আইনজীবীদের বক্তব্য, শতরূপা-সহ তিন জন জামিনের আবেদন করলেও বিচারক সেই বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও নির্দেশ দেননি। ফাইল চিত্র।
তিনি জেল হেফাজতে আছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ-দুর্নীতি নিয়ে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের মামলায়। একই মামলায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের স্ত্রী শতরূপা, ছেলে সৌভিক এবং বেসরকারি কলেজ সংগঠনের সভাপতি তাপস মণ্ডলের ‘জামিন’ ঘিরে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।
আদালত সূত্রের খবর, মাসখানেক আগে মানিকের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছে ইডি। সেই চার্জশিটে শতরূপা, সৌভিকের দু’টি সংস্থা এবং তাপসের নাম ছিল। গত শনিবার ওই তিন জন আদালতে জামিনের আবেদন করেন, কিন্তু তার বিরোধিতা করে ইডি। বিচারক দু’সপ্তাহের মধ্যে ইডি-কে হলফনামা জমা দিয়ে জামিনের আবেদনের বিরোধিতার কারণ জানাতে বলেন। ইডি-র হলফনামা জমা দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ওই তিন অভিযুক্তকে নিজেদের বক্তব্য জানিয়ে হলফনামা পেশের নির্দেশ দেন বিচারক। ৭ ফেব্রুয়ারি জামিনের আবেদনের শুনানির দিন ধার্য হয়েছে।
শনিবার রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তাঁর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায় এবং মানিকের জামিনের আবেদনেরও শুনানি ছিল। তাঁদের আইনজীবীরা অবশ্য জামিনের জন্য আবেদন করেননি। ওই তিন জনকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচার ভবনের সিবিআই (পিএমএলএ) বিশেষ আদালতের বিচারক শুভেন্দু সাহা। কিন্তু শতরূপাদের জামিন নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশ আসেনি। তাতেই বিভ্রান্তি।
আইনজীবীদের বক্তব্য, শতরূপা-সহ তিন জন জামিনের আবেদন করলেও বিচারক সেই বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও নির্দেশ দেননি। আইন অনুযায়ী আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করা হয় বা পুলিশ বা জেল হাজতে রাখার সুনির্দিষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়। আইনজীবীদের বক্তব্য, শতরূপাদের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি এখানেই। কারণ, শনিবার তাঁদের জামিন মঞ্জুর হয়নি। তা সত্ত্বেও ওই তিন অভিযুক্ত আদালত থেকে বাড়ি চলে গিয়েছেন।
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আত্মসমর্পণ করার পরে যদি জামিন মঞ্জুর না-হয়, তা হলে অভিযুক্তকে জেল হেফাজতে থাকতে হয়। তদন্তকারী সংস্থা আদালত চত্বর থেকে অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করতে পারে। এ ক্ষেত্রে তদন্তকারী সংস্থা ইডি-র তরফে তেমন কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। আবার আদালতের কাছে অভিযুক্তদের জেল হেফাজতে পাঠানোর আবেদনও করেননি ইডি-র আইনজীবীরা।’’ জয়ন্তের মতে, ওই তিন জনের অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুরের কোনও নির্দিষ্ট নির্দেশ নেই। সেই কারণেই ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। শুধু তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী নয়, এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের আইনজীবীরও একটি ভূমিকা রয়েছে।
ইডি-র আইনজীবীরা বলেন, ‘‘গ্রেফতারের কোনও নির্দিষ্ট নির্দেশ নেই। আবার অন্তর্বর্তী জামিনেরও নির্দিষ্ট নির্দেশ নেই। সম্প্রতি বিষয়টি নজরে এসেছে। তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।’’ বিষয়টি আদালত ও তদন্তকারী সংস্থার এক্তিয়ারভুক্ত, তাই তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন অভিযুক্তদের আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত।