জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র।
খাদ্য দফতরের অন্দরমহলই কি রেশন দুর্নীতির আঁতুড়ঘর ছিল? ইডির তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই খাদ্য দফতরের একাংশের জড়িত থাকার সূত্র পাওয়া যাচ্ছে। ইডি সূত্রের দাবি, বছর দশেক ধরে খাদ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশ ও বাকিবুর রহমান-সহ ধৃত মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়ের ঘনিষ্ঠ একাধিক রেশন ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটরের একটি গোষ্ঠী রাজ্য জুড়ে দুর্নীতি চক্র চালিয়েছেন বলে ‘তথ্যপ্রমাণ’ তাদের হাতে এসেছে।
তদন্তকারীদের কথায়, কে নেই এই দুর্নীতিতে? এক জন গাড়িচালক থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ সরকারি অফিসার— উঠে আসছে অনেকেরই নাম। ইডি কর্তাদের সূত্রে দাবি, যে পদ্ধতিতে, যে পরিকল্পনা নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে, সেখানে শুধু যে এক জন মন্ত্রী, তাঁর ঘনিষ্ঠ দু’-এক জন আর মুষ্টিমেয় রেশন ডিলার যুক্ত থাকতে পারেন না, সে কথা প্রথমেই তাঁদের মনে হয়েছিল। ওই সূত্রের অভিযোগ, এখন জানা যাচ্ছে, দুর্নীতিতে যোগ রয়েছে দফতরের বেশ কিছু সরকারি অফিসারেরও। মন্ত্রীর দুই আপ্ত সহায়ক ও একাধিক হিসাবরক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ওই সব অফিসারদের চিহ্নিত করা গিয়েছে বলেও দাবি করছেন তদন্তকারীরা।
তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, ভুয়ো রেশন কার্ড ব্যবহার করে কয়েকশো চালকল ও আটাকলের মাধ্যমে বছরের পর বছর কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ন্যায্য মূল্যের রেশন সামগ্রী খোলা বাজারে বিক্রি করা হয়েছে বলে তাঁদের হাতে তথ্যসূত্র এসেছে। আর সেখানেই মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ অফিসারেরা জড়িত ছিলেন বলে দাবি করছে ইডি। রেশন বণ্টন দুর্নীতির কালো টাকার একটি অংশ তাঁদের পকেটেও গিয়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। ইডি কর্তাদের দাবি অনুযায়ী, ওই সমস্ত বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর সামনে ইতিমধ্যেই তুলে ধরা হয়েছে।
উঠে আসছে আরও রেশন ডিলারের নামও। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, জ্যোতিপ্রিয়ের দুই আপ্ত সহায়ক ও একাধিক হিসাবরক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদের প্রেক্ষিতে আরও দুই রেশন ডিলারের নামও উঠে এসেছে। ইডি সূত্রের অভিযোগ, তাঁদের এক জন উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা, শাসক দলের নেতা এবং রেশন ডিলার। অন্য জন উত্তরবঙ্গের শাসক দলের নেতা এবং রেশন ডিলার। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ওই দু’জনকে থাকতে দেখা গিয়েছে বলে তথ্যপ্রমাণও তাদের হাতে এসেছে। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘বাকিবুর ছিলেন মন্ত্রীর সবচেয়ে কাছের লোক। ঘনিষ্ঠতার নিরিখে ওই দু’জন ছিলেন দুই ও তিন নম্বর জায়গায়।’’
তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, জ্যোতিপ্রিয়ের ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েক জন হিসাবরক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ করে উঠে এসেছে এক গাড়িচালকের কথাও। জানা গিয়েছে, তিনি খাদ্য দফতরে কর্মরত। ইডি সূত্রের দাবি, ওই গাড়িচালককে তলবেরও প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, ওই গাড়িচালকের মাধ্যমে রেশন দুর্নীতির কালো টাকার অংশ ‘প্রভাবশালী’দের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল বলে প্রাথমিক কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে।