এক স্বরের বিরুদ্ধে জনস্বর চান রবীশ

রবীশের এ দিনের বক্তৃতার নির্যাস— এক স্বরের বিপরীতে বৈচিত্র্যের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখাই এখন বাংলা তথা ভারতের মানুষের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৯ ০৫:০২
Share:

বক্তা: শনিবার বসুশ্রী সিনেমা হলে রবীশ কুমার। নিজস্ব চিত্র

জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-র মোকাবিলায় নাগরিক আন্দোলনের ডাক দিলেন ম্যাগসাইসাই পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক রবীশ কুমার। আর সেই আন্দোলনের সামনে ‘নেতা’ হিসেবে তিনি দাঁড় করালেন মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে।

Advertisement

কলকাতার বসুশ্রী সিনেমা হলে শনিবার ‘ঋতুপর্ণ ঘোষ স্মারক বক্তৃতা’ করেন রবীশ। প্রত্যয় জেন্ডার ট্রাস্ট আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানেই তিনি সতর্ক করে দেন, ‘‘বাংলায় বিবেকের আকাল দেখা দিচ্ছে। এমন দুর্বল বাংলা আগে দেখিনি। আমার কষ্ট হচ্ছে।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘আজ যিনি আপনার প্রতিবেশী, কাল এনআরসি-তে তাঁর নাম না থাকলে তিনি আর হিন্দুস্তানিই থাকবেন না! বাংলা আপনাদের হাত থেকে বেরিয়ে যাবে। একটা অন্য বাংলা জন্মাবে। ভাবুন, এই পরিস্থিতিতে গাঁধী বা রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে কি চুপ করে থাকতেন?’’ গাঁধী এবং রবীন্দ্রনাথের কর্মকাণ্ডের ইতিহাস টেনে তাঁদের মতাদর্শ স্মরণ করিয়ে দেন রবীশ। সেই সূত্রেই শ্রোতাদের কাছে আহ্বান রাখেন, ‘‘রাস্তায় নামুন। পরস্পরকে বিশ্বাস এবং আশ্বাস দিন। শুধু রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইলেই বা দুর্গাপুজোর মণ্ডপে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজালেই কি রবীন্দ্রনাথের আত্মা বাঁচবে? রাস্তায় নেমে সকলকে সকলের পাশে দাঁড়াতে হবে।’’

বস্তুত, রবীশের এ দিনের বক্তৃতার নির্যাস— এক স্বরের বিপরীতে বৈচিত্র্যের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখাই এখন বাংলা তথা ভারতের মানুষের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ। তাঁর বক্তব্য, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়— সর্বত্রই এক স্বরের প্রবক্তাদের আক্রমণ নেমে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়, অর্থাৎ শিক্ষা, জ্ঞান এবং তা থেকে জাত স্বাধীন চিন্তার যে কোনও পীঠস্থানকেই ধ্বংস করতে সক্রিয় হয়েছে বিজেপি এবং তাদের সমমনস্ক সংগঠনগুলি। রবীশের কথায়, ‘‘ওরা যাদবপুরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করবে বলছে। জেএনইউ-এর বদনাম করছে। ওরা নাকি শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে স্মরণ করে। তাঁর বাবা আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের যে ৭০-৮০ হাজার বই ছিল, তারা কি সে কথা জানে? যে বিশ্ববিদ্যালয়ে বই নিয়ে চর্চা হয়, সেখানে যখন সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করবে, তা হলে কি আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের বইগুলোও নষ্ট করবে?’’

Advertisement

রবীশের অভিমত, জ্ঞানের বৈষম্যের সুযোগ নিয়ে জাল তথ্যের কারবার ফেঁদে বসেছে বিজেপি-র আইটি সেল। মানুষের হোয়াটসঅ্যাপ অনবরত ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে অনৈতিহাসিক, মিথ্যা তথ্যের বন্যায়। যার একমাত্র উদ্দেশ্য— প্রশ্নহীন অনুগত দেশবাসী তৈরি করা। একেই ‘হোয়াটসঅ্যাপ বিশ্ববিদ্যালয়’ নাম দিয়েছেন রবীশ। বলেছেন, ‘‘হোয়াটসঅ্যাপ বিশ্ববিদ্যালয়, নেতার ভাষণ, টিভি চ্যানেল— সর্বত্র একই স্বরের নির্মাণ হচ্ছে।’’ রবীশের আক্ষেপ, এই পরিস্থিতিতে যে প্রতিরোধহীন দেশ তিনি দেখছেন, তা তিনি আগে দেখেননি। রবীশের কথায়, ‘‘আমি এখন আর জনতাকে জনতা বলি না। জনতা এত নিশ্চুপ এবং সন্ত্রস্ত হয় না। জনতা প্রশ্ন করে। জনতা নিজের এবং পাশের মানুষের ভাল-মন্দ সম্পর্কে সচেতন থাকে। জনতা এত বিবেকশূন্য হয় না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement