Sovan Chatterjee

রত্নাকে নিয়ে ভোটপ্রস্তুতি শুরুর নির্দেশ পার্থর, শোভনের জন্য বার্তা স্পষ্ট?

কোথায় কাকে প্রার্থী করা হবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দল নেবে, তিনি নন— এ কথা পার্থ এ দিন বলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২০ ১৯:০৮
Share:

তৃণমূলের তরফে স্পষ্ট বার্তা শোভনকে। —ফাইল চিত্র।

সম্ভাবনা শেষ নয় হয়তো, তবে যে ক্ষীণ, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। তৃণমূলের তরফে বার্তা বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠল শোভন চট্টোপাধ্যায়ের জন্য। পুরভোটের প্রস্তুতি শুরুর লক্ষ্যে নিজের বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ড নেতৃত্বকে নিয়ে বুধবার বৈঠক করলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডে কলকাতার প্রাক্তন মেয়রকে যে টিকিট দেওয়ার ভাবনা আপাতত নেই, সেই বার্তা বেশ স্পষ্ট হয়ে গেল বৈঠকে।

Advertisement

সামনে পুরসভা নির্বাচন, তার পরে বিধানসভা। সে কথা মাথায় রেখে কাউন্সিলরদের এবং তৃণমূলের বিভিন্ন ওয়ার্ড নেতৃত্বের করণীয় কী, তা এ দিন ছকে দিয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক হিসেবে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের যে অফিস রয়েছে ডায়মন্ড হারবার রোডের ধারে, সেখানেই বৈঠক বসেছিল। বেহালা পশ্চিমে তৃণমূলের টিকিটে নির্বাচিত সব কাউন্সিলর ছিলেন বৈঠকে। ছিলেন না শুধু ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শোভন চট্টোপাধ্যায়।

শোভন নিজে বেহালা পূর্বের বিধায়ক। কিন্তু তিনি যে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, সেটি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আসন বেহালা পশ্চিমের মধ্যে পড়ে। শোভনের ওয়ার্ডে তৃণমূলের যিনি সভাপতি, সেই খোকন গায়েন ডাক পেয়েছিলেন বৈঠকে। আর শোভন বিজেপিতে চলে যাওয়ার পর থেকে ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের পুর পরিষেবার প্রশ্নে মূলত যাঁকে সামনে রাখার চেষ্টা করে গিয়েছে তৃণমূল, সেই রত্না চট্টোপাধ্যায়ও বৈঠকে ডাক পেয়েছিলেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘আমরা না হয় মিথ্যে বলি, সত্যিটা কী আপনি বলুন’, অমিতকে তোপ মমতার​

যে আসনে যে কাউন্সিলর ছিলেন, এ বারও সেই সব আসন তাঁরাই পাবেন— পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন সেই ইঙ্গিত দিয়ে দিয়েছেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। কোথায় কাকে প্রার্থী করা হবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দল নেবে, তিনি নন— এ কথাও পার্থ এ দিন বলেন। কিন্তু বর্তমান কাউন্সিলরদের টিকিট কাটা পড়ার সম্ভাবনা যে কমই, সে ইঙ্গিতও পার্থ দিয়ে দেন বলে জানা গিয়েছে।

শুধু ৩টি ওয়ার্ডে প্রার্থী বদল হবে বলে পার্থ এ দিনের বৈঠকে কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড তথা ব্লক সভাপতিদের জানান। ১২৫ এবং ১২৭ নম্বর ওয়ার্ড তফসিলি মহিলা এবং মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। কিন্তু ওই ওয়ার্ড দু’টির বর্তমান কাউন্সিলররা পুরুষ। সুতরাং ওই দুই ওয়ার্ড থেকে যে বর্তমান কাউন্সিলররা টিকিট পাচ্ছেন না, তা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ১২৫ এবং ১২৭ এর পাশাপাশি ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডেও যে প্রার্থী বদল হচ্ছে, সে ইঙ্গিতও পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন দিয়ে দিয়েছেন।

শোভন চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায় যে ১৩১ থেকে টিকিট পেতে পারেন, পার্থের বৈঠকে সে ইঙ্গিত স্পষ্ট ভাবে মিলেছে বলেই তৃণমূল সূত্রের খবর। ১৩১-এ শোভনের বদলে রত্নাকেই প্রার্থী করছে তৃণমূল— এই রকম কোনও ঘোষণা পার্থ চট্টোপাধ্যায় করেননি। কিন্তু অন্যান্য ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে কাউন্সিলর এবং ব্লক সভাপতিদের যে ভাবে একসঙ্গে কাজ শুরু করতে বলেছেন তিনি, ১৩১-এর ক্ষেত্রে সে ভাবেই রত্নাকে সঙ্গে নিয়ে কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন ব্লক সভাপতি খোকন গায়েনকে। ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডে যতগুলি বুথ রয়েছে, সেগুলির ভোটার তালিকা সংক্রান্ত কাজ রত্না চট্টোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে করবেন খোকন— পার্থ এই নির্দেশই দিয়েছেন এ দিন। খবর তৃণমূল সূত্রের।

শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে রত্না চট্টোপাধ্যায়ের এখন বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে। দীর্ঘ দিন তাঁরা একসঙ্গে থাকেন না। শোভন এবং রত্না পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে তোপও দেগেছেন একাধিক বার। শুধু শোভন নন, তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও একাধিক বার তোপ দেগেছেন রত্নার বিরুদ্ধে। রত্না এবং তাঁর পরিবারের দিক থেকে পাল্টা আক্রমণ ফিরেছে বৈশাখীর দিকেও। তিক্ততা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সম্পর্কের বরফ গলার পথে অন্যতম প্রধান কাঁটা হয়ে উঠেছেন রত্না।

আরও পড়ুন: সিএএ-তে স্থগিতাদেশ দিল না সুপ্রিম কোর্ট, গঠিত হবে সাংবিধানিক বেঞ্চ​

বুধবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বৈঠক কিন্তু বুঝিয়ে দিল, শোভনকে ফেরানোর জন্য রত্নাকে বিসর্জন দিতে তৃণমূল রাজি নয়। শোভন পছন্দ করছেন না জেনেও শোভনের ওয়ার্ডে গত এক বছর ধরে রত্নার গুরুত্ব ক্রমশ বাড়িয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও একাধিক বার বার্তা দিয়েছেন যে, রত্না চট্টোপাধ্যায়কে মেনে নিয়েই তৃণমূলে ফিরতে হবে শোভনকে।

এত কিছুর পরেও মঙ্গলবার ফের পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয় বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সে বৈঠক সেরে বেরিয়ে বৈশাখী ফের জানান যে, রত্না চট্টোপাধ্যায়কে মেনে নিয়ে তৃণমূলে ফেরা যে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পক্ষে সম্ভব নয়, তা তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বকেও শোভন জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তার পরে ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই রত্নার বিষয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের অবস্থান আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল। শোভন তৃণমূলে ফিরতে পারেন বলে যতই জল্পনা চলুক, ‘শোভন নেই’ ধরে নিয়েই যে ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোট প্রস্তুতি চলবে, তা পার্থ স্পষ্ট করে দিয়েছেন এ দিন। প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা না হলেও, রত্নাকে সামনে রেখেই যে প্রস্তুতি শুরু করতে হবে বুথে বুথে, ব্লক তৃণমূল সভাপতিকেও পার্থ সে বার্তা এ দিন দিয়ে দিয়েছেন।

রত্না চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এ বিষয়ে বিশদে মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেছেন, ‘‘১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হিসেবে কারও নাম তো ঘোষণা করা হয়নি। পার্থ চট্টোপাধ্যায় শুধু সবাইকে কাজ করতে বলেছেন। আর জানিয়েছেন যে, কোথায় কে প্রার্থী হবেন, তা দলই স্থির করবে। তাই এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement