কোরিওড্রামা ‘ঘুণ’
সম্প্রতি ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘রম্যানি’র ৩৬তম বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামকে স্মরণ করে ‘রম্যানি’র এই ৩৬তম বার্ষিক অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। অতিথির আসনে ছিলেন বহু খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব। ‘রম্যানি’র এই বার্ষিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে তাঁদের সম্মাননাও জানানো হয়।
এ বছর অনুষ্ঠানে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল কোরিওড্রামা ‘ঘুণ’। বর্ণিনী মুখোপাধ্যায়ের লেখা বই ‘হোয়েন অ্য দলিত উইম্যান রাইটস পোয়েমস’ এবং তাঁর গবেষণাপত্র ‘অ্যাসথেটিক্স ইন দলিত উইমেন্স পোয়েট্রি’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘ঘুণ’ কোরিওড্রামাটি মঞ্চস্থ করা হয়েছে। তার স্ক্রিপ্ট, ভাবনা এবং কোরিওগ্রাফির দায়িত্বে ছিলেন শ্রীতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাজরা। সহযোগী নৃত্য পরিচালক ববি ঘোষ ও নয়না দাস। পরিচালনায় মানব রায় ও পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানটির আহ্বায়ক ছিলেন জয়িতা বসু এবং রম্যানি’র প্রেসিডেন্ট দেবাঙ্ক চরণ ল।
‘ঘুণ’ নৃত্যনাট্যের মাধ্যমে দলিত সম্প্রদায়ের দুর্দশাগ্রস্ত জীবনকাহিনি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। জাতের ভেদাভেদে কী ভাবে এই সম্প্রদায়কে প্রতিনিয়ত অবহেলার স্বীকার হতে হয়, উঠে এসেছে তারই কাহিনি। ঘুণ পোকা যে ভাবে ধীরে ধীরে সব কিছুকে নষ্ট করে দেয়, ঠিক সে ভাবেই জাতের বৈষম্য এই দলিত সম্প্রদায়কেও ধূলিসাৎ করে দেয়। এই ভাবনা থেকেই এই কোরিওড্রামার নামকরণ।
উচ্চবর্ণ এবং দলিত মহিলাদের জীবনযাত্রার মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। দলিত নারীরা নানা ভাবে কোণঠাসা হচ্ছে সমাজে, লড়াই করে অর্থ উপার্জন করছে, অথচ ঘরে ফেরার পরে সেই কষ্টার্জিত অর্থই তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এ সবই ধরা রয়েছে কাহিনিতে। নাটকটির শেষে সমাজের প্রতি একটি সুন্দর বার্তা দিতে শ্রীচৈতন্যদেব, সারদা মা, বিবেকানন্দ, বি. আর. অম্বেডকরের উদাহরণ তুলে ধরে দেখানো হয়েছে ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’। উচ্চ-নীচ ভেদাভেদ মানুষেরই তৈরি, তাই মানবিকতার ঊর্ধ্বে কোনও কিছুই নয়।
নব ব্যারাকপুর প্রফুল্লচন্দ্র মহাবিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষিকা বর্ণিনী আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, “একই সমাজে বসবাস করেও শুধুমাত্র জাতের ভেদাভেদের কারণে মানুষ কী ভাবে বৈষ্যমের স্বীকার হন, সেই বিষয়টিকেই তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে এই ‘ঘুণ’ কোরিওড্রামাটির মাধ্যমে। শারীরিক বৈষম্য ছাড়াও জাত, লিঙ্গ এবং অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেও দলিতরা এই সমাজের চোখে অত্যন্ত অবহেলিত। এই নাটকের মাধ্যমে দেবদাসী প্রথাকেও তুলে ধরা হয়েছে। ২০১৬ সালের এক পত্রিকা থেকে জানা গিয়েছে, ভারতে এখনও প্রায় ৮৫ হাজার দেবদাসী রয়েছেন।”
বর্ণিনী আরও বলেছেন, “সবটুকু ইতিহাস আমরা এখনও জানি না। অনেক কিছুই অদেখা থেকে গিয়েছে। তাই এই অবহেলিত দলিত সম্প্রদায়কে নিয়ে সমাজের প্রতি একটা বার্তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে আমাদের এই প্রয়াস। সকলের সহযোগিতা পেলে পরবর্তীতে আরও এই ধরনের অনুষ্ঠান করার চেষ্টা করব।"
অনুষ্ঠানের ডিজিটাল মিডিয়া পার্টনার আনন্দবাজার অনলাইন।