গোলপার্কের বাড়ি নিয়ে টানাপড়েনে শোভন। —ফাইল চিত্র।
বেহালার বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন ঢের আগেই। বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে রয়েছেন গোলপার্কের ফ্ল্যাটে। সেই বাড়ি নিয়েই নতুন করে জটিলতা তৈরি হল শোভন চট্টোপাধ্যায়ের জীবনে। তাঁকে ওই ফ্ল্যাট ছেড়ে দিতে হবে বলে চিঠি দিলেন শোভনের স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের পরিবার। অন্যথায় আইনি পদক্ষেপ করা হবে বলেও শোভনকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
২০১৭-য় বেহালার বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন শোভন। এসে ওঠেন গোলপার্কের ১৩৫, মেঘনাদ সাহা সরণির একটি বহুতলের ফ্ল্যাটে। সে বছর জুলাই থেকে বান্ধবী বৈশাখীকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে রয়েছেন তিনি। স্ত্রী রত্নার সঙ্গে এখনও আইনি বিচ্ছেদ হয়নি শোভনের। কিন্তু গোলপার্কের যে ফ্ল্যাটে বৈশাখীর সঙ্গে ‘সংসার’ পেতেছেন শোভন, সেই ফ্ল্যাটের মালিক আসলে রত্নার দাদা দেবাশিস দাস। বেশ কয়েক বছর আগে অস্বাভাবিক ভাবে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। শোভন ওই ফ্ল্যাটে থাকা শুরু করার পরেই রত্না দাবি করেছিলেন, ফ্ল্যাটটি আসলে শোভনের শ্যালকের নামে। ফলে শোভনের কোনও আইনি অধিকারই নেই ওই ফ্ল্যাটে থাকার। অর্থাৎ, প্রকারান্তরে বলেছিলেন, শোভন ফ্ল্যাটটি ‘দখল’ করে রেখেছেন। একবার সন্তানদের নিয়ে সেই ফ্ল্যাটের নীচে অবস্থানেও বসেছিলেন রত্না। তবে সেই সময় বিষয়টি আর তার বেশি এগোয়নি।
শোভন-বৈশাখী সম্পর্ক যত গড়িয়েছে, ততই তিক্ত হয়েছে শোভন-রত্না সম্পর্কও। তার সর্বশেষ উদাহরণ দেখা গিয়েছে শোভন নারদ-কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়ার পর। অসুস্থ হয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর শোভন হাসপাতালের সুপারকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, রত্না বা তাঁর পুত্রকে যেন তাঁর আশেপাশে আসতে না-দেওয়া হয়। মনে করা হচ্ছে, এ বার রত্নার পরিবারও নতুন করে ‘প্রত্যাঘাত’ শুরু করেছে। নারদ-কাণ্ডে শোভন গ্রেফতার হন ১৭ তারিখ। ২২ তারিখ তিনি জামিন পেয়ে হাসপাতাল থেকে গোলপার্কের বাড়িতে ফেরেন। ঘটনাপ্রবাহ বলছে, তার আগেই ওই ফ্ল্যাট নিয়ে দু’পক্ষের চাপানউতর শুরু হয়েছিল। গত ১১ শোভনকে ওই ফ্ল্যাট নিয়ে আইনি নোটিস পাঠিয়েছিলেন রত্নার বাবা তথা মহেশতলার তৃণমূল বিধায়ক দুলাল দাস। তাঁর ছোট ছেলে (শোভনের ছোট শ্যালক) শুভাশিসের সংস্থা ‘স্টার মার্ক কনস্ট্রাকশন কনসালট্যান্ট প্রাইভেট লিমিটেড’-এর মাধ্যমে শোভনকে আইনি নোটিস ধরান দুলাল।
তার পাল্টা আবার দুলালকে একটি চিঠি দেন শোভন-বৈশাখী। তাতে তাঁরা পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, ‘রত্না কোন অধিকারে বেহালার বাড়ি আটকে রেখেছেন?’ সাত দিনের মধ্যে দুলালের কাছ থেকে জবাবও চেয়ে পাঠান তাঁরা। জবাব জানিয়ে দুলাল ফের শোভনকে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু তার পর শোভন-বৈশাখীর তরফে আর কিছু জানানো হয়নি বলেই দুলালের দাবি। সে কারণেই সম্প্রতি আবার শোভনকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন দুলাল। সেই চিঠিতে তাঁকে সাত দিনের মধ্যে গোলপার্কের ফ্ল্যাটটি খালি করে দিতে বলা হয়েছে। আনন্দবাজার ডিজিটালের তরফে বুধবার এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে দুলাল বলেন, ‘‘সাত দিনের মধ্যেই চিঠির জবাব দিয়েছিলাম। আমরা এর পর থেকে আইনি পথেই চলব।’’ এ নিয়ে শোভন-বৈশাখীর তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি এখনও পর্যন্ত। তবে এর আগে শোভনও জানিয়েছিলেন, তিনিও আইনি পথেই চলবেন।