Mamata Banerjee

মমতাই ষড়যন্ত্র করে ফাঁসিয়ে দিলেন: রাকেশ

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:৩৫
Share:

পতন: ভিড়ে ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে গেলেন রাকেশ সিংহ। বুধবার আলিপুর আদালত চত্বরে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

আদালত-চত্বরে বুধবার সকাল থেকেই জোরদার নিরাপত্তা ছিল। বিশাল বাহিনী নিয়ে উপস্থিত ছিলেন পুলিশকর্তারা। যাঁর জন্য এই নিরাপত্তা, মাদক পাচার কাণ্ডে ধৃত সেই বিজেপি নেতা রাকেশ সিংহের অনুগামীরাও ভিড় করেন। দুপুরে পুলিশের গাড়ি থেকে নামার পরে ভিড়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে যান ওই অভিযুক্ত। সেখানেই রাকেশ অভিযোগ করেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর ভাইপো চক্রান্ত করে তাঁকে ফাঁসিয়েছেন।

Advertisement

আলিপুর কোর্টের বিশেষ নার্কোটিক আদালত কক্ষে রাকেশ জানান, পুলিশ তাঁকে ফাঁসানোর চক্রান্ত করছে। পুলিশের এক বড় কর্তা জোর করে জিতেন্দ্র সিংহের (মাদক পাচারের অন্যতম অভিযুক্ত, ইতিমধ্যেই ধৃত) কাছ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে গোপন জবানবন্দি আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন। রাকেশকে ১ মার্চ পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক রানা দাম। রাকেশের বাড়িতে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ধৃত তাঁর দুই ছেলে এ দিন জামিন পেয়েছেন।

রাকেশ মঙ্গলবার রাতে বর্ধমানের গলসিতে ধরা পড়েন। জিতেন্দ্রকেও ওই দিন গ্রেফতার করা হয়। ১ মার্চ পর্যন্ত জিতেন্দ্রকেও পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার মাদক পাচারের অভিযোগে বিজেপি নেত্রী পামেলা গোস্বামী-সহ তিন জন গ্রেফতার হন। পামেলা গত শনিবার আদালতে অভিযোগ করেন, রাকেশ ষড়যন্ত্র করে তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। তার পরেই মামলার সাক্ষী হিসেবে রাকেশকে মঙ্গলবার বিকেল ৪টের মধ্যে লালবাজারে হাজিরার নির্দেশ দেয় পুলিশ। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন রাকেশ। কোর্ট মঙ্গলবার দুপুরেই রাকেশকে পুলিশের সামনে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়।

Advertisement

সরকারি আইনজীবী সুরজকুমার সিংহ এ দিন বলেন, ‘‘ধৃতদের লিখিত বয়ান-সহ নানা তথ্যপ্রমাণ তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। সেই জন্য রাকেশ ও জিতেন্দ্রকে পুলিশি হাজতে নিয়ে জেরা করা দরকার।’’ রাকেশের আইনজীবীরা বলেন, ‘‘আমাদের মক্কেলকে মঙ্গলবার বিকেল ৪টেয় লালবাজারে হাজির হতে বলা হয়েছিল। হাইকোর্ট নির্দেশ জারি করেছিল বেলা আড়াইটেয়। কিন্তু বেলা ১২টার পর থেকেই পুলিশ রাকেশের বাড়ি ঘেরাও করতে শুরু করে।’’ পুলিশের এই ‘অতি সক্রিয়তা’ কেন, সেই প্রশ্ন তোলেন কৌঁসুলিরা।

মঙ্গলবার আলিপুরে অরফ্যানগঞ্জ রোডে রাকেশের বাড়ি তল্লাশি করতে যায় পুলিশ। আদালতের অনুমতিপত্র আছে কি না, জানতে চান রাকেশের দুই ছেলে সাহেব ও শুভম। অভিযোগ, পুলিশকে বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেন তাঁরা। তালা ঝুলিয়ে দেন গেটে। পুলিশ পরে রাকেশের বাড়ি ও অফিসে তল্লাশি চালায়। সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে সাহেব ও শুভমকে গ্রেফতার করা হয়। এ দিন আদালত-চত্বরে সাহেব বলেন, ‘‘পুলিশ ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাদের গ্রেফতার করেছে।’’

সাহেব-শুভমকে এ দিন আলিপুর আদালতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারকের এজলাসে তোলা হয়। সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল বলেন, ‘‘এটি গুরুতর মামলা। ওই দু’জনকে পুলিশি হাজতে রাখা দরকার।’’ সাহেব-শুভমের কৌঁসুলিরা বলেন, ‘‘দু’জনেই ছাত্র। তাঁদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে। মাদক মামলায় এঁরা জড়িত নন।’’ ভারপ্রাপ্ত বিচারক মুস্তাক আলম দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে সাহেব-শুভমের শর্তাধীন জামিন মঞ্জুর করেন। পাঁচ হাজার টাকার বন্ড ছাড়াও জামিনের শর্ত হল, তদন্তকারী অফিসারের সঙ্গে তাঁদের নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে।

রাকেশ প্রসঙ্গে রাজ্যসভার সাংসদ বিজেপি-র রূপা গঙ্গোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “যাকে যা অন্যায় করতে দেখবেন, গ্রেফতার করে ফেলুন। একদম ঠিক করেছেন। যদি প্রমাণ করতে পারেন, একদম ঠিক কাজ হয়েছে।” অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে সিবিআই হানার পাল্টা হিসেবে রাজ্য সরকার রাকেশকে গ্রেফতার করিয়েছে কি না, প্রশ্ন করা হলে রূপা বলেন, “আমি পাল্টা বুঝি না। যে অন্যায় করবে, তাকে জেলে যেতে হবে।” রাকেশকে তিনি চেনেন না বলেও জানান রূপা। অন্য দিকে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ দিনও বলেন, ‘‘রাকেশকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়ে থাকলে প্রতিবাদে দল আন্দোলন করবে। ওঁর ছেলেদের কী দোষ? তাঁদের কেন গ্রেফতার করা হয়েছিল? এটা থেকেই সন্দেহ হয়, এর মধ্যে গোলমাল আছে।’’

এলাকার তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, মাদক পাচারে নাম জড়ানোয় বিজেপি নেতৃত্ব এখন দায় এড়াতে রাকেশকে চেনেন না বলে দাবি করছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement