শিক্ষা দফতর দাবি করে, তাদের সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে উপাচার্যদের। গ্রাফিক— সনৎ সিংহ
বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে সাপ্তাহিক রিপোর্ট জমা দিতে বলেছিলেন রাজ্যপাল তথা রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য। তার পরও সেই রিপোর্ট জমা পড়েনি বলে উপাচার্যদের চিঠি দিল রাজভবন। সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘‘মাননীয় আচার্যের নির্দেশানুসারে সপ্তাহের শেষ দিনেই ওই রিপোর্ট জমা পড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এমন কোনও রিপোর্ট এসে পৌঁছয়নি।’’ এ ব্যাপারে রাজভবনের তরফে ওই চিঠিতে উপাচার্যদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
এপ্রিলেই বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের তরফে একটি চিঠি গিয়েছিল রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের কাছে। যে চিঠি তিনি দিয়েছিলেন রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হিসাবে। ইমেল মারফৎ পাঠানো ওই চিঠিতে ছিল একটি নির্দেশিকা। যাতে বলা হয়েছিল, উপাচার্যদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাপ্তাহিক কাজের রিপোর্ট রাজভবনে আচার্যের কাছে পাঠাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আর্থিক লেনদেন সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়েও রাজ্যপাল বোসের আগাম অনুমোদন নিতে হবে। এমনকি, উপাচার্যদের সরাসরি রাজ্যপালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে তাঁর ইমেল এবং ফোন নম্বরও দেওয়া হয়েছিল সেই চিঠিতে। ওই চিঠি থেকেই ঘটনার সূত্রপাত।
ওই চিঠির আগে পর্যন্ত রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য সরকারের তেমন বৈরিতা দেখা যায়নি। কিন্তু এই চিঠির পর রাজ্য সরকার এবং রাজ ভবনের বিরোধ বাধে। শিক্ষা দফতর দাবি করে, তাঁদের সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে উপাচার্যদের। বিষয়টি আদৌ বৈধ কি না, তা জানতে তারা আইনি পরামর্শ নেবে। অন্য দিকে, রাজভবনও চিঠি এবং নির্দেশিকা নিয়ে অনমনীয় মনোভাব দেখায়। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য-রাজভবন টানাপড়েন চলছিলই। এর মধ্যে আবার উপাচার্যদের কর্তব্যের কথা মনে করিয়ে দিয়ে সোমবার নতুন চিঠি এল রাজভবনের তরফে। আর এ বারও রাজভবনের নির্দেশের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
আগের বারের মতোই রাজ্যপালের ওই নির্দেশের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ব্রাত্য জানিয়েছেন, যা করার তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরামর্শ করেই ঠিক করবেন। সোমবার রাজভবনের তরফে ওই চিঠি প্রকাশ্যে আসার পরই এ ব্যাপারে শিক্ষমন্ত্রীর বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘নতুন করে বলার কিছু নেই। এ তো আগের চিঠিরই পুনরাবৃত্তি। আগেই যা বলার বলেছি। এখনও বলছি, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে, পরামর্শ করেই আমাদের কী করণীয় তা ঠিক করা হবে। যা হচ্ছে তা আইন মোতাবেক হচ্ছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। আদালত এ ব্যাপারে আমাদের জানাবে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।’’