Recruitment Scam

বহু নেতানেত্রীর পিছনে কুন্তলের টাকা, দাবি ইডির

তদন্তকারীদের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তলের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া ডায়েরিতে কয়েক জন নেতা, মন্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু রাজ্য যুব নেতানেত্রীরও নাম রয়েছে।

Advertisement

  শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:০৫
Share:

নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ। ফাইল চিত্র।

দক্ষিণ কলকাতার একটি আবাসনে এক যুব নেত্রীর জন্য তিনটি ফ্ল্যাট একসঙ্গে কিনে সেটিকে একটি বৃহৎ ফ্ল্যাটে পরিণত করা হয়েছিল বলে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের দাবি। ওই কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তকারীদের দাবি, ফ্ল্যাট কিনতে লেগেছে কয়েক কোটি টাকা এবং ফ্ল্যাটের আসবাবপত্র কিনতে খরচ হয়েছে আরও কয়েক কোটি। এবং এই পুরো টাকাই কুন্তল ঘোষ জুগিয়েছিলেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে ইডি।

Advertisement

ওই সংস্থা সূত্রের দাবি, শুধু ওই যুব নেত্রীই নয়, শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির কোটি কোটি টাকা আরও কিছু বিভিন্ন মাপের নেতানেত্রী এবং রাজ্য যুব নেতানেত্রীর বিলাসবহুল জীবনযাপনের পিছনে খরচ করা হয়েছে। সর্বোপরি ওই দুর্নীতি কাণ্ডে অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে কুন্তলের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা গিয়েছে বলে অভিযোগ।

তদন্তকারীদের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তলের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া ডায়েরিতে কয়েক জন নেতা, মন্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু রাজ্য যুব নেতানেত্রীরও নাম রয়েছে। এবং তাঁদের কার পিছনে কত টাকা খরচ করা হয়েছে, নামের পাশে লেখা আছে সেই অঙ্কও। নিজের রাজনৈতিক জীবনের উন্নতির জন্য নিয়োগ দুর্নীতির লুটের টাকা কুন্তল দু’হাতে খরচ করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জেনেছে ইডি। তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় তা কবুল করেছেন কুন্তলও। ইডি-র এক পদস্থ কর্তার দাবি, শুধু কুন্তলের মাধ্যমে কয়েকশো কোটি টাকার দুর্নীতির হদিস পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে আপাতত ২৯ কোটি টাকার কথাই কবুল করেছেন কুন্তল।

Advertisement

তদন্তকারীদের কথায়, যে-হিসেব পাওয়া গিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, বেসরকারি কলেজ সংগঠনের সভাপতি তাপস মণ্ডল মারফত সাড়ে ১৯ কোটি টাকা এবং তাপস-ঘনিষ্ঠ এজেন্ট গোপাল দলপতি মারফত আরও সাড়ে ১০ কোটি নিয়েছিলেন কুন্তল। তবে তদন্তকারীদের দাবি অনুযায়ী কুন্তলের নোটবুকে পুরো ২৯ কোটি টাকাই তাপসের নামে লেখা আছে। তার মধ্যে সাড়ে ১৫ কোটি টাকা তিনি পার্থকে দিয়েছিলেন বলে জেরায় কুন্তল কবুল করেছেন— এমনটাই দাবি তদন্তকারীদের। ইডি-কর্তাদের দাবি, বাকি সাড়ে ১৩ কোটি টাকা তিনি কোথায় কী ভাবে খরচ করেছিলেন, তা জানতে কুন্তলকে আরও বিশদ ভাবে জেরা করা হচ্ছে।

ইডি সূত্রের খবর, চিনার পার্কের অভিজাত বহুতল আবাসনে কুন্তলের ৯০৩ নম্বর ফ্ল্যাটে পাওয়া ওই কালো ডায়েরিই এখন তাদের হাতিয়ার। তদন্তকারীদের দাবি, ওই ডায়েরিতেই রয়েছে বাকি সাড়ে ১৩ কোটি টাকা খরচের হিসেব। ইডি-র দাবি, ২০১৬-র পরে নিউ টাউন এবং ইএম বাইপাস সংলগ্ন এলাকায় অভিজাত আবাসনে ছ’-ছ’টি ফ্ল্যাট এবং অন্তত সাতটি বিলাসবহুল গাড়ি কিনেছিলেন কুন্তল।

তদন্তকারীদের দাবি, কুন্তলের ডায়েরিতে যে-সব প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম আছে, তাঁদের সঙ্গে যে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল, কুন্তলের হোয়াটসঅ্যাপ ও কল রেজিস্টার যাচাই করেও তা জানা গিয়েছে। ইডি সূত্রের আরও দাবি, কুন্তল অধিকাংশ সময়েই নীল বাতি লাগানো গাড়ি ব্যবহার করতেন। তদন্তকারীদের অনুমান, ব্যাপারটা যে আইনবিরুদ্ধ, তা জেনেও প্রভাবশালীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকায় পুলিশ ও প্রশাসন জেলা স্তরের ওই সাধারণ যুব নেতার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তদন্তকারীদের দাবি, কুন্তল মূলত নিয়োগ দুর্নীতির নগদ টাকা নিয়ে যাতায়াতের সময়েই ওই নীল বাতির গাড়ি ব্যবহার করতেন। ইডি-র জেরায় কুন্তলের দাবি, ২০১৬ সালে নোটবন্দির সময় কলকাতা পুলিশ তাঁর কয়েক কোটি নগদ টাকা বাজেয়াপ্ত করেছিল। দক্ষিণ কলকাতার একটি থানায় ওই ঘটনা নিয়ে একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছিল। সেই মামলার বিষয়েও খোঁজখবর নিচ্ছে ইডি।

নিয়োগ দুর্নীতিতে কুন্তল-ঘনিষ্ঠ আর এক যুব নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে তল্লাশির পাশাপাশি তিন দফায় তাঁকে প্রায় ২৮ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আজ, সোমবার শান্তনু এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের আয়করের রিটার্ন, সম্পত্তি ও ব্যবসার নথি তলব করা হয়েছে। হুগলির বলাগড়ের বাসিন্দা, সাধারণ এক মোবাইল ব্যবসায়ী শান্তনুর প্রতিপত্তিই বা কয়েক বছরে ফুলেফেঁপে উঠল কী ভাবে, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে তাঁর একটি বিলাসবহুল হোটেলের খোঁজ পেয়েছেন ইডি-র তদন্তকারীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement