রামপুরহাট-কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত নিয়ে মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
বগটুই-কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত নিয়ে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধীদের কুৎসার জবাব দিয়ে রবিবার তিনি বলেন, ‘‘দাদু-নাতির গন্ডগোল হলেও সিবিআই চাই! মা-মেয়ের গন্ডগোল হলে সিবিআই চাই! আর কত নীচে নামবেন?’’
বগটুই-কাণ্ডের তদন্তভার সিবিআই-এর হাতে যাওয়ার পর তৃণমূলের তরফে পরিষ্কার জানানো হয়েছে, বিজেপি তদন্ত পরিচালিত করলে প্রতিবাদ করা হবে। মমতাও বললেন, রামপুরহাটের ঘটনা নিয়ে নোংরা রাজনীতি করছে বিজেপি। আর তাদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে সিপিএম, কংগ্রেস। বিজেপি-সিবিআই একযোগে কাজ করছে বলেই অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর।
রবিবার শিলিগুড়িতে সরাসরি বিরোধীদের তোপ দাগলেন মমতা। বললেন, ‘‘আমরা সাধ্য মতো চেষ্টা করি। দু’টো ক্লাবে গন্ডগোল হলে আমাকে গালাগালি দেবেন? এলাকায় গন্ডগোল যাতে না হয়, তা দেখতে হবে। মুখে কালি লাগিয়ে সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি মিছিল করবে আর তোফা হয়ে সোফায় বসে থাকবে?’’
বগটুই-কাণ্ডে শুরু থেকে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে আসছে বিজেপি। এ নিয়েও রবিবার কটাক্ষ করেন মমতা। বলেন, ‘‘এখানে কিছু হলেই সিবিআই চাইছে! উত্তরপ্রদেশের উন্নাও, হাথরসে কটা সিবিআই এসেছে? কী বিচার হয়েছে? উন্নাওয়ে একটি মেয়ে সাক্ষী দিয়ে বেরচ্ছিলেন। তাঁকে জীবন্ত জ্বালিয়ে দিয়েছে। তিনিও সংখ্যালঘু ঘরের মেয়ে ছিলেন। দিল্লিতে কত লোক মারা গেল! ক’জন বিচার পেয়েছে? অসমে এনআরসি, এনপিআরের সময় কত লোকের মৃত্যু হয়েছে! ক’জন বিচার পেয়েছে? ত্রিপুরায় আমাদের লোক মিটিং করলেই গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। জেলে ভরে দেওয়া হয়। হাথরস-উন্নাওয়ে আমাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আর এখানে দেখুন, আমি যাতে যেতে না পারি, তাই সকাল-বিকেল সেজেগুজে চলে যাচ্ছে। আর গিয়ে শুধু টিভির সামনে দাঁড়িয়ে পড়ছে। এরা কেউ মানুষের পাশে দাঁড়ায় না। কখনওই বিপদে পাশে পাওয়া যায় না।’’
সিবিআই তদন্তের দাবিতে বিজেপি-র লাগাতার বিক্ষোভের আবহেই শুক্রবারই কলকাতা হাই কোর্ট হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়ে জানিয়েছে, রাজ্যের গঠন করা সিট আর তদন্ত করবে না। আদালতের রায়কে স্বাগত জানালেও হাওড়ার ছাত্রনেতা আনিস খান খুনের পর রামপুরহাটের ঘটনাতেও সিবিআই তদন্ত নিয়ে অনীহা প্রকাশ করেছে রাজ্য সরকার। রবিবারও মমতা বলেন, ‘‘সিবিআই যে সব তদন্তই সমাধান করে ফেলে, এমন তো নয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চুরি যাওয়া নোবেল পদক কি পাওয়া গিয়েছে?’’
রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে বিশেষ নজর দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যারা এ সব কাজ করছে, তাদের আমি নিন্দা করি। আশা করি, কেউ এমন করবেন না। যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম, তখন রোজ রেলের লাইন কেটে রেখে দিত। নয় আরশোলা খুঁজে বার করত। এখন আরশোলা কোথায় গেল? আমি তখন বলেছিলাম, গ্রাম, শহরের ছেলেরা নজর রাখুন। যদি দেখেন রেলের লাইন কাটা, তা হলে আপনাকে রেল থেকে পুরস্কার দেওয়া হবে। না হলে চাকরি দেওয়া হবে। এখনও বলব, কারও কাছে কোনও খবর থাকে, গন্ডগোল-হিংসার আশঙ্কা থাকলে সঙ্গে সঙ্গে লোকাল পুলিশকে জানাবেন। ব্যবস্থা না নিলে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার। সরকারকে সাহায্য করলে পুরস্কার দেওয়া হবে। আগামী দু’মাস টাইম নেব। তার পর কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতি, খুনখারাপি, অত্যাচারের অভিযোগ থাকে, আমি আর একটা সেট আপ তৈরি করব।’’