প্রতীকী ছবি।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে টানা দু’দিন সাধারণ ধর্মঘটের ডাক নিয়ে এ বার কথা উঠল সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে। পুরভোটের সময়ে এমন ধর্মঘট করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বেশ কিছু জেলার প্রতিনিধিরা। তাঁদের দাবি, দলের এই মনোভাবের কথা জানিয়ে ধর্মঘটের উদ্যোক্তা শ্রমিক সংগঠনগুলিকে এ রাজ্যের জন্য বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বলা হোক।
বেশ কয়েক বছর ধরেই সংসদের বাজেট অধিবেশনের কাছাকাছি সময়ে দেশ জুড়ে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি। এ বার তারা সাধারণ ধর্মঘট ডেকেছে আগামী ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি। লকডাউন ও করোনার জেরে বিপর্যস্ত অর্থনীতির মধ্যে আবার দু’দিনের সাধারণ ধর্মঘট করা নিয়ে বঙ্গের সিপিএম নেতৃত্বের দ্বিধা ছিলই। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতাদের বড় অংশের মনোভাব, এ রাজ্যে অন্তত শিল্প ধর্মঘট করে বাকি জনজীবনকে ছাড় দেওয়া হোক। এমতাবস্থায় দলের রাজ্য কমিটির দু’দিনের ভার্চুয়াল বৈঠকের প্রথম দিনে দু’দিনের ওই ধর্মঘট নিয়ে সরব হয়েছেন বেশির ভাগ জেলার নেতাই। তাঁদের সমবেত বক্তব্য, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনার অন্যথা না হলে ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের শতাধিক পুরসভায় ভোট হওয়ার কথা। সেই নির্বাচনের প্রচারের শেষ লগ্নে দু’দিনের ধর্মঘট করা সাংগঠনিক ভাবে খুবই অসুবিধানজনক। জনমানসেও এই ধর্মঘটের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। রাজ্যে ধর্মঘটের মেয়াদ কমিয়ে আনা বা শিল্প ধর্মঘটের পথে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন রাজ্য কমিটির অনেকেই। ভার্চুয়াল বৈঠকে উপস্থিত থেকে রাজ্যের নেতাদের এই বক্তব্য শুনেছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও। বৈঠকের শেষ দিনে আজ, শুক্রবার জবাবি বক্তৃতা করার কথা দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের।
সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনের পরিবর্তিত নির্ঘণ্ট (১৫-১৭ মার্চ) এ দিন রাজ্য কমিটিতে অনুমোদনের জন্য জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গেই বৈঠকে পেশ করা হয়েছে রাজ্য সম্মেলনের খসড়া রাজনৈতিক প্রতিবেদন। সেখানে বলা হয়েছে, রাজ্য জুড়ে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের যে তীব্র মেরুকরণের আবহ ছিল, গত বিধানসভা ভোটের পর থেকে তা ধীরে ধীরে হলেও কাটতে শুরু করেছে। বিভিন্ন উপনির্বাচন ও কলকাতা পুরসভার ভোটের ফলে তার ইঙ্গিত মিলেছে। এই পরিস্থিতিতে হারানো রাজনৈতিক পরিসর পুনরুদ্ধারের জন্য আন্দোলন-সংগ্রামে জোর দিতে হবে বামেদের। তার জন্য সংগঠনকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে রাজ্য কমিটির সদস্যদের খসড়া প্রতিবেদনের উপরে মতামত জানাতে বলা হয়েছে।
সিপিএমের রাজ্য, জেলা ও এরিয়া কমিটিতে থাকার ঊর্ধ্বসীমা অবশ্য যথাক্রমে ৭২,৭০ ও ৬৫ বছরই ধার্য হচ্ছে। এই নিয়ে দল আর কোনও ‘বিতর্ক’ চাইছে না। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় ও রাজ্য কমিটিতে সবিস্তার আলোচনা করেই এই নীতি ঠিক হয়েছে। এর পরে তা বাস্তবায়নের পালা।’’