ডোমজুড়ের বিধায়ক রাজীবকে ধরে রাখতে মরিয়া তৃণমূল। —ফাইল চিত্র।
মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে তৃণমূলের অন্দরের ‘জটিলতা’ কাটল না। সোমবার তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু তাতে ‘রফাসূত্র’ বেরিয়ে আসেনি বলেই সূত্রের খবর। তবে তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্ব হাল ছাড়ছেন না। আগামী সপ্তাহে পার্থ আবার রাজীবের সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন।
শুভেন্দু অধিকারী দল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগদানের পর এখন ডোমজুড়ের বিধায়ক রাজীবকে ধরে রাখতে মরিয়া তৃণমূল। রাজীবের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে রফাসূত্র বার করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের মহাসচিব পার্থকে। ঘটনাচক্রে, যিনি রাজ্য মন্ত্রিসভায় রাজীবের সহকর্মীও বটে। শুভেন্দুর সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন প্রবীণ নেতা সৌগত রায়। তাই এবার দলের মহাসচিবকেই ওই গুরুদায়িত্ব দিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজীবের সঙ্গে আগেই একবার বৈঠক করেছিলেন পার্থ। তাতে কোনও ফল মিলেছিল বলে খবর নেই। সোমবারের বৈঠকও ‘অসম্পূর্ণ’ রয়ে গিয়েছে বলে তৃণমূল শিবিরের খবর।
সোমবার নাকতলার বাসভবনে রাজীবকে নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন পার্থ। ঘন্টা দুয়েক বৈঠক চলে। সূত্রের খবর, দীর্ঘ বৈঠকের পরেও রাজীবের ‘বিদ্রোহী মেজাজ’ আয়ত্তে আনতে পারেননি তৃণমূল মহাসচিব। বৈঠক শেষে রাজীব সংবাদমাধ্যমে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানালেও পার্থ কোনও কথাই বলতে চাননি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠমহলের বক্তব্য, রাজীব আদৌ কোনও ‘রাজনৈতিক বৈঠকে’ আসেননি। তিনি এসেছিলেন একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে পার্থকে আমন্ত্রণ জানাতে। হাওড়া নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি বলেই ওই শিবিরের দাবি। পার্থ শিবিরের আরও দাবি, রাজীব দলে রয়েছেন। দলেই থাকবেন। প্রসঙ্গত, হাওড়া জেলা তৃণমূলের একাংশের কাজকর্ম নিয়ে রাজীব প্রকাশ্যেই তাঁর ‘অসন্তুষ্টি’র কথা জানিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: ভুল করলে সুজাতা, আমি কি পাপী? স্ত্রী-র দলত্যাগে অশ্রুসজল সৌমিত্র
পার্থ কিছু না বলতে চাইলেও রাজীবের বক্তব্য, ‘‘দলীয় নেতৃত্ব বৈঠকে ডেকেছেন। তাই আমি এসেছি। যে কথা হয়েছে, তা দলের কথা। দলের কথা দলেই থাকুক। সংবাদমাধ্যমে বলা উচিত নয়।’’ তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, বৈঠক ‘ইতিবাচক’ হলে উভয় তরফেই তা জানানো হত। প্রসঙ্গত, রাজীবের বিদ্রোহে লাগাম দিতে ১৩ ডিসেম্বর পার্থের নাকতলার বাসভবনেই প্রথম বৈঠকটি হয়েছিল। কিন্তু সে যাত্রাতেও পৃথক ফল হয়নি। সেদিন রাজীব বলেছিলেন, ‘‘আরও আলোচনার অবকাশ রয়েছে।’’ এদিন দ্বিতীয় পর্যায়ে আলোচনা হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি বলেই জানা গিয়েছে। তবে তৃণমূল সূত্রে খবর, আগামী সপ্তাহে আবার বৈঠকে বসতে পারেন রাজীব-পার্থ। তবে সেখানেও রফাসূত্র মিলবে বলে খুব আশাবাদী নয় তৃণমূলের একাংশ। দলের এক প্রথমসারির নেতার কথায়, ‘‘মনে হচ্ছে, রাজীব দল ছাড়ার ব্যাপারে মনস্থির করে নিয়েছে। নইলে একের পর এক বৈঠকেও কেন কোনও সমাধানসূত্র বেরোচ্ছে না!’’ দলের অন্য এক নেতার কথায়, ‘‘সমাধানের আন্তরিক ইচ্ছা থাকলে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে আলোচনায় বসতে হবে। সেটা হচ্ছে কি না, সেটাই আসল।’’
আরও পড়ুন: বুধ, বৃহস্পতিতে ‘শুভেন্দু-গড়ে’ মিছিল ও পাল্টা মহামিছিলের ডাক
গত কয়েক মাস ধরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শুভেন্দুর সঙ্গে রাজীবের হোর্ডিং চোখে পড়েছে। সোমবার সকালেও তেমনই একটি ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় বৈঠক শেষ করে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের মুখে পড়েন রাজীব। শুভেন্দু গত শনিবার বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। অথচ সদ্য দলত্যাগী সতীর্থের সঙ্গে কেন এক হোর্ডিংয়ে তাঁর ছবি দেখা যাচ্ছে? বনমন্ত্রীর জবাব, ‘‘প্রত্যেক মানুষের পৃথক অবস্থান রয়েছে। যেমন শুভেন্দুবাবুর মতামত তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। আমার সঙ্গে দলের যে আলোচনা চলছে, সেই বিষয়টিও আমার ব্যক্তিগত। এর সঙ্গে অন্য কোনও ব্যক্তির অবস্থানের কোনও যোগাযোগ নেই।’’ পাশাপাশিই তাঁর সংযোজন, ‘‘যদি কখনও কিছু বলার থাকে, তা হলে আমি সেই সময় তা বলব।’’