Nabanna

বিতর্ক উস্কে বঙ্গে দুই দফতরে পুনর্নিয়োগ

নতুন নিয়োগের দিক থেকে সরকারের মুখ ফিরিয়ে থাকার বিষয়টিকে ভাল চোখে দেখছে না তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থক সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৩ ০৭:২৭
Share:

নবান্ন। ফাইল চিত্র।

শিক্ষা থেকে শুরু করে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরে নিয়োগ কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে বলে নিয়মিত অভিযোগ করে চলেছে বিরোধী শিবির। তবে মাসিক থোক টাকায় চাকরিতে পুনর্নিয়োগের প্রক্রিয়ায় যে বিরাম নেই, তার প্রমাণ মিলছে স্বাস্থ্য ও নগরোন্নয়ন দফতরে। স্বাস্থ্য দফতরের অবসরপ্রাপ্ত যানচালকদের আরও ছ’মাসের জন্য চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি নগরোন্নয়ন দফতরের এগ্‌জ়িকিউটিভ অফিসার পদে প্রাক্তন আমলাদের পুনরায় নিয়োগ করা হয়েছে এবং হচ্ছে।

Advertisement

তবে ‘নিয়োগে অনীহা’, কিন্তু অবসরপ্রাপ্তদের ‘পুনর্নিয়োগে উদারহস্ত’— বিরোধী শিবিরের এই টিপ্পনীকে আমল দিতে রাজি নয় রাজ্য সরকার। নবান্ন সূত্রের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে আদালতের নির্দেশে বেশ কিছু চাকরি বাতিল হয়ে গেলেও সেই সব ক্ষেত্রে নতুন নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

এই পদ্ধতিকে খোঁচা দিয়ে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্রোক্তি, ‘‘রাজ্য সরকার এখন চাকরি বিক্রির দফতর খুলেছে! নতুন নিয়োগের প্রশ্ন নেই, অবসরপ্রাপ্তদের পুনর্নিয়োগ করে মানুষের মন পেতে চাইছে তারা।’’ লোকসভার বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী আরও এক ধাপ সুর চড়িয়ে বলছেন, ‘‘দান-খয়রাতি আর রাজ্যের শাসক দলের নেতাদের চুরির দায়ে সরকারের দেউলিয়া দশা। ব্যান্ড-এড দিয়ে কী আর গভীর ক্ষত সারিয়ে তোলা যায়! নিয়োগের নামে হাতে গোনা কয়েক জনের পুনর্নিয়োগের মাধ্যমে দাবি মেটানোর চেষ্টা করছে সরকার।’’

Advertisement

নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়োগ-প্রশ্নে পুলিশ, দমকল, গ্রন্থাগার, বন দফতরে ছবিটা প্রায় একই। এক শীর্ষ কর্তা কবুল করলেন, ‘‘সরকারি ক্ষেত্রে নতুন নিয়োগের সুযোগ প্রায় প্রতি বছরই সঙ্কীর্ণ হয়ে আসছে।’’ বিরোধীদের অভিযোগ, কোথাও চাকরির মেয়াদ বাড়িয়ে, কোথাও বা অবসরের পরে শূন্য পদে নতুন নিয়োগের পরিবর্তে অবসরপ্রাপ্তদেরই কাজে সুযোগ করে দিয়ে যুব সমাজের কাছে সরকারি চাকরির দরজা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতরের স্টেট হেল্‌থ ট্রান্সপোর্ট অর্গানাইজ়েশন নতুন নিয়োগের বদলে ওই বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত ৯৩ জন যানচালকের চাকরির মেয়াদ ছ’মাস বাড়িয়েছে মাসিক দশ হাজার টাকা পারিশ্রমিকে। একই ভাবে নগরোন্নয়ন দফতর এক নির্দেশিকায় জানিয়েছে, বিভিন্ন পুরসভায় এগ্‌জ়িকিউটিভ অফিসারদের (যাঁদের অবসরের পরে ওই পদে নিয়োগ করা হয়েছিল) কাজের মেয়াদ বৃদ্ধির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। বিজেপি নেতা রাহুল সিংহ বলছেন, ‘‘দেউলিয়া সরকারের কাছে এর বেশি কী-ই বা আশা করা যায়! মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বিধানসভায় জানিয়ে এসেছেন, সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য ডিএ-র বদলে নিজের মুন্ডু দিতে পারেন তিনি! নতুন নিয়োগের বদলে তাই পুনর্নিয়োগ দিয়ে মাছ ঢাকছে!’’

নতুন নিয়োগের দিক থেকে সরকারের মুখ ফিরিয়ে থাকার বিষয়টিকে ভাল চোখে দেখছে না তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থক সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনও। ওই সংগঠনের পক্ষে মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নতুন নিয়োগ না-হলে কর্মসংস্কৃতি যে ধাক্কা খাবে, তা বলাই বাহুল্য। আমরা বাম জমানাতেও চাকরির মেয়াদ বাড়িয়ে নতুন নিয়োগ বন্ধের বিরোধিতা করেছিলাম। এখনও করছি।’’

সরকার সেই বিরোধিতাকে আমল দেবে কি, প্রশ্ন এখন সেটাই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement