Coronavirus in West Bengal

Coronavirus in West Bengal: ‘মণ্ডপে ঘোরার পাশে কোভিড হাসপাতালগুলি একবার দেখে নিতে পারেন উৎসাহীরা’

মাস্কহীন জনতা উচ্ছ্বাসে মেতে নিজেদের কত বড় বিপদ ডেকে আনছে, সেটা তারা আদৌ বুঝতে পারছে কি না, সেই বিষয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে চিকিৎসক মহলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২১ ০৬:০৯
Share:

লাগামছাড়া: পুজোয় করোনা-বিধি ভাঙার প্রবণতা দেখা গেল অষ্টমীতেও। উত্তর কলকাতার একটি রেস্তরাঁর সামনে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

মহাষষ্ঠী অর্থাৎ সোমবার ২৪ ঘণ্টায় সারা রাজ্যে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬০৬। মঙ্গলবার, সপ্তমীতে সেটা বেড়ে হয় ৭৬৮। আর বুধবার, দুর্গাষ্টমীতে স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে সংক্রমিত ৭৭১ জন। তাঁদের মধ্যে কলকাতায় ২০৩ জন আক্রান্ত। তার পরেই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। সেখানে ১২৮ জন আক্রান্ত।

Advertisement

অর্থাৎ সংক্রমণের অজগর ধীরে, কিন্তু দৃঢ় ভাবেই তার গ্রাস জোরদার করছে বলে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের একাংশের অভিমত। এর পাশাপাশি পুজোর মরসুমে দৈনিক আক্রান্তের যে-সংখ্যা প্রকাশ্যে আসছে, তা আদৌ প্রকৃত চিত্র নয় বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের বক্তব্য, এটা ডুবো হিমগিরির চূড়া মাত্র। সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রকৃত ছবি এটা নয়। কেন? চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘এখন দৈনিক করোনা পরীক্ষার সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। মৃদু উপসর্গে আক্রান্ত লোকজন পরীক্ষা করানোর ব্যাপারে অনীহা দেখাচ্ছেন। আর সেই কারণেই প্রকৃত চিত্র স্পষ্ট হচ্ছে না।”

কলকাতার এক সংক্রমণ বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, তাতেই বা কমটা কী হচ্ছে! দৈনিক ৩০ হাজার পরীক্ষাতেই যদি পজ়িটিভিটি রেট ২.৩৪-এ পৌঁছয়, তা হলে ৫০ হাজার পরীক্ষা হলে তো আরও বেশি হবে। শহরের অধিকাংশ পুজো কমিটি অসহায়তা প্রকাশের ভঙ্গিতে জানাচ্ছে, মণ্ডপের সামনে মানুষ যদি স্বেচ্ছায় ভিড় করেন, তা হলে তাদের পক্ষেই বা কতটা কী করা সম্ভব!

Advertisement

করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের চোখরাঙানির মধ্যে বঙ্গের আকাশে সিঁদুরে মেঘ অনেক আগে থেকেই প্রত্যক্ষ করছিলেন চিকিৎসকেরা। তাই পুজোর ভিড় থেকে দূরে থাকার জন্য সতর্ক করছিলেন বার বার। কিন্তু সেই হুঁশিয়ারিতে কাজ বিশেষ হয়নি। পুজোর কেনাকাটা এবং দ্বিতীয়া থেকে রাস্তায় রাস্তায় জনতরঙ্গের ধাক্কায় বেড়ে চলেছে পজ়িটিভিটি রেট। তার পরিণামে বড় বিপদ যে অদূরেই, তার সঙ্কেত পাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

সপ্তমীর সকালে কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের সদস্য চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, রাজ্যে করোনা পজ়িটিভিটির হার পৌঁছেছে ২.৩৪-এ। অর্থাৎ ১০০ জনের মধ্যে আড়াই জনের দেহে সংক্রমণের প্রমাণ মিলছে। আশঙ্কার মেঘ ঘনাচ্ছিল আগে থেকেই। তাতে ইন্ধন দিয়েছে মহাষ্টমীর সকালে মণ্ডপে মণ্ডপে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার ভিড়, রাতের রাস্তায় গা ভাসানো জনতা। সব মিলিয়ে মাস্কহীন জনতা উচ্ছ্বাসে মেতে নিজেদের কত বড় বিপদ ডেকে আনছে, সেটা তারা আদৌ বুঝতে পারছে কি না, সেই বিষয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে চিকিৎসক মহলে।

এক চিকিৎসকের পরামর্শ, “মণ্ডপে মণ্ডপে ঘোরাঘুরির পাশাপাশি কোভিড হাসপাতালগুলিও একটু দেখে নিতে পারেন উৎসাহীরা। তা হলে অন্তত বুঝতে পারবেন, কোথায় কতটা ব্যবস্থা রয়েছে। আর রাত জেগে বাড়ি ফিরে সকালে উঠতে না-পারা লোকজন কি আদৌ খবর রাখছেন, পাশের বাড়ির কোন মানুষটা করোনা পজ়িটিভ হয়ে হাসপাতালে গেলেন?”

রাজ্যের কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের উপদেষ্টা চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, “চার দিকে মাদকতার অঙ্গন খোলা হয়েছে! সেখানে মানুষকে মাদকতায় আচ্ছন্ন বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মাদকতার অঙ্গন খুলে আসল দোষী যে আমরাই, সেটা ভাবতে পারছি না। আর এ ভাবেই নিজেদের দায় ঝেড়ে ফেলছি।” আবার চিকিৎসকেরা এটাও বলছেন যে, সাধারণ মানুষ সব সময়েই সমাজের উচ্চ স্তরের লোকজনের কথা শোনেন। তাই উচ্চবর্গীয় মানুষজন যদি কোভিড বিধি মেনে মাস্ক পরা, পুজোর মণ্ডপে ভিড় না-করার অনুকূলে প্রচার করতেন, তাতে হয়তো কাজ হত। কিন্তু তা না-করে কে কাকে কতটা টেক্কা দিলেন, সেই হিসেব কষতেই সকলে ব্যস্ত।

এর পরিণাম কী?

কলকাতার এক সরকারি কোভিড হাসপাতালের চিকিৎসক বলেন, “মানুষ এখন রাত জেগে হুল্লোড় করছেন। তার ফলে আগামী দিনে আমাদের আবার রাতের পর রাত জাগতে হবে, লড়াই করতে হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement