Kamarhati Municipality

কামারহাটি পুরসভায় অয়নের নিয়োগ দুর্নীতি! চেয়ারম্যান বললেন, অন্যায় করলে জেলে যেতে পারি

পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসতেই একটি প্রশ্ন বড় আকার নিতে শুরু করেছে। তা হল, পুরসভার এক শ্রেণির নেতাদের স্বজনপোষণকে হাতিয়ার করেই কি নিজের দুর্নীতির জাল বিস্তার করেছিলেন অয়ন।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৩ ০৭:৪১
Share:

কামারহাটি পুরসভা। ছবি: ফেসবুক।

অয়ন শীলের সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগাযোগ ছিল না। শুধু নিয়ম মেনে তাঁর সংস্থাকে নিয়োগের পরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেখানে কোনও গাফিলতি থাকলে, দায় সেই সংস্থার। শুক্রবার কামারহাটি পুরসভায় গিয়ে এমনই দাবি ছিল স্থানীয় বিধায়কের। তবে, সেই দাবির কিছু ক্ষণ পরেই তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে একটি অনুষ্ঠানে কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান আবার বললেন, “যদি অন্যায় করে থাকি, জেলে যেতে হলে চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, বিধায়ক, সাংসদ যাবেন। কিন্তু কর্মচারীরা যেখানে ছিলেন, সেখানেই থাকবেন!”

Advertisement

সব কিছু দেখে-শুনে সিপিএমের স্থানীয় নেতাদের প্রশ্ন, “কেউ কিছু না করলে, জেলে যাবেন কেন?” এ দিন বিধায়ক মদন মিত্র ও চেয়ারম্যান গোপাল সাহার এ-হেন বক্তব্য নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক। ইডি-র তদন্তেই উঠে এসেছে, যে সমস্ত পুরসভায় নিয়োগে অয়ন দুর্নীতি করেছিলেন, তার মধ্যে রয়েছে কামারহাটি। আবার এটাও জানা গিয়েছে, অয়নের সংস্থার মাধ্যমেই ওই পুরসভায় সাব অ্যাসিট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার পদে নিয়োগ হয়েছিল শ্বেতা চক্রবর্তীর। তাই কামারহাটিকে ঘিরে জল্পনাও বেশি। এ দিন পুরসভাতে গিয়ে ওই তরুণীর সঙ্গে কথা বলেন মদন। তাঁর দাবি, সিপিএমের বোর্ড থাকার সময়ে কোনও পরীক্ষাই কামারহাটিতে হত না। বরং চিরকুটের মাধ্যমে নেতাদের আত্মীয়, বাড়ির কাজের লোকেদের চাকরি হয়েছে। তৃণমূল ওই পুরসভায় ক্ষমতায় আসার পরে, ২০১৭ সালে প্রথম পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ করেছিল।

এ দিন পুরসভার সামনেই অটো সংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে গোপাল বলেন, “যদি অন্যায় করে থাকি, শাস্তি আমাদেরই হবে। কিন্তু যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই সুন্দর ভাবে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন। তাঁদের বলব ভাল ভাবে হাসিমুখে কাজটা করুন।” মদন আবার বলছেন, “কোনও কর্মী টাকা দিয়ে এখানে চাকরি পাননি। কিন্তু সামগ্রিক পরিস্থিতিতে ওঁরা আতঙ্ক বোধ করছেন।” কেন, বিধায়ক ও চেয়ারম্যান এমন বিতর্কিত কথা বলছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন কামারহাটির প্রাক্তন বিধায়ক সিপিএমের মানস মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এত সংশয় হচ্ছে কেন? যদি ঠিক কাজ হয়ে থাকে তা হলে তো কারও জেল খাটার কথা নয়। আগে থেকেই আর্তনাদ করছেন কেন?” কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতে এমন কথা বলেছেন বলেই দাবি গোপালের। তাঁর কথায়, “কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখা আমার দায়িত্ব। কিন্তু নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও অন্যায় করিনি, এটা বলতে পারি।”

Advertisement

এ দিকে পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসতেই একটি প্রশ্ন বড় আকার নিতে শুরু করেছে। তা হল, পুরসভার এক শ্রেণির নেতাদের স্বজনপোষণকে হাতিয়ার করেই কি নিজের দুর্নীতির জাল বিস্তার করেছিলেন অয়ন। কারণ, পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতিতে যে সমস্ত তথ্য প্রকাশ্যে আসছে, তাতে দেখা যাচ্ছে কতিপয় চেয়ারম্যান পারিষদ, কাউন্সিলর এবং রাজ্য পুর কর্মচারী সংগঠনের এক তাবড় নেতার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়েরাই চাকরি পেয়েছেন। অধিকাংশ পুরসভাতেই এখন কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, বেশির ভাগ কাউন্সিলর ও চেয়ারম্যান পারিষদের কাছে নিয়োগের বিষয়ে সব কিছু খোলসা করা হয়নি। অভিযোগ, তাঁদের অন্ধকারে রেখেই হুগলির অখ্যাত সংস্থা প্রতিটি পুরসভার একটা শ্রেণিকে গুটিকয়েক চাকরির ‘কোটা’ দিয়ে খুশি করে বাকিটা থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলেছে। যেমন বরাহনগরের স্বজনপোষণ নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে না চাইলেও, ঠারেঠোরে অনেকেই বলছেন, “যাঁদের ছেলে, মেয়ে, নাতনি, ভাইপোরা সব চাকরি পেয়েছেন, তাঁরা এ বার বুঝুন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement