তৃণমূলে যোগ দিলেন জয়প্রকাশ মজুমদার (বাঁ দিকে)। নিজস্ব চিত্র
খবরটা শুনেই আকাশ থেকে পড়লেন তরিকুল ইসলাম।
‘অ্যাঁ, তাই নাকি! উনি এখন আমাদের পার্টি?’ — বলেই রাজ্য সড়কের ধারে জ্বলন্ত বিড়ির টুকরোটা ছুড়ে দিলেন তরিকুল।
চোখ পিটপিট করে ফের বললেন, “জয়প্রকাশ মজুমদার তৃণমূল!”
২০১৯-এর ২৫ নভেম্বর সকালে নদিয়ার থানারপাড়ায় এই ঘিয়েঘাটা গ্রামেই এক তৃণমূল কর্মীর লাথি খেয়ে পাশের কচুবনে ছিটকে পড়তে দেখা গিয়েছিল জয়প্রকাশকে। তিনি সে দিন করিমপুর কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী। আর ভিড়ের মধ্যে থেকে যার লাথি ছিটকে এসেছিল, তিনি এই তরিকুল। বিএ পাশ, একটু রগচটা বলে জানেন পড়শিরা। গাঁয়ের প্রাথমিক স্কুলের বুথে এসে বিজেপি প্রার্থী তৃণমূলের লোকেদের সঙ্গে ‘ঝামেলা’ করছেন শুনে তিনি মাঠের কাজ ফেলে ছুটে এসেছিলেন।
এখন অবশ্য সেই প্রসঙ্গ উঠলেই তরিকুল লাজে রাঙা হয়ে ওঠেন। তাঁর কথায়, “রোজ রাতে বিছানায় শুলেই আমার ওই দিনের কথাটা মনে পড়ে। ওঁর সঙ্গে কখনও দেখা হলে অনুরোধ করব, যেন এ সব আর মনে না রাখেন।” আশপাশে দাঁড়িয়ে মাথা নাড়েন শহিদুল মোল্লা, আবুজার শেখ। শহিদুল বলেন, “একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে গিয়েছিল।” আবুজার খেই ধরেন, “আর এখন তো বিবাদ মিটেই গেল।”
তবে ওই ঘটনা নিয়ে পরে আর থানা-পুলিশ করেননি জয়প্রকাশ। এ দিন তিনি বলেন, “ওটা তাৎক্ষণিক ঘটনা ছিল। উনি যে অনুভব করেছেন, কাজটা ঠিক হয়নি, এটাই আমার কাছে বড় প্রাপ্তি।”
জয়প্রকাশের দলবদল প্রসঙ্গে এ দিন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কটাক্ষ, “দল পরিবর্তন ওঁর কাছে নতুন নয়। আগে কংগ্রেসে ছিলেন, পরে বিজেপিতে এসেছিলেন, আজ তৃণমূলে গেলেন। আশা করি, ভবিষ্যতেও দল পরিবর্তন করবেন।” তাঁকে বহিষ্কার করা হচ্ছে না কেন? সুকান্ত বলেন, “তিনি তো সাসপেন্ডই ছিলেন। তবু দেখব, দলের সংবিধানে তেমন কোনও সংস্থান আছেন কি না।”
সোমবার জয়প্রকাশ ও বিজেপির বিক্ষুব্ধ শিবিরভুক্ত লকেট চট্টোপাধ্যায়, সায়ন্তন বসু, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন। কুণাল ঘোষের দাবি, তাঁরা সকলেই ধীরে ধীরে তৃণমূলে যাবেন। সে প্রসঙ্গে সুকান্তের প্রতিক্রিয়া, “যাঁরা বৈঠক করেছেন, তাঁরা বলবেন কী বিষয়। দলের তরফ থেকে এ রকম কোনও বৈঠক ছিল না।”