রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে ওঠা শ্লীলতাহানির অভিযোগ খণ্ডন করল রাজভবন। শনিবার রাজভবনের তরফে একটি তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, অভিযোগকারিণীর অভিযোগের সত্যাসত্য যাচাই করতে রাজভবনের আট জন সাক্ষীর সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টটি তৈরি করেছেন পুদুচেরি জুডিশিয়াল সার্ভিসের নগর এবং দায়রা আদালতের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ডি রামাবাথিরন। তৃণমূল অবশ্য এই রিপোর্টকে ‘আবর্জনা’ বলে কটাক্ষ করে জানিয়েছে, নিজেই তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে নিজেকে ‘ক্লিনচিট’ দিচ্ছেন রাজ্যপাল।
গত ২ মে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে রাজভবনের অস্থায়ী এক মহিলা কর্মী যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন। কিন্তু সাংবিধানিক রক্ষাকবচ থাকায় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগে তদন্ত করা যায় না বলে কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি কলকাতা পুলিশ। খাতায়কলমে অভিযোগ দায়ের না হলেও মহিলার বয়ানের ভিত্তিতে অনুসন্ধান চালিয়ে গিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। হেয়ার স্ট্রিট থানায় যে অভিযোগপত্র জমা পড়েছিল, তাতে অভিযোগকারিণীর তরফে বলা হয়েছিল, গত ২৪ এপ্রিল রাজ্যপাল আলোচনার সময় তাঁর শ্লীলতাহানি করেন। যদিও রাজভবনের তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই দিন রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার পর রাজ্যপালের এডিসি মেজর নিখিল কুমারের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি অভিযোগকারিণী।
অভিযোগকারিণী দাবি করেছিলেন, গত ২৪ এপ্রিলের ঘটনার পর, বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ২ মে আবার তাঁকে ডাকেন রাজ্যপাল। আগের দিনের ঘটনার কথা ভেবে মহিলা রাজভবনে কর্মরত এক সুপারভাইজ়ারকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্যপালের কাছে যান। যদিও ওই সুপারভাইজ়ার মুন্না চৌধুরী অবসরপ্রাপ্ত বিচারককে যে বয়ান দিয়েছেন, তাতে ওই দাবির কোনও সারবত্তা নেই বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, সুপারভাইজার জানিয়েছেন, তিনি এবং অভিযোগকারিণী এডিসির অনুমতি নিয়ে রাজ্যপালের ঘরে গিয়েছিলেন। ঘর থেকে তিনি বেরিয়ে যাওয়ার সময় নাকি অভিযোগকারিণীকেও বেরিয়ে আসার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু অভিযোগকারিণী বসে থাকেন। তাই রাজ্যপালের মনে হয়েছিল, অভিযোগকারিণী আলাদা করে তাঁকে কিছু বলতে চান। সুপারভাইজ়ারের বয়ান অনুযায়ী, এর পর তিনি রাজ্যপালের কাছে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অনুমতি চাইলে, বোস সেই অনুমতি দেন।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২ মে কলকাতায় এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওই দিন তিনি রাজভবনে রাত্রিবাসও করেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা স্পেশ্যাল প্রোটেকশন গ্রুপ (এসপিজি)-এর সদস্যেরা পৌঁছে গিয়েছিলেন রাজভবনে। এই সময়ে রাজ্যপাল কী ভাবে কোনও আপত্তিকর কাজে যুক্ত থাকতে পারেন, সেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে রিপোর্টে। অবসরপ্রাপ্ত বিচারক রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন যে, রাজভবনের মহিলা কর্মীদের সঙ্গে তাঁর কথা বলে মনে হয়নি যে, কেউ অস্বস্তিতে রয়েছেন। পরিশেষে গোটা অভিযোগটাকেই মিথ্যা বলে দাবি করা হয়েছে ওই রিপোর্টে।
রাজভবনের তরফে প্রকাশ্যে আনা এই রিপোর্টকে কটাক্ষ করে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, “রাজ্যপাল তদন্ত রিপোর্টের নামে কিছু আবর্জনা প্রকাশ করেছেন। নিগৃহীতা সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছেন। রাজ্যপাল তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে বলছেন, আমিই আমার বিরুদ্ধে তদন্ত করে আমাকে ক্লিনচিট দিলাম।” একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “তদন্ত করতে পণ্ডিচেরি থেকে বিচারক আনতে হচ্ছে। যদি রাজ্যপাল সত্যিই নিরপরাধ হবেন, তা হলে তো তাঁর বলা উচিত আমি কোনও রক্ষাকবচ না নিয়ে পুলিশের তদন্তের সম্মুখীন হব।”
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রাজভবনের অস্থায়ী মহিলা কর্মী। সেই মামলায় শুক্রবার রাজ্যের উদ্দেশে নোটিস জারি করেছে শীর্ষ আদালত। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারকেও মামলায় যুক্ত করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে মামলাকারীকে।