রথের এই দৃশ্য এ বছর দেখা যাবে না। ফাইল চিত্র।
রথের যাত্রা বলতে জনতা যা বোঝে, সে পাট নেই অনেক ক্ষেত্রে। লোকারণ্যের প্রশ্ন উঠছে না। ধুমধামের সুযোগও কম। করোনা-পর্বে বদলেছে সব। আজ, মঙ্গলবার রথযাত্রা। কিন্তু হুগলির মাহেশ, গুপ্তিপাড়া, নদিয়ার মায়াপুর থেকে শুরু করে কোচবিহারের মদনমোহন মন্দির— রথের চেহারা পাল্টেছে। তা নিয়ে অনেকের আক্ষেপ রয়েছে। রথের মেলায় পাঁপড়, জিলিপি বেচেন যাঁরা, কপালে ভাঁজ তাঁদেরও।
মাহেশে রথযাত্রার দিন কার্যত অন্তরালেই থাকতে হবে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রাকে। জগন্নাথ মন্দিরের গর্ভগৃহ লাগোয়া ধ্যানঘরে তৈরি হচ্ছে অস্থায়ী মাসির বাড়ি। মন্দিরের প্রধান সেবায়েত সৌমেন অধিকারী জানান, বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ তিন বিগ্রহকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। উল্টোরথের দিন ফেরানো হবে। কোনও ভক্ত যেন মন্দিরে না ঢোকেন, সে জন্য সোমবার প্রচার চালানো হয়।
শ্রী শ্রী বৃন্দাবনচন্দ্র জিউ মঠ ও এস্টেটের প্রশাসক গোবিন্দানন্দ পুরী জানান, গুপ্তিপাড়ায় সকাল সাড়ে ৯টায় ভোগ নিবেদনের পরে, বৃন্দাবনচন্দ্র মন্দির থেকে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার বিগ্রহ লাগোয়া কৃষ্ণচন্দ্র মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হবে। নদিয়ার বিভিন্ন জায়গা থেকে জলপথে বহু মানুষ গুপ্তিপাড়ায় রথ দেখতে আসেন। তাঁরা যাতে আসতে না পারেন, সে জন্য সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টো পর্যন্ত গুপ্তিপাড়া-শান্তিপুর ঘাটে ফেরি চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। নিজস্ব দড়ি টানা রথে নয়, এ বার কোচবিহারের মদনমোহন মন্দির থেকে গাড়ি-রথে চড়ে মাসির বাড়ি যাবেন জগন্নাথ বা ‘বড়বাবা’। রথের আদলে গাড়ি সাজানো হবে। দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের তরফে জানানো হয়েছে, সে রথ কোথাও দাঁড়াবে না। সঙ্গে পুলিশ থাকবে, যাতে ভিড় না হয়, তা দেখতে।
মায়াপুর ইসকনে এ বার মন্দিরের উঁচু পাঁচিল ঘেরা চত্বরের ভিতরেই হবে রথ টানা। ইসকন মায়াপুরের রথযাত্রা কমিটির কো-অর্ডিনেটর অলয়গোবিন্দ দাস বলেন, “মন্দিরের ভিতরে যে সেবায়েত ও পুরোহিতেরা রয়েছেন, কেবল তাঁরাই থাকবেন। যদি আবহাওয়া ভাল থাকে, মন্দিরের মধ্যে কয়েকবার পরিক্রমা করবে রথ।” পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল, বর্ধমানের লক্ষ্মীনারায়ণজিউ মন্দির, আউশগ্রামের দিগ্নগর, কালনার লালজি মন্দির, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের কৃষ্ণগঞ্জ ও মাধবগঞ্জের রথ—পথে নামবে না। পুরুলিয়া শহরে মণি বাইজির রথ, হুড়ার ‘ইসকন’-এর রথযাত্রাও স্থগিত। মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলা রাজবাড়ির রথের রশিতে এ বার টান পড়ছে না। পুজো রাজবাড়ির মন্দিরে।
শ্রীরামপুরের প্রবীণ চিকিৎসক অসিত দত্ত হুগলির আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে চর্চা করেন। তাঁর স্মৃতিচারণ, ‘‘মাহেশের রথ মানে কাতারে কাতারে লোক।’’ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘রাধারাণী’ উপন্যাসে মাহেশের রথযাত্রার সূত্র টেনে রসিকতার সুরে জুড়ছেন, ‘‘এ বার কোনও রাধারাণীর হারানোর ভয় নেই। সে ভিড় হবে না।’’