কয়েক মাস আগেই লোকসভার প্রাক্তন স্পিকারের শান্তিনিকেতনের বাড়িতে গিয়ে মধ্যাহ্নভোজন সেরে এসেছিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। সুযোগ পেলেই বারেবারে তিনি বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, আনুষ্ঠানিক ভাবে দলে না ফিরলেও সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় আসলে দলের সঙ্গেই আছেন। তবুও জল্পনা চলছিল। এ বার সেই সোমনাথবাবুর মতই বিবৃতি দিয়ে খণ্ডন করল সিপিএমের পলিটব্যুরো! জোর ধাক্কা খেল সোমনাথবাবুর দলে ফেরার জল্পনাও।
কিছু দিন আগে সোমনাথবাবু একটি সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেছিলেন, সিপিএম এবং কংগ্রেসের একজোট হয়ে এনডিএ-র মোকাবিলা করা উচিত। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে সিপিএমের কেন্দ্রীয় সরকারে যোগ দেওয়া উচিত বলেও তিনি মত দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে প্রকাশ কারাটের সম্পর্কেও পরোক্ষে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন সোমনাথবাবু। শনি ও রবিবার দু’দিনের বৈঠকের পরে পলিটব্যুরো বিবৃতি দিয়ে লোকসভার প্রাক্তন স্পিকারের ওই মতামতই খারিজ করে দিয়েছে।
পলিটব্যুরোর বক্তব্য, এই বিষয়গুলি একাধিক বার পার্টি কংগ্রেসে আলোচনা করে দল আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই সোমনাথবাবুর মত মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু সোমনাথবাবু এখন আর দলের কেউ নন। তাঁর মতামত খারিজ করতে সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বকে তৎপর হতে হল কেন? পলিটব্যুরো সূত্রের বক্তব্য, দলে না থাকলেও বামপন্থী হিসাবে নানা মঞ্চেই সোমনাথবাবু সিপিএমের বঙ্গ নেতাদের সঙ্গে থাকেন। বিশেষত, কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের নির্বাচনী জোট নিয়ে সোমনাথের কথায় নিচু তলায় বিভ্রান্তির সম্ভাবনা ছিল। তাই পলিটব্যুরো অবস্থান স্পষ্ট করল।
সোমনাথবাবু অবশ্য এই ঘটনায় বিচলিত নন। দলে ফেরার আবেদন করবেন না বলে তিনি আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পলিটব্যুরোর সিদ্ধান্ত জেনে এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমি দলের কেউ নই। বামপন্থী হিসাবে যা মনে করেছি, তা-ই বলেছিলাম। বাইরের লোক হওয়া সত্ত্বেও আমার কথা যে ওঁদের নজরে এসেছে, এ-ই অনেক!’’ দলের অন্দরের খবর, পলিটব্যুরোর বৈঠকে কারাট শিবিরের নেতা-নেত্রীরাই সোমনাথবাবুর মতের কড়া সমালোচনা করেছেন। যার আসল কারণ, সাক্ষাৎকারে সোমনাথ বলেছিলেন, কারাট-পরবর্তী জমানায় বাংলার কমরেডরা খোলা বাতাসে শ্বাস নিচ্ছেন!