সব নিয়ে নয়। বিতর্ক হল শুভেন্দুর ব্যবহৃত শব্দের শ্লীলতা-অশ্লীলতা নিয়ে। শুভেন্দু যে শব্দটি ব্যবহার করেছেন, তা ব্যক্তিগত পর্যায়ে ব্যবহার করা হয়ে থাকে অনবরত। কিন্তু সেটি প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ বা সাংবাদিক বৈঠকে (অর্থাৎ, মাইক্রোফোনের সামনে) ব্যবহার করার চল নেই। হট্টগোল সে কারণেই।

চারদিকে এত হইচইয়ের মধ্যেও শুভেন্দু অবশ্য নির্বিকার। তাঁর বক্তব্য, “আমি কি অসংসদীয় শব্দ বলেছি? যাঁরা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, কী বলেছেন তাঁরা?” তিনি আরও বলেন, “সম্মানিত নেতা উনি। যিনি নিজেকে জাতীয় নেতা বলেও দাবি করেন। এত দিনের সাংসদ, নিশ্চয়ই তিনি নেতা। তিনি বলছেন সকালবেলা উঠে আমরা কী করি? স্টোভের উপর কয়লা দিয়ে চা বানাই। এটা কি বাস্তবসম্মত কথা? না বোকাদের কথা? বোকার মতো কথা বলেছেন বলে বোকাই বলেছি। এর সঙ্গে কোনও অশালীন বা অসংসদীয় শব্দ নেই। বোকাকে পশ্চিমবঙ্গে চলতি ভাষায় যা বলে, সেই শব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে। এতে কোনও ব্যক্তিগত আক্রমণ নেই। কোনও অসংসদীয় বক্তব্যও নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement