রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে হলদিয়ায় প্রথম জনসভা করবেন নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র
নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে নরেন্দ্র মোদীর অভিযান শুরু হয়ে যাচ্ছে আগামী রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারি। রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিনি প্রথম জনসভা করবেন হলদিয়ায়। ওই দিন হলদিয়ায় একটি সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের শিল্পনগরীতে বিজেপি-র জনসভাতেও হাজির থাকবেন তিনি। দিল্লিতে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত চলা বঙ্গ বিজেপি-র কোর কমিটির বৈঠক শেষে এমনটাই জানিয়েছেন দলের বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এলেও, দলের তরফে জনসভা হবে। তাঁকে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি।’’ মোদীর তরফেও এ ব্যাপারে সম্মতি মিলেছে বলে দাবি দিলীপের।
৭ ফেব্রুয়ারি মোদীর সফরের আগেই শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি রাজ্যে আসছেন বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা। এক দিনের সফর সেরে দিল্লি গিয়ে তিনি আবার আসবেন ৯ ফেব্রুয়ারি। অমিত শাহ আসবেন ১১ ফেব্রুয়ারি।
এর আগে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছিল, বাংলায় মোদীর ভোট প্রচার শুরু হবে নির্বাচনের ‘আদর্শ আচরণবিধি’ চালু হওয়ার পরে। কিন্তু মঙ্গলবার সরকারি অনুষ্ঠানে এলেও প্রধানমন্ত্রী রাজ্য নেতৃত্বের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে দলীয় জনসভায় যোগ দেওয়ার সম্মতি দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। প্রসঙ্গত পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক ও জাতীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের আমন্ত্রণে রবিবার একগুচ্ছ প্রকল্পের শিলান্যাস এবং উদ্বোধনে হলদিয়া আসার কথা প্রধানমন্ত্রীর। সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এবং তমলুকের তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীকে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সে দিনই হলদিয়ায় মোদী যাতে একটি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেন তার জন্য অনুরোধ করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সেই সুরে সুর মেলান রাজ্যের অন্য নেতারাও। কিন্তু সেটা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। মঙ্গলবার তা চূড়ান্ত হয়েছে। তবে রবিবার কখন মোদীর রাজনৈতিক জনসভা হবে তা এখনও ঠিক হয়নি।
মঙ্গলবার রাতে দিল্লিতে রাজ্য বিজেপি-র কোর কমিটির বৈঠক।
রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব চেয়েছিলেন ব্রিগেড সমাবেশ দিয়েই বাংলায় নির্বাচনী প্রচার শুরু করুন মোদী। কিন্তু তার আগে এখন মাত্র ৪ দিনের মধ্যে সারতে হবে প্রধানমন্ত্রীর জনসভার প্রস্তুতি। সংসদে অধিবেশন চলার কারণে এখন দিল্লিতেই রয়েছেন দিলীপ। রাজ্যের অন্য শীর্ষনেতারাও মঙ্গলবার দিল্লি যান কোর কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে। দিল্লিতে দিলীপের বাড়িতে মঙ্গলবার রাতের বৈঠকে হাজির ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এছাড়াও ছিলেন বাংলার দায়িত্ব প্রাপ্ত ৩ কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, শিব প্রকাশ এবং অরবিন্দ মেনন। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী ও সাংসদ সুভাষ সরকার। সেই বৈঠকেই মোদীর জনসভা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গিয়েছে।
তবে মঙ্গলবারের বৈঠকের প্রধান বিষয় ছিল রাজ্যে 'পরিবর্তন যাত্রা' নামে বিজেপি-র প্রস্তাবিত রথযাত্রার পরিকল্পনা। রাজ্য বিজেপি-র ৫টি সাংগঠনিক জোন থেকে ৫টি রথ বার হওয়ার কথা আগেই ঠিক ছিল। মঙ্গলবার সেগুলির সূচনায় কোন কেন্দ্রীয় নেতা কবে, কোথায় আসবেন তা-ও চূড়ান্ত হয়েছে। ৬ ফেব্রুয়ারি নড্ডা নবদ্বীপে প্রথম রথযাত্রার সূচনা করবেন। এর পরে ৯ ফেব্রুয়ারি ঝাড়গ্রাম ও তারাপীঠ থেকে আরও দু'টি রথযাত্রার সূচনা করবেন তিনি। ১১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গে আসবেন অমিত। তিনি কোচবিহার থেকে উত্তরবঙ্গের ওই কর্মসূচির সূচনা করবেন। কাকদ্বীপ থেকে কলকাতা জোনের যে রথটি বার হবে সেটির সূচনা কবে হবে তা অবশ্য এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এখনও রাজ্য বিজেপি-র এমন পরিকল্পনা রয়েছে যে, প্রায় এক মাসের মধ্যে গোটা রাজ্যে ৫টি রথ ঘোরার পর হবে ব্রিগেড সমাবেশ। সেখানে মোদীর উপস্থিতিও চান রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব।
তবে 'পরিবর্তন যাত্রা' করার জন্য প্রশাসনিক অনুমতি পাওয়া নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে বিজেপি-র মধ্যে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে রথযাত্রার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে পদ্ম শিবির। তবে গত লোকসভা নির্বাচনের আগে রথ বার করার উদ্যোগ নিয়েও পিছু হঠতে বাধ্য হওয়ার অভিজ্ঞতা ভাবাচ্ছে রাজ্য বিজেপিকে। প্রসঙ্গত ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেও রথযাত্রার পরিকল্পনা করেছিল বিজেপি। ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯-এর ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’ নামে রথযাত্রার পরিকল্পনা থাকলেও, তা শেষ মুহূর্তে ভেস্তে যায়। প্রথমত, রথযাত্রায় রাজ্য প্রশাসনের অনুমতি মেলেনি। পরে আদালতের নির্দেশে যাত্রাভঙ্গ হয়। তবে এ বার রথ বার করতে মরিয়া বিজেপি। মঙ্গলবার দিলীপ জানিয়েছেন, রাজ্য প্রশাসন অনুমতি না দিলে আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিয়ে রাখছে বিজেপি।