রাজীব কুমার। —ফাইল চিত্র।
সরকারি হিসেব বলছে, বুধবারই তাঁর ছুটির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। রাজ্য পুলিশের ডিজি চিঠি দিয়ে তেমনটাই জানিয়েছিলেন সিবিআইকে। সেই হিসেব মতো বৃহস্পতিবারই কাজে যোগ দেওয়ার কথা রাজ্যের গোয়েন্দা প্রধান অর্থাৎ এডিজি (সিআইডি) রাজীব কুমারের। কিন্তু, এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁকে তাঁর কর্মস্থল ভবানীভবনে দেখা যায়নি। এমনকি, রাজ্যের প্রশাসনিক সদর দফতর নবান্নেও তিনি যাননি বলে জানা গিয়েছে। সিবিআই সূত্রে যদিও জানানো হয়েছে, গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর সিবিআই রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রকে দু’টি চিঠি পাঠায়। একটিতে পর দিন অর্থাৎ ১৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে সিজিও কমপ্লেক্সে রাজীবের হাজিরা দেওয়ার নোটিস ছিল। অন্য চিঠিতে ডিজির কাছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জানতে চান, রাজীব কুমার বর্তমানে কোথায় রয়েছেন? কারণ, সিবিআইকে রাজীব জানিয়েছিলেন, তিনি ছুটিতে আছেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে কোনও ভাবেই যোগাযোগ করতে পারছিল না সিবিআই। নিয়ম অনুযায়ী, কোনও আইপিএস অফিসার ছুটিতে গেলে তিনি কোথায় যাবেন, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর কী হবে, গোটাটাই ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে যাওয়ার কথা। সে নিয়ম মনে করিয়ে ডিজির কাছে সিবিআই রাজীব কুমারের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বরও জানতে চায়।
পর দিন ডিজি ওই চিঠির জবাবে সিবিআইকে জানান, রাজীব কুমার ৯ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত ছুটিতে রয়েছেন। কিন্তু রোজভ্যালি-কাণ্ডে কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীবকে তলবের নোটিস পাঠানোর পর সিবিআই জানতে পারে, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি ছুটি নিয়েছেন। এ কথা ই-মেল মারফত রাজীব কুমারই জানিয়েছেন বলে সিবিআইয়ের একটি সূত্রের দাবি। এই ধোঁয়াশা কাটাতে বুধবার ফের ডিজিকে চিঠি দেওয়া হয়। যদিও তার জবাব এখনও পাওয়া যায়নি বলে সিবিআই সূত্রে খবর।
আরও পড়ুন: নারদ-কাণ্ডে প্রথম গ্রেফতার, আইপিএস অফিসার এসএমএইচ মির্জাকে হেফাজতে নিল সিবিআই
ডিজির পাঠানো জবাব অনুযায়ী, গতকাল অর্থাৎ বুধবারই রাজীবের ছুটি শেষ হয়ে গিয়েছে। অতএব হিসেব মতো তাঁর এ দিনই কাজে দেওয়ার কথা। কিন্তু, এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজীব তাঁর কর্মস্থল ভবানীভবনে যাননি। দুপুর পৌনে তিনটে নাগাদ সিবিআইয়ের চার জনের একটি প্রতিনিধি দল ভবানীভবনে পৌঁছয়। কিছু ক্ষণ পর তাঁরা বেরিয়েও যান।
আরও পড়ুন: হাফিজ সইদকে টাকা তোলার অনুমতি দিতে আবেদন পাকিস্তানের, সায় রাষ্ট্রপুঞ্জের
তবে কি রাজীবের ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে? তা হলে রাজ্যের কাছে লিখিত ভাবে সে বিষয়টাই জানতে চেয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। যদিও নবান্ন সূত্রের খবর, ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন রাজীব। কিন্তু, তা মঞ্জুর হয়েছে কি না, সে প্রশ্নের জবাব মেলেনি। সিবিআই যখন ডিজি-র কাছে জানতে চেয়েছিল, রাজীব কুমার কোথায় রয়েছেন বা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর কী, রাজ্য প্রশাসন তখন জানিয়েছিল, ছুটিতে যাওয়ার পর তাঁর সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ করা যায়নি। এখানেই অনেকগুলো প্রশ্ন উঠছে, রাজীব যদি ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করে থাকেন, সে ক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কী ভাবে যোগাযোগ হল? যোগাযোগ হয়ে থাকলে, তাঁকে কি রাজ্য প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে, সিবিআই অবিলম্বে তাঁকে হাজিরা দিতে বলেছে? রাজ্য প্রশাসন বিষয়টি পরিষ্কার করেনি। যদি রাজ্য প্রশাসন তাঁকে জানিয়ে থাকে তবে এখনও কেন অনুপস্থিত রাজীব? এই জায়গা থেকেই সিবিআইয়ের দাবি জোরালো হচ্ছে যে, তিনি পলাতক। আর এই যুক্তি দিয়েই এ দিন আদালতে রাজীবের আগাম জামিনের তীব্র বিরোধিতা করে সিবিআই।
এ দিন হাইকোর্টে রাজীবের আগাম জামিনের আবেদন সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল। বিচারপতি সহিদুল্লা মুনশি ও বিচারপতি শুভাশিস দাশগুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চে এ দিনও শুনানি শেষ হয়নি। শুক্রবার ফের শুনানি হবে বলে জানা গিয়েছে আদালত সূত্রে।