রাজীব কুমার। —ফাইল ছবি।
কোচবিহারের দিনহাটা, তুফানগঞ্জ থেকে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া এবং ইসলামপুর। লোকসভা ভোটের পর থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার একাধিক জায়গায় গোলমাল ও হিংসার ঘটনা সাড়া ফেলেছে রাজ্যে। এই পরিস্থিতিতে উত্তরবঙ্গ সফরে এসেছেন রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি ও অন্যতম শীর্ষ আইপিএস অফিসার রাজীব কুমার। রাজীব কুমারের ‘ঘনিষ্ঠ’ মহলের একাংশের দাবি, এটা ব্যক্তিগত সফর। তবে পুলিশ সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন তিনি। যার ভিত্তিতে রাজ্য সরকারের শীর্ষ স্তরে রিপোর্টও দিতে পারেন।
শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়িতে জমি-কাণ্ডে শাসক দলের নেতারা জড়িয়ে পড়়ার বিষয়টি নিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষোভ জানিয়েছেন সম্প্রতি। তৃণমূলের ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির ব্লক সভাপতি ও সহ-সভাপতিকে তাঁর নির্দেশে গ্রেফতার করে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার আগেও সরকারি জমি দখল, বালি-পাথরের বেআইনি ব্যবসা থেকে কয়লা, গরু পাচারের মতো বহু অভিযোগ সামনে এসেছে। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকাগুলি ‘উদ্বেগের’ কারণ হয়ে উঠছে রাজ্য সরকারের কাছে। বিভিন্ন গোষ্ঠী, সংগঠনের ‘সক্রিয়তা’ নিয়েও সরকার চিন্তিত।
পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, লোকসভা ভোটের পর থেকে কোচবিহারে মহিলার উপরে ‘নির্যাতন’, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের জমিতে চাষ না করার ‘ফতোয়া’ দেওয়ায় নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের নেতাদের। চোপড়ায় তাজিমুল ইসলাম ওরফে জেসিবির সন্ত্রাসের অভিযোগ হইচই ফেলেছে। ইসলামপুরে শনিবার তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনাও টাটকা। একের পরে এক এ ধরনের ঘটনায় বিরোধীরা নিশানা করছে রাজ্যের শাসক দলকে। এই পরিস্থিতিতে রাজীব কুমারের মতো অফিসারের উত্তরবঙ্গে থাকা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছে পুলিশ-প্রশাসনের ওই অংশটি।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত ১২ জুলাই কলকাতা থেকে আসার পরে, রাজীব কুমার আলিপুরদুয়ার সার্কিট হাউসে দু’দিন কাটিয়ে এখন শিলিগুড়ির সুকনা লাগোয়া চা রিসর্টে রয়েছেন। সেখান থেকেই যাবতীয় খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁর এই সফরে কোনও সরকারি বৈঠক রাখা হয়নি।
যদিও রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের অন্যতম এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “রাজ্যের এক জন শীর্ষ আইপিএস এবং একটি দফতরের সচিব হিসাবে রাজীব কুমার রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে যোগাযোগ রেখে চলেন, এটা পুলিশ-প্রশাসন মহলে সবাই জানে।” পুলিশ সূত্রের খবর, আজ, সোমবার তিনি কলকাতায় ফিরতে পারেন অথবা আর একটি দিন শিলিগুড়িতে থাকতে পারেন।
গত মার্চে লোকসভা ভোটের আগে, রাজীব কুমারকে রাজ্য পুলিশের ডিজি পদ থেকে সরিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশন। বর্তমানে তিনি রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের সচিবের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। সব ঠিক থাকলে তাঁর ফের রাজ্য পুলিশের শীর্ষ পদে বসার সম্ভাবনা রয়েছে মনে করেন পুলিশ-প্রশাসনের অনেকে। তার আগে, উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি দেখে কী-কী পদক্ষেপ করা জরুরি, তা নির্ধারণ করতেই রাজীব কুমারকে উত্তরবঙ্গে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ মহলের একাংশের অনুমান