মানবসভ্যতার উন্নয়ন ও অগ্রগতির সঙ্গে ব্যাস্তানুপাতে তাল মিলিয়ে বিপন্ন বন ও বন্যপ্রাণ। নতুন নতুন জনবসতির বিস্তারে সঙ্কুচিত হচ্ছে বনাঞ্চল। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পরিবেশের বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য। এই অবস্থায় পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষা, সংরক্ষণ রাষ্ট্রের প্রাথমিক কর্তব্য। আমাদের দেশে বনসম্পদ সুরক্ষা ও সংরক্ষণের দায়িত্বে নির্দিষ্ট আধিকারিক পদ—ফরেস্ট অফিসার। এর জন্য ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিস পরীক্ষা পাশ করতে হবে। এই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দেওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতা স্নাতক হওয়া। বিজ্ঞানের যে কোনও বিষয়ে স্নাতক হলেই হবে—ম্যাথমেটিক্স, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বোটানি, জুওলজি, জিওলজি, স্ট্যাটিস্টিক্স, ভেটেরিনারি সায়েন্স অ্যান্ড অ্যানিম্যাল হাসব্যান্ড্রি অথবা ইঞ্জিনিয়ারিং, ফরেস্ট্রি বা কৃষিতে। তবে আগে থেকে ফরেস্ট অফিসার হওয়ার মনোবাসনা স্থির করে নিতে পারলে ‘ফরেস্ট্রি’ নিয়ে পড়তে পারেন।
ফরেস্ট্রি—বনের যত্ন, প্রতিরোধ, সংরক্ষণ ও বনসম্পদের উন্নয়ন সংক্রান্ত পাঠ। যেখানে বিশ্ব উষ্ণায়ণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে যেমন সচেতন করা হবে, তেমনই বনজ সম্পদের চোরাচালান প্রতিরোধ জানতে হবে, বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি বনের উপরে নির্ভরশীল জনজাতি ও উপজাতিদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করা হবে।
তিন বছরের এই ডিগ্রি কোর্স পড়ার জন্য অবশ্যই দ্বাদশ ক্লাস বিজ্ঞান বিভাগে পাশ করতে হবে। ফরেস্ট্রিতে স্নাতকোত্তর স্তরে বেশ কিছু স্পেশালাইজেশন রয়েছে—ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট, কমার্শিয়াল ফরেস্ট্রি, ফরেস্ট ইকোনমিক্স, উড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইত্যাদি।
ফরেস্ট্রি নিয়ে পড়ার জন্য খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলি হল— দেহরাদুনের ফরেস্ট্রি রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ভোপালের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট, ভূবনেশ্বরের ওড়িশা ইউনিভার্সিটি অফ এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, দেহরাদুনের ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া, রাঁচির বিরসা এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটি, হিমাচল প্রদেশের সোনালে কলেজ অফ হর্টিকালচার অ্যান্ড ফরেস্ট্রি।
ফরেস্ট্রি নিয়ে পড়াশোনা করার পরে অবশ্যই ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিস দিয়ে ফরেস্ট অফিসার হওয়া যায়। এছাড়াও বন সংরক্ষণ ও বনসম্পদ নিয়ে যে সব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কাজ করছে, সেখানে চাকরি করা যায়। টিম্বার প্ল্যান্টেশন নিয়ে কাজ করছে এমন কর্পোরেট সংস্থাতে কাজ পাওয়া যায়। গবেষণাও করা যায়। গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে খুব ভাল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ ফরেস্ট্রি রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন (আইসিএফআরই)। এছাডাও বোটানিক্যাল বা জুওলজিক্যাল পার্ক, ন্যাশনাল পার্ক ইত্যাদিতে কাজ পাওয়া যায়। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড (ডব্লিউডব্লিউএফ), সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট এডুকেশন, টাটা এনার্জি রিসার্চ ইনস্টিটিউট ইত্যাদি সংস্থা ফরেস্ট্রির পড়ুয়াদের নিয়োগ করে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা তো রয়েছেই। ওয়াইল্ড ফটোগ্রাফির প্যাশন থাকলেও ফরেস্ট্রি নিয়ে পড়তে পারেন। মোট কথা, অরণ্যের প্রতি ভালবাসা থাকলে তবেই পড়ুন এই বিষয়।