গরমে স্বস্তি পেতে জলে ভিজছে খুদেরা। —ফাইল চিত্র
দুপুর সাড়ে ১২টা। ভিড়ে ঠাসা ব্যান্ডেল লোকাল ঢুকল হাওড়া স্টেশনে। গরম বাতাসের হলকায় ট্রেনেই অসুস্থ হয়ে পড়া কয়েক জনকে ধরে ধরে প্ল্যাটফর্মে নামালেন সহযাত্রীরা।
দুপুর ১টা। হাওড়া স্টেশনেই দূরপাল্লার ট্রেন ধরার জন্য পৌঁছলেন বেশ কয়েক জন। কিন্তু হাঁসফাঁস গরমে ভিড়ে ঠাসা স্টেশনে দাঁড়াবেন কোথায়? কয়েক জনকে দেখা গেল বাতানুকূল যন্ত্রের ঠান্ডার লোভে হাওড়া মেট্রোর সুড়ঙ্গে নেমে যেতে। তাঁদের এক জন জানালেন, দূরপাল্লার ট্রেন না আসা পর্যন্ত মেট্রো স্টেশনেই বসে থাকবেন।
গরম তো রয়েইছে। তার সঙ্গে জুড়েছে অস্বস্তিকর আবহাওয়া। রাস্তায় বেরিয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। পাখার তলায় দাঁড়িয়েও দরদর করে ঘামতে হচ্ছে মানুষজনকে। কোথাও আবার সেই সুযোগও নেই। কারণ জেলার বহু জায়গাতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে লোডশেডিং চলছে। কলকাতার পারদ অবশ্য ৪০ ডিগ্রির ঘরে পৌঁছয়নি। সরকারি ভাবে তাই তাপপ্রবাহ বলা চলে না। তা হলে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে কেন এই পরিস্থিতি? আবহাওয়া দফতরের তরফে এই বিষয়ে একাধিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
আপাত ভাবে বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ বাড়লে অস্বস্তিকর আবহাওয়া তৈরি হয়। রবিবার কলকাতার বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার সর্বোচ্চ পরিমাণ ছিল ৮৫ শতাংশ। ফলে তাপপ্রবাহ না থাকলেও কাজে বেরিয়ে হাঁসফাঁস করতে হয়েছে মানুষজনকে। বাকি দেশে মৌসুমি বায়ুর গতিপ্রকৃতি দেখে আবহবিদদের একাংশ অনুমান করেছিলেন, সোমবারই দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা ঢুকবে। কথা রাখেনি মৌসুমি বায়ু। তবে এখনই দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা বিলম্বে ঢুকবে— এ কথা বলতে নারাজ আলিপুর। বরং আগামী কয়েক দিন তারা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখতে চায়।
আবহাওয়া দফতরের বক্তব্য, দিন দীর্ঘ এবং রাত তুলনায় ছোট হওয়ায় মাটিতে তাপ শোষণের পরিমাণ বেড়েছে। তুলনায় তাপ বিকিরণ কম হচ্ছে। তা ছাড়া দক্ষিণবঙ্গে বর্ষাকে টেনে আনার মতো কোনও নিম্নচাপ কিংবা অক্ষরেখাও তৈরি হয়নি বলে মনে করছেন আবহবিদেরা। ফলে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে বর্ষার বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলেও চাতকের মতো অপেক্ষা করতে হচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের বাসিন্দাদের।
কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বুধবার পর্যন্ত গরম এবং অস্বস্তিকর আবহাওয়া চলবে বলে জানিয়েছে আলিপুর। তাপপ্রবাহের সতর্কতা রয়েছে বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। গরমের দীর্ঘ ছুটি এবং ভোটপর্ব মেটার পর সোমবার থেকে জেলার বহু স্কুলে ক্লাস শুরু হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যের কথা ভেবে অনেক অভিভাবকই শিশুদের স্কুলে পাঠাননি। ফলে অধিকাংশ স্কুলেই উপস্থিতির হার ছিল নগন্য।
তবে বুধবার থেকে আবহাওয়ার কিছুটা হলেও পরিবর্তন হতে চলেছে। বৃষ্টি হবে কলকাতাতেও। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, বুধবার কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়ায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর, পশ্চিম বর্ধমানে বৃষ্টি হতে পারে, তবে তাপপ্রবাহও চলবে। স্থানীয় বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরির জন্যই এই বৃষ্টি বলে জানিয়েছে আলিপুর।
বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টি বাড়বে দক্ষিণবঙ্গে। শুক্রবার পর্যন্ত কলকাতা-সহ সব জেলাতেই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি এবং ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে বলে জানিয়েছে আলিপুর। মনে করা হচ্ছে, বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা খানিকটা কমতে পারে উত্তরবঙ্গে আগেই বর্ষা প্রবেশ করেছে। সেখানে আগামী কয়েক দিন ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বুধবার পর্যন্ত জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারে কমলা সতর্কতা জারি করেছে হাওয়া অফিস। ওই দুই জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি হয়েছে কোচবিহার, কালিম্পং এবং দার্জিলিঙেও। এ ছাড়া, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদহে সোমবার বৃষ্টি হতে পারে। এই জেলাগুলিতেও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে বৃহস্পতি এবং শুক্রবার।
রবিবার বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, আসানসোল-সহ দক্ষিণবঙ্গের ন’টি এলাকার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তাপপ্রবাহও হয়েছে অনেক জায়গায়। কলাইকুন্ডায় তাপমাত্রা পৌঁছে গিয়েছিল ৪৩ ডিগ্রিতে। কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি সপ্তাহেই বৃষ্টিতে স্বস্তি মিলতে পারে বলে জানাচ্ছে হাওয়া অফিস। স্থানীয় মেঘ থেকে তৈরি হওয়া বৃষ্টি বর্ষাকে দক্ষিণবঙ্গে নিয়ে আসতে পারে কি না, মানুষজনকে সাময়িক সুরাহা দিতে পারে কি না, সে দিকেই আপাতত নজর সকলের।