জঙ্গলমহল হাসছে না কাশছে, সরব সূর্যকান্ত

দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় পরে জঙ্গলমহলে বড় কর্মসূচি করল বামেরা। সোমবার বিকেলে ঝাড়গ্রাম শহরের রবীন্দ্রপার্ক লাগোয়া ছোট মাঠে সারা ভারত কৃষকসভার রাজ্য কমিটির ওই সমাবেশের মূল বক্তা ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৫ ০০:৩৫
Share:

ঝাড়গ্রামে সভায় বক্তব্য রাখছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় পরে জঙ্গলমহলে বড় কর্মসূচি করল বামেরা। সোমবার বিকেলে ঝাড়গ্রাম শহরের রবীন্দ্রপার্ক লাগোয়া ছোট মাঠে সারা ভারত কৃষকসভার রাজ্য কমিটির ওই সমাবেশের মূল বক্তা ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। মাওবাদী ও জঙ্গলমহলের উন্নয়ন প্রসঙ্গে এ দিন সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কড়া ভাষায় আক্রমণের সঙ্গেই পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার আদিবাসী-মূলবাসীদের জীবন-জীবিকার সমস্যা মেটাতে জঙ্গলমহল জুড়ে ‘উলগুলান’ (বিদ্রোহ)-এর ডাকও দেন সূর্যবাবু। জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের অস্তিত্ব নেই, মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবি নিয়েও বিঁধতে ছাড়েননি তিনি।

Advertisement

সিপিএমের কৃষক সংগঠন সারা ভারত কৃষকসভার পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এ দিনের সভায় ভিড় হয়েছিল ভালই। লোক এসেছিলেন জেলার জঙ্গলমহলের নানা প্রান্ত থেকে। পুলিশের হিসেব অনুযায়ী লোক হয়েছিল সাড়ে তিন হাজারের আশেপাশে। সিপিএম নেতাদের দাবি, সংখ্যাটা দ্বিগুন। তবে বামেদের সভায় জমায়েতের বহর যে শাসক দলের কপালে ভাঁজ ফেলেছে, তা স্পষ্ট। জানা গিয়েছে, বিরোধী দলনেতার সভায় কোথা থেকে কত লোকন এসেছিলেন, সেই তথ্য সংগ্রহ করছে ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ। পুলিশেরই এক আধিকারিকের কথায়, “এ দিনের সভায় যে ভাবে দলে দলে লোক বাজনা বাজিয়ে মিছিল করে এসেছে, তা ব্যতিক্রমী ছবি। ফলে, সভায় কারা কোন কোন এলাকা এসেছিলেন, তা জানার জন্য থানা-ভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।” এ ব্যাপারে জেলার পুলিশ কর্তারা কেউ কিছু বলতে চাননি। তবে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গলমহলের জেলায় বাড়তি সতর্ক থাকতেই হয়। বড় সভা-সমাবেশের অছিলায় উটকো লোক ঢুকে পড়ছে কি না দেখতে হয়। এতে অস্বাভাবিক কিছু নেই।

এ দিকে, ভিড়ে ঠাসা মাঠ দেখে আপ্লুত সূর্যবাবু বক্তৃতার শুরুতেই বলেন, “এক বছর পর এই মাঠে সভা করতে এসে বুঝতে পারছি, শাসক দল ও পুলিশ-প্রশাসনের ধমক-চমকে আর কেউ ভয় পাচ্ছেন না। মানুষ জাগছে।” তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের অবশ্য বক্তব্য, দীনেন রায়, ‘‘হাজার তিনেক লোক আশানুরূপ নয়। তা ছাড়া, ওরা অন্য জেলা থেকে লোক এনেছিল।’’ সিপিএম-মাওবাদী আঁতাতের অভিযোগ করে দীনেনবাবু আরও বলেন, ‘‘মাওবাদীরাও সন্ত্রাসবাসী, সিপিএমও তাই। ফলে, ওদের সভায় কারা এসেছিল তা পুলিশের দেখাই উচিত।’’

Advertisement

এ দিনের সভায় সূর্যবাবু অভিযোগ করেন, জঙ্গলমহলে উন্নয়নের নামে চলছে পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি। তৈরি হচ্ছে বড় বড় ভবন। একই রাস্তায় বার বার কাজের বরাত দেওয়া হচ্ছে। রাস্তা চওড়া হচ্ছে আর তৃণমূল আশ্রিত ঠিকাদারদের পকেট ভরছে। ফুলেফেঁপে উঠছেন শাসক দলের স্থানীয় নেতারাও। আর গরিব মানুষ আরও গবির হচ্ছেন। এরপরই তাঁর কটাক্ষ, “এক সময়ের মাওবাদীরা এখন শাসক দলের মুখ। তাই জঙ্গলমহলে এখন খুন হয় না, পুলিশ ক্যাম্পে হামলাও হয় না। কিন্তু জঙ্গলমহল হাসছে কই? মুখ্যমন্ত্রী ঠিক দেখতে পাচ্ছেন না। জঙ্গলমহল কাশছে। সেই কাশির দমকে মুখ্যমন্ত্রী দাঁড়াতে পারবেন না, উড়ে যাবেন। কারণ, বেগড়বাই দেখলে দিদিবাদী-মাওবাদীরা ফের অশান্তি পাকাবে।” এ দিন কিষেনজি ও ছত্রধর প্রসঙ্গেও মুখ্যমন্ত্রীকে এক হাত নিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের বক্তব্য, ‘‘কিষেনজি ওঁকে (মমতাকে) মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চেয়ে প্রাণ খুইয়েছেন। আর ছত্রধর মুখ্যমন্ত্রীর মাথায় ছাতা ধরে যাবজ্জীবন সাজা খাটছেন।’’ সূর্যবাবুর বক্তৃতা চলাকালীন প্রতিটি কথার পরেই করতালির রোল ওঠে।

বস্তুতপক্ষে, গত বছর এপ্রিলে লোকসভার প্রচারে এই মাঠেই সভা করেছিলেন সূর্যবাবু। গত বারের থেকে এদিন জনসমাগম অনেকটাই বেশি বলে ঘনিষ্ঠ মহলে স্বীকার করে নিচ্ছেন সিপিএম নেতারা। সভায় ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায়, জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ডহরেশ্বর সেন, পুলিনবিহারী বাস্কে, কৃষকসভার জেলা সম্পাদক হরেকৃষ্ণ সামন্ত, বাঁকুড়ার রানিবাঁধের বিধায়ক দেবলীনা হেমব্রম, কৃষকসভার রাজ্য নেতা মদন ঘোষ ও অমিয় পাত্র। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ডহরেশ্বর সেন, “কনভেনশনে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বনাঞ্চলের বাসিন্দাদের কর্মসংস্থান, ভূমির অধিকার-সহ বিভিন্ন দাবিতে জঙ্গলমহলের প্রতিটি ব্লকে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।” সভার আগে এদিন সকালে অরণ্যশহরের বলাকা মঞ্চে জঙ্গলমহলের তিন জেলার আদিবাসী-মূলবাসীদের কর্মসংস্থান ও জল-জমি-জঙ্গলের অধিকারের দাবিতে একটি কনভেনশনেও যোগ সূর্যবাবু। তিন জেলার ১২০ জন প্রতিনিধি ওই কনভেনশনে যোগ দেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement