বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, ‘‘এটা কোনও ভূতের কাজ নয়। স্পষ্ট হচ্ছে যে, এই দুর্নীতিতে নিশ্চিত ভাবে কমিশনের কেউ যুক্ত রয়েছেন।’’ —ফাইল চিত্র।
নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ মামলায় স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-কে নয়া নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ, ৪০টি ওএমআর শিটের (উত্তরপত্র) নমুনা নাম, রোল নম্বর-সহ বিস্তারিত প্রকাশ করতে হবে এসএসসিকে। সময় দেওয়া হয়েছে এক সপ্তাহ।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ মঙ্গলবারের মধ্যেই স্কুল সার্ভিস কমিশনকে ৪০ জনের ওএমআর শিট প্রকাশ করতে হবে। সেখানে যাঁদের নাম প্রকাশ করা হবে, তাঁরা চাইলে মামলা লড়তে পারেন। সে জন্যও সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। মামলার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। বিচারপতি জানান, লিখিত আকারে নিজেদের বক্তব্য জানাতে পারবেন ৪০ জন। প্রয়োজনে তাঁদেরও সংশ্লিষ্ট মামলায় যুক্ত করা হবে।
প্রসঙ্গত, সোমবার সিবিআইয়ের তরফে আদালতে দাবি করা হয় গাজিয়াবাদের সার্ভার থেকে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার বেশ কিছু উত্তরপত্র বা ওএমআর শিট উদ্ধার হয়েছে। ওই উত্তরপত্রগুলি যাচাই করে দেখা গিয়েছে, সেখানে এমন অনেকে আছেন যাঁরা ওএমআর শিটে মাত্র একটি বা দু’টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। কিন্তু নম্বর পেয়েছেন ৫০-এর বেশি! কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এ-ও দাবি করে, এসএসসি-র ওই হার্ড ডিস্ক তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দেবে। যার প্রেক্ষিতে এসএসসি-র উদ্দেশে হাই কোর্ট মন্তব্য করে, ‘‘জল থেকে কাদা সরিয়ে জলটাকে স্বচ্ছ করুন।’’ আদালতের পর্যবেক্ষণ, এই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তপ্রক্রিয়া অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছে। এখন যে যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিত হয়েছেন, তাঁরা শুধু বিচারের আশায় সময় গুনছেন। আদালত বলে, ‘‘তাঁরা (বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী) জানতে চান না সিবিআই কী করল, স্কুল সার্ভিস কমিশন কী করল, তাঁরা চান নিয়োগের বিষয়ে কী হল।’’
মঙ্গলবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে সিবিআই তথ্য দেয়, উদ্ধার হওয়া ওএমআর শিটে দেখা যাচ্ছে ১০ জন পরীক্ষার্থী শূন্য পেয়েছেন পরীক্ষায়। কিন্তু তাঁদের কমিশনের সার্ভারে নম্বর দেওয়া হয়েছে ৫৩। বাকিরা যাঁরা ১ বা ২ নম্বর পেয়েছেন, তাঁদের কারও নম্বর ৫১, কারও ৫২। তালিকার ওয়েটিং লিস্টে থাকা এমন ২০ জন প্রার্থীর ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, ৯ নম্বর বেড়ে ৪৯ হয়েছে।
মামলাকারী সেতাবউদ্দিনের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম আদালতে দাবি করেন আসল ওএমআর শিট নষ্ট করা হয়েছে। এর পর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘আমার পর্যবেক্ষণ, এটা কোনও ভূতের কাজ নয়। এটা দেখে স্পষ্ট হচ্ছে যে, এই দুর্নীতিতে নিশ্চিত ভাবে কমিশনের কেউ যুক্ত রয়েছেন।’’
বস্তুত, আদালতে এসএসসিও স্বীকার করে নিয়েছে কয়েক জনের নিয়োগ অস্বচ্ছ। অন্য দিকে, সিবিআই দাবি করেছে এখনও পর্যন্ত প্রায় ২১ হাজার পদে নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে বলে তারা প্রমাণ পেয়েছে। ওই ২১ হাজারের মধ্যে আবার ৯ হাজারের বেশি উত্তরপত্র বিকৃত করা হয়েছে বলে দাবি। তবে এসএসসি জানায়, এত সংখ্যক ওএমআর শিট তারা সংরক্ষণ করেনি।